মহান বিজয় দিবস উদ্যাপনে প্রস্তুত দেশ
১৫ ডিসেম্বর ২০১৭ ২০:৪৮
সারাবাংলা ডেস্ক
মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে বর্ণিল আলোকসজ্জায় সাজানো হয়েছে রাজধানী। সন্ধ্যা থেকেই ঢাকার প্রতিটি সড়কের পাশাপাশি সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বিজয়ের উৎসবের আলোয় উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে।
মহান বিজয় দিবসে শহীদদের শ্রদ্ধা জানাতে পুরোপুরি প্রস্তুত সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধ। ধোয়া-মোছা শেষে রং তুলির আঁচড়ে বর্ণিল রূপ নিয়েছে স্থাপনাটি। ইটের দেয়াল থেকে শুরু করে বাগানের ঘাসকেও সাজানো হয়েছে পরিপাটি রূপ দিয়ে। স্মৃতিসৌধে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীসহ সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা নিবেদন নির্বিঘ্ন করতে আইনশৃংখলা বাহিনীও নিয়েছে প্রস্তুতি। মহান বিজয় দিবস পালনে প্রস্তুত পুরো দেশ।
১৩ ডিসেম্বর থেকে শুরু করে ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত স্মৃতিসৌধে দর্শনার্থীদের প্রবেশ বন্ধ রাখা হয়েছে। এখন শুধুই মূল আনুষ্ঠানিকতার অপেক্ষা।
বিজয় দিবসের সকালে শহীদদের রাষ্ট্রীয় সম্মান জানানোর কথা রয়েছে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর। এরপর একে একে জাতীয় সংসদের স্পিকার, বিরোধী দলীয় নেত্রী, মন্ত্রী-সংসদ সদস্য, বিচারক, কুটনৈতিক ব্যক্তিসহ রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠন শ্রদ্ধা জানাবেন শহীদদের প্রতি।
শ্রদ্ধা নিবেদন নির্বিঘ্ন করতে এবার জঙ্গি হামলার আশংকাকেও চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছে স্থানীয় পুলিশ। এ জন্য পুরো জাতীয় স্মৃতিসৌধ ঢাকা থাকবে নিরাপত্তার চাদরে। সিসি টিভি ক্যামেরা দিয়েও সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা হবে। আজ শহীদদের প্রতি রাষ্ট্রীয় সম্মান জানানোর পালা শেষ হলে সর্বসাধারণের জন্য খুলে দেওয়া হবে জাতীয় স্মৃতিসৌধের প্রধান ফটক। এরপর স্মৃতিসৌধের মূল বেদীতে ফুল দিয়ে শহীদদের শ্রদ্ধা জানাবেন সর্বসাধারণ।
ভোরে ৩১ বার তোপধ্বনির মধ্য দিয়ে দিবসের সূচনা হবে। সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে রাষ্ট্রপতি মোঃ আব্দুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তববক অর্পণের মাধ্যমে একাত্তরের শহীদদের শ্রদ্ধা জানাবেন। এরপর মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর নেতৃত্বে বীরশ্রেষ্ঠ পরিবার, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ও বীর মুক্তিযোদ্ধারা ফুল দেবেন।
বাংলাদেশে অবস্থিত বিদেশি কূটনীতিক, বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে মিত্রবাহিনীর সদস্য হিসেবে অংশগ্রহণকারী ভারতীয় সেনাবাহিনীর আমন্ত্রিত সদস্য এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনসহ সর্বস্তরের মানুষ মুক্তিযুদ্ধে শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাবেন। সকাল ১০টায় তেজগাঁও পুরাতন বিমানবন্দরে জাতীয় প্যারেড স্কয়ারে সম্মিলিত বাহিনীর বর্ণাঢ্য কুচকাওয়াজ এবং বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রমভিত্তিক যান্ত্রিক বহর প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হবে। রাষ্ট্রপতি এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে কুচকাওয়াজ পরিদর্শন ও সালাম গ্রহণ করবেন। প্রধানমন্ত্রীও কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন।
মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি, বাংলা একাডেমি, জাতীয় জাদুঘর, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর, বাংলাদেশ শিশু একাডেমীসহ বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক আলোচনা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, শিশুদের চিত্রাঙ্কন, রচনা ও ক্রীড়া প্রতিযোগিতা এবং মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শনের আয়োজন করবে।
এ ছাড়া মহানগর, জেলা ও উপজেলায় বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং শহীদ পরিবারের সদস্যদের সংবর্ধনা দেওয়া হবে। বাংলাদেশ ডাক বিভাগ স্মারক ডাকটিকিট প্রকাশ করবে। ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে দেশের শান্তি ও অগ্রগতি কামনা করে বিশেষ দোয়া ও উপাসনার আয়োজন করা হবে। এদিকে মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে এতিমখানা, বৃদ্ধাশ্রম, হাসপাতাল, জেলখানা, সরকারি শিশুসদনে উন্নতমানের খাবার পরিবেশন করা হবে। দেশের সকল শিশু পার্ক ও জাদুঘরসমূহ বিনা টিকিটে খোলা রাখা হবে।
বিজয় দিবস উদ্যাপন উপলক্ষে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি, জাসদ, সিপিবি, ওয়ার্কার্সপার্টি, গণফোরামসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ঢাকা বিশ্বিবিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোটসহ রাজধানীর বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠন ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে দিবসটি উদ্যাপন করবে।
মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে সারাদেশের সব জেলা ও উপজেলাতেও নেওয়া হয়েছে নানা কর্মসূচি।
সারাবাংলা/এসআই/জেডএফ