Wednesday 11 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

মেলার টিকেটের নামে অবৈধ লটারি, নিঃস্ব হচ্ছে সাধারণ মানুষ

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট
৮ জুন ২০২২ ২২:৫৮

ফাইল ছবি

বগুড়া: মেলার প্রবেশ টিকেটের নামে অভিনব কায়দায় প্রতিদিন অবৈধ লটারি চলছে। মেলার টিকেট বিক্রি হচ্ছে শহর, উপজেলা থেকে গ্রাম পর্যায়ের তিন শতাধিক পয়েন্টে। ভ্রাম্যমাণ টিকেট বিক্রির বাহনগুলো মাইকে প্রচার করে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে গোটা জেলাজুড়ে। অভিযোগ-প্রলোভনের ডালা নিয়ে সাধারণ লোকজনের কাছ থেকে হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে লাখ লাখ টাকা।

কৌশলের আশ্রয় নিয়ে অবৈধ লটারি বৈধতার জন্য টিকেটের গায়ে লেখা থাকছে মেলার প্রবেশ টিকিট। আর লটারি নামে এই প্রবেশ টিকেটের প্রতিদিনের ড্র’র লোভনীয় পুরস্কারের প্রচার ফাঁদে পড়ে নিঃস্ব হচ্ছে সাধারণ নিম্ন আয়ের মানুষ। লটারি আসক্তিতে পড়ছে স্কুলের শিশু শিক্ষার্থীরাও। অবৈধ লটারির এই বাণিজ্যে টিকেটের নেশা ছড়িয়ে পড়েছে সর্বত্র। এর সঙ্গে নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের শঙ্কাও বাড়িয়ে তুলছে। ইতোমধ্যে শহরের কলোনি এলাকায় এই অবৈধ লটারির টিকেট বিক্রির পয়েন্টে আল জামিও বনি নামে এক মেধাবী শিক্ষার্থী খুনের ঘটনাও ঘটেছে।

মোহাম্মাদ আলী হাসপাতালের মাঠে তাঁত বস্ত্র কুটির শিল্প ও পণ্য মেলা শুরু হয় ২৩মে থেকে। বগুড়া জেলা মোটর শ্রমিক ইউনিয়ন, বগুড়া কালেক্টরেট কর্মচারী কল্যাণ সমবায় সমিতি লিমিটেড ও বাংলাদেশ সরকারি কর্মচারী পরিষদ জেলা প্রশাসকের কার্যালয় যৌথভাবে মেলার আয়োজনে রয়েছে। এতে সার্বিক ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে রয়েছে মণিপুরী তাঁতী শিল্প জামদানি বেনারসি কল্যাণ ফাউন্ডেশন। তবে এটি তাঁত বস্ত্র মেলা নাম দেওয়া হলেও প্রথম থেকেই এর মূল বিষয় হয়ে ওঠে প্রবেশ টিকেটের অবৈধ লটারি।

জেলা প্রশাসন জানিয়েছে, এই মেলার প্রবেশ টিকেট বাইরে বিক্রির কথা অনুমোদনে ছিল না। খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, প্রথম দিকে প্রতিদিন ২০/৩০টি ভ্রাম্যমাণ টিকিট বিক্রির পয়েন্টে শহর থেকে গ্রামাঞ্চলে গিয়ে টিকিট বিক্রি করত। এখন তা জ্যামিতিক হারে বাড়ছে। পুরস্কারের প্রলোভন এখন লোকজনের মধ্যে আসক্তি তৈরি করেছে। ভ্রাম্যমাণ পয়েন্টে মাইকে প্রতিদিন একাধিক মোটরসাইকেলসহ নানান পুরস্কারের কথা প্রচার করায় লোকজন হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন টিকেট কেনার জন্য। প্রতি টিকেট ২০ টাকা মুল্য বিক্রি করা হচ্ছে। প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত শহর থেকে গ্রামাঞ্চলে গিয়ে বিক্রি করা হচ্ছে মেলার প্রবেশ টিকেট নামে লটারি। প্রবেশ টিকেট নামে অবৈধ লটারি যারা কিনছেন তারা বেশিরভাগই মেলা প্রাঙ্গনে পর্যন্ত কোনো সময় আসেননি।

বগুড়ার শিবগঞ্জের দাড়িদহ এলাকার দরিদ্র কৃষি শ্রমিক মিঠু হোসেন এবার ধান কেটে বেশ টাকা জমিয়েছিলেন। তবে তার জমানো টাকায় এখন টান ফেলছে অবৈধ লটারির টিকেট। প্রতিদিন তিনি ৫টি করে টিকেট কিনেও এখন পর্যন্ত কোনো পুরস্কার পাননি। বুধবার টিকেট কিনছিলেন শহরের কারামাইকেল রোড থেকে। সেখানে মুহুর্তের মধ্যে একদল শিশু শিক্ষাথীর টিকেট কেনার চাহিদায় হঠাৎ ব্যস্ত হতে হলো বিক্রেতা মাহমুদকে। ছামিউল নামে এক শিশু শিক্ষার্থী জানাল, সে এক দিনে ২০টি টিকেট কিনেও পুরস্কার পায়নি। শিক্ষার্থীরা এখন লটারির টিকেট কেনায় আসক্ত হয়ে বাড়ি থেকে দেওয়া টিফিনের জমানো টাকায় টিকেট কিনছেন।

খান্দার পয়েন্ট থেকে টিকেট কিনতে আসা মালগ্রামের স্কুল ছাত্র সোহান জানাল, সে টিফিনেরর টাকা থেকে জমিয়ে ২ দিনে ৬টি টিকেট কিনেছে। এসব চিত্র সবখানে। এখনেই শেষ নয়। প্রতি রাতে মেলা প্রাঙ্গন থেকে অবৈধ এই লটারির ‘ড্র’ অনুষ্ঠান বিশ্বাস জন্মানোর জন্য সরসরি কেবল টিভিতে প্রচার করা হয়। এক কিশোরকে দিয়ে টিকেট ড্র করা হয়। ড্র অনুষ্ঠানে বিচিত্র ভঙ্গি ও ভাষা ব্যবহার করে চিৎকার দেয়া হয় ‘ওঠাও বাচ্চা’।

অবৈধ লটারি বন্ধে সুশাসনের জন্য নাগরিক(সুজন) বগুড়া জেলা কমিটি জেলা প্রশাসক বরাবর স্মারক লিপি দিয়েছে। সুজন বগুড়া জেলা শাখার হুমায়ুন ইসলাম তুহিন জানান, অবৈধ লটারি বন্ধ না হলে তারা আন্দোলনে নামবেন।

অবৈধ লটারির বিষয়ে বগুড়া জেলা প্রশাসক মো. জিয়াউল হক জানান, মেলার কোনো প্রবেশ টিকেট বাইরে বিক্রি বা লটারির অনুমতি দেওয়া হয়নি। এটি বন্ধে ব্যবস্থার জন্য চিঠি দেওয়া হলে আয়োজকরা আদালতে গিয়েছে। এ বিষয়টি আইনগতভাবে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

পুলিশ সুপার সুদীপ কুমার চক্রবর্ত্তী জানান, লটারির নামে বাইরে প্রবেশ টিকিট বিক্রির বিষয়টি নজরে এসেছে। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে তিনি জানান।

সারাবাংলা/একেএম


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর