ইউক্রেন থেকে কি শস্য রফতানি করছে রাশিয়া?
৯ জুন ২০২২ ১১:২২
রাশিয়া ইউক্রেন থেকে খাদ্য শস্য বিদেশে পাঠাচ্ছে বলে জানিয়েছেন দখলকৃত দক্ষিণ ইউক্রেনে নিযুক্ত রুশ কর্মকর্তারা। এদিকে রাশিয়া ছয় লাখ মেট্রিক টন শস্য চুরি করে রফতানি করেছে বলে অভিযোগ করেছেন ইউক্রেনের কর্মকর্তারা। খবর বিবিসি।
তবে শস্য চুরি করার কথা অস্বীকার করেছে রাশিয়া। আর ইউক্রেনের কর্মকর্তাদের এ দাবির সত্যতা যাচাই করা সম্ভব হয়নি বলেও জানিয়েছে বিবিসি।
ইউক্রেনের মজুদ করা শস্য রফতানি করা আন্তর্জাতিকভাবে জরুরি হয়ে পড়েছে। কিন্তু রাশিয়ার নৌবাহিনী ইউক্রেনের কৃষ্ণ সাগরের বন্দর অবরোধ করে রাখার কারণে তা এখনই রফতানি করা যাচ্ছে না। দেশটি থেকে আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্যে প্রতিবছর মিলিয়ন টন শস্য রফতানি করা হয়।
তবে রাশিয়া জানিয়েছে, ইউক্রেনকে শস্য রফতানির জন্য করিডোর তৈরির করতে কৃষ্ণ সাগরের উপকূলের পানিতে রাখা মাইন অপসারণ করতে হবে।
এদিকে নিউ ইয়র্ক টাইমস’র কাছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র জানিয়েছে, ইউক্রেন থেকে চুরি করা গম আফ্রিকার খরাপীড়িত দেশগুলোতে বিক্রি করার চেষ্টা করছে রাশিয়া।
গত মে’র মাঝামাঝিতে যুক্তরাষ্ট্রে ১৪টি দেশের কাছে এ বিষয়ে সতর্কবার্তা পাঠিয়েছিল। যার মধ্যে বেশিরভাগই আফ্রিকার দেশ। স্টেট ডিপার্টমেন্টের বরাত দিয়ে সংবাদমাধ্যমটি জানিয়েছে, রাশিয়ার পণ্যবাহী জাহাজগুলো শস্য বোঝাই করে ইউক্রেনের কাছাকাছি বন্দর ছেড়ে যায়।
দেশটির জাপোরিঝিয়া অঞ্চলের রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণাধীন এলাকার দায়িত্বে থাকা রুশ কর্মকর্তা ইয়েভজেনি বালিটস্কি বলেন, ক্রিমিয়ার উদ্দেশে শস্য বোঝাই করা মালবাহী ট্রেন এই অঞ্চল ছেড়ে গেছে। আর সেখান থেকে মধ্যপ্রাচ্যে যাবে। ২০১৪ সালে এলাকাটি নিজ ভূখন্ডের সঙ্গে যুক্ত করে রাশিয়া।
তিনি বিস্তারিত ব্যাখ্যা না দিয়ে রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় টিভিকে বলেন, ‘তুরস্কের সঙ্গে মূল চুক্তি শেষ হচ্ছে।’
দখলকৃত ক্রিমিয়ার রুশ কর্তৃপক্ষের মুখপাত্র ওলেগ ক্রুচকভ বলেন, জাপোরিঝিয়ার মেলিটোপোল শহর থেকে ১১টি শস্য ভর্তি ওয়াগন ক্রিমিয়ায় এসেছে।
রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা আরআইএ’কে তিনি আরও জানান, দখলকৃত খেরসন অঞ্চল থেকে শস্য পরিবহন করা হচ্ছে।
এদিকে গতকাল বুধবার তুর্কিয়ের (তুরস্ক) রাজধানী আঙ্কারায় দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেভলুত কাভুসোগ্লুর সঙ্গে বৈঠক করেন রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ। সেখানে শস্য রফতানির সমস্যা নিয়ে আলোচনা করেন তারা। কিন্তু এক্ষেত্রে কোনো অগ্রগতি হয়নি। মূলত নিরাপদ সামুদ্রিক করিডোর তৈরির জন্য একটি চুক্তি করার চেষ্টা করছে তুর্কিয়ে সরকার।
তবে ইউক্রেনকে শস্য রফতানিতে বাধা দেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে সের্গেই ল্যাভরভ বলেন, ওডেসা ও অন্যান্য বন্দরগুলোর পানি থেকে মাইন অপসারণ করার দায়িত্ব ইউক্রেনের।
এ বিষয়ে ইউক্রেনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র বলেন, ‘দক্ষিণ ইউক্রেনে আক্রমণ করার জন্য ওই শস্য করিডোর ব্যবহার করতে পারে’ রাশিয়া। তাই ইউক্রেন উপকূলের পানি থেকে মাইন অপসারণ করা হয়নি।
বিশ্বে চলমান খাদ্য সংকটের জন্য পশ্চিমা দেশগুলোর নিষেধাজ্ঞাকে দায়ী করেছে রাশিয়া। তবে পশ্চিমা দেশগুলো বলেছে, রাশিয়া খাদ্য সরবরাহকে ‘অস্ত্র হিসেবে’ ব্যবহার করেছে।
এর আগে, গত সপ্তাহে তুর্কিয়েতে নিযুক্ত ইউক্রেনের রাষ্ট্রদূত ভ্যাসিল বোডনার বলেছিলেন,ক্রিমিয়া থেকে চুরি করা শস্য পাঠাচ্ছে রাশিয়া। এর গন্তব্যগুলোর মধ্যে তুর্কিয়েও ছিল।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে তিনি বলেন, ‘আমাদের সাহায্য করার জন্য তুর্কিয়ের কাছে আবেদন জানিয়েছি। আর তুর্কিয়ে সরকারের পরামর্শে, যারা শস্য চুরি করেছে এবং বিক্রি করেছে- তাদের বিরুদ্ধে মামলা করছি।’
সারাবাংলা/এনএস