‘আমি শেখ মুজিবের মেয়ে, অন্যায়ের কাছে মাথানত করব না’
৯ জুন ২০২২ ০০:৫১
ঢাকা: যত ষড়যন্ত্রই হোক, কোনো অন্যায়ের কাছে কখনো মাথানত করবেন না বলে প্রত্যয় জানিয়েছেন সংসদ নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, ড. ইউনূস (নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ) একটি এমডি পদের লোভে বিশ্বব্যাংককে দিয়ে, হিলারি ক্লিনটনকে দিয়ে পদ্মা সেতুর টাকা বন্ধ করিয়েছিল। তারা ভেবেছিল, আমরা আত্মসমর্পণ (সারেন্ডার) করবে। কিন্তু মনে রাখবেন— আমি শেখ মুজিবের মেয়ে। কখনো অন্যায়ের কাছে মাথা নত করিনি, কখনো করবও না। এই দেশকে আমরা ভালোবাসি। দেশের মানুষকে ভালোবাসি। দেশের মাথা হেট হোক, এরকম কোনো কাজ কোনোদিন করব না।
বুধবার (৮ জুন) জাতীয় সংসদ অধিবেশনের কার্যপ্রণালীবিধির ১৪৭ বিধির আওতায় আনীত প্রস্তাবের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি এসব কথা বলেন। আগামী ২৫ জুন পদ্মা সেতু উদ্বোধন সামনে রেখে পদ্মা সেতু নিয়ে আলোচনার জন্য এই প্রস্তাবটি আনা হয়েছিল সংসদে।
চাপের মুখে মাথানত না করার উদাহরণ উল্লেখ করে সংসদ নেতা শেখ হাসিনা বলেন, ২০০১ সালে আমেরিকার চাপ দিয়েছিল গ্যাস বিক্রি করার। জন্য রাজি হইনি। তারা বলেছিল, গ্যাস বিক্রি না করলে ক্ষমতায় আসতে দেবে না। আমি তাদের কথা রাখিনি। ক্ষমতায়ও আসতে পারিনি। খালেদা জিয়া মুচলেকা দিয়েছিল, সে ক্ষমতায় এসেছিল। ২০০১ সালের নির্বাচনে কী হয়েছে, তা দেশবাসী জানে।
পদ্মা সেতু নিয়েও এরকম চাপ এসেছে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, পদ্মা সেতু নির্মাণের ক্ষেত্রেও আমার ওপর অনেক চাপ এসেছে। বিশ্ব ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট তার শেষ কর্মদিবসে একটা সই করে টাকা বন্ধ করে দিয়ে গেছেন। তারপর চাপ এলো— অমুককে গ্রেফতার করতে হবে, তমুককে গ্রেফতার করতে হবে। তাহলে টাকা দেবে। আমি বলেছি— আমার কোনো অফিসারকে বা আমার কাউকে আমি অপমান করতে দেবো না। সেসময় যোগাযোগ মন্ত্রীকে অপসারণ, মোশাররফকে তো গ্রেফতার করেই দিলো।
পদ্মা সেতু নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ তোলা হলেও আদতে কেউ কোনো দুর্নীতির প্রমাণ দিতে পারেনি বলেও উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। বলেন, আমি জানি— কোনো টাকা ছাড় হয়নি। দুর্নীতিটা কোথায় করা হলো? আমি তাদের কাছে তথ্যপ্রমাণ চেয়েছিলাম। তারা একটা কাগজও দিতে পারেনি। তারপর এলো গ্রেফতারের হুকুম। আমি বললাম, পদ্মা সেতু আমি করব না। যেদিন নিজের টাকায় করতে পারব, সেদিন করব। কিন্তু আমার দেশকে অপমান করে টাকা নিয়ে করতে হবে— সেটা হবে না।
তিনি বলেন, আমাকে ভয় দেখায়— যদি এটা না হয়, আপনার নির্বাচনের কী হবে? জনগণ ভোট দেবে না, ক্ষমতায় আসব না। মানসিক চাপ তৈরি করে আমার পরিবারের ওপর। আমার মেয়ে, আমার ছেলে, আমার বোন— তাদের ওপর মানসিক চাপ তৈরি করে। জয়কেও (প্রধানমন্ত্রীর ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়) তারা চাপ দিয়েছে আমাকে বলার জন্য। কাকে না তারা চাপ দিয়েছে! কিন্তু চাপের কাছে মাথানত করিনি। কারণ সততাই আমার শক্তি, আর শক্তি আমার বাংলাদেশের জনগণ।
শেখ হাসিনা বলেন, ক্ষমতা আমার কাছে বড় কিছু না। ক্ষমতা আমার কাছে মানুষের জন্য কাজ করার সুযোগ। সেটাই করে যাচ্ছি। এই দেশের মানুষ যেন গরিব না থাকে, দরিদ্র না থাকে সেই লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছি। এই দেশে কোনো মানুষ ভূমিহীন ও গৃহহীন থাকবে না। আর এই যে কাজ করছি দেশের জন্য, দেশবাসীর সমর্থনই এর পেছনে আমার সবচেয়ে বড় শক্তি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের জনগণকে অপমান করে আমি কিছু করব— এটা হয় না। আমি সিদ্ধান্ত নিলাম, নিজস্ব অর্থায়নে সেতু নির্মাণ করব। এরপর সেতু নির্মণের কাজ শুরু করে দিলাম। তখন সবার টনক নড়ল। তখন বাংলাদেশকে সবাই সমীহ করতে শুরু করল— হ্যাঁ, বাংলাদেশ পারে। জাতির পিতা বলেছিলেন, কেউ আমাদের দাবায়া রাখতে পারবে না। তো কেউ আমাদের দাবায়া রাখতে পারে নাই, পারবেও না ইনশাল্লাহ। এই দেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে।
সারাবিশ্বে অর্থনৈতিক মন্দার কারণে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, এরকম পরিস্থিতিতে আগামীকাল (বৃহস্পতিবার) বাজেট দিচ্ছি। বাজেটও ঠিকমতো দেবো। তবে সবাইকে কৃচ্ছ্রতাসাধন করতে বলব। এক ইঞ্চি জমি যেন না পড়ে না থাকে। খাবারের ব্যবস্থা নিজেদেরই করতে হেবে। আমেরিকা-ইউরোপে সবখানে মন্দা। তাই সবাইকে মিতব্যায়ী ও সাশ্রয়ী হতে হবে।
ফাইল ছবি
সারাবাংলা/এএইচএইচ/টিআর
পদ্মা সেতু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংসদ অধিবেশন সংসদ নেতা শেখ হাসিনা সাধারণ আলোচনা