‘বাজেট গরিববান্ধব, ব্যবসাবান্ধব ও গণমুখী’
৯ জুন ২০২২ ১৮:৫৩
ঢাকা: ২০২২-২০২৩ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটকে নিম্ন আয়ের মানুষকে সুরক্ষা দেয়ার অঙ্গীকার রয়েছে। কাজেই এই বাজেট গরিববান্ধব, ব্যবসাবান্ধব ও গণমুখী বাজেট বলে দাবি করেছেন সরকারি দলের নেতারা।
বৃহস্পতিবার (৯ জুন) জাতীয় সংসদ ভবনের বাইরে ২০২২-২০২৩ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট অধিবেশন শেষে সাংবাদিকদের কাছে সংসদের সরকারি দল আওয়ামী লীগের নেতারা এমন প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। জাতীয় সংসদে ২০২২-২৩ অর্থবছরের এই বাজেট প্রস্তাব উপস্থাপন করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।
স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে জাতীয় সংসদে ২০২২-২৩ অর্থবছরের এই বাজেট প্রস্তাব উপস্থাপন করেন অর্থমন্ত্রী। তার আগে মন্ত্রিসভার অনুমোদনের পর ওই প্রস্তাবে সই করেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ।
মহামারির সংকট পেরিয়ে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের বাস্তবতাকে মাথায় নিয়ে উন্নয়নের হারানো গতিতে ফেরার চ্যালেঞ্জ নিয়ে নতুন অর্থবছরের জন্য ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকার বাজেট জাতীয় সংসদের সামনে উপস্থাপন করেন অর্থমন্ত্রী।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘কোভিড পরবর্তী সময়ে সংকট থেকে বেরিয়ে এসে অর্থনৈতিক এলাকায় প্রত্যাবর্তন। আরেকটা দিক এই বাজেটে হচ্ছে কোভিড সংকট পরবর্তী ঘুরে দাঁড়ানোর বাজেট। এই বাজেটে স্ট্যাবিলিটির নিশ্চয়তা আছে। বাজেটের আকার আগের চেয়েও সাত হাজার কোটি টাকা বেড়েছে। এই বাজেটে সবদিক বিচার-বিশ্লেষণ করে নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্তদের ব্যাপারে নজর দেওয়া হয়েছে। কাজেই এটা গরিবের বাজেট, ব্যবসা-বান্ধব বাজেট, গণমুখী বাজেট।’
তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ ড. সম্পাদক হাছান মাহমুদ বলেন, ‘বাজেটে মধ্যবিত্ত নিম্নবিত্তদের সুরক্ষা দেওয়ার জন্যই এই বাজেট। এই বাজেটে আভ্যন্তরীণ উৎপাদনকে উৎসাহিত করা হয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে কৃষি উৎপাদন থেকে অভ্যন্তরীণ উৎপাদন। কারণ, পৃথিবীতে প্রথমত করোনা আর দ্বিতীয়ত রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্বব্যাপী দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে। এই যুদ্ধ কতদিন চলবে এবং যুদ্ধের পরিপ্রেক্ষিতে যে অর্থনৈতিক মন্দা সেটা কতদিন পর্যন্ত প্রলম্বিত হবে সেটা আমরা জানি না। সেজন্য অভ্যন্তরীণ উৎপাদনের উপর জোর দেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে সেফটি নেট বাড়ানো হয়েছে। যাতে নিম্ন আয়ের মানুষ সুরক্ষা পায়। এটি গরিববান্ধব বাজেট।’
তিনি বলেন, ‘প্রতিবার বাজেট পেশ করার পর বিএনপিসহ কিছু রাজনৈতিক দল, কিছু সংস্থা, কিছু বুদ্ধিজীবী নেতিবাচক কথা বলেন বরাবরের মতো। তারা আজকেও হয়তো বলবেন, কালকেও বলবেন। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, গত সাড়ে ১৫ বছরের সমস্ত প্রতিকূলতা সত্ত্বেও বাংলাদেশ এগিয়ে গেছে। এই বাজেটের মাধ্যমেও অর্থনীতিকে সুসংহত করে উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাবে দেশ।’
বাজেটকে কীভাবে দেখছে আওয়ামী লীগ? জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কৃষিবিদ আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম গণমাধ্যমকে বলেন, ‘করোনাভাইরাস অভিঘাত থেকে মুক্ত হয়ে উন্নয়নের ধারা অক্ষুন্ন রাখা ও উত্তরোত্তর বৃদ্ধির জন্য কৃষি, খাদ্য, নতুন কর্মসংস্থান সৃজন, প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে সামাজিক নিরাপত্তার আওতায় আনা, রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সৃষ্ট সংকট মোকাবিলা করে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ এবং ভর্তুকির চাপ সামাল দেওয়াসহ শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে এই বাজেটে। এই বাজেটে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর দিকে বিশেষ লক্ষ্য রাখা হয়েছে। জনবান্ধব ও উন্নয়ন বান্ধব এই বাজেটকে আমরা স্বাগত জানাই।’
তিনি বলেন, ‘কোভিড পরবর্তী পরিস্থিতিতে কর্মসংস্থানের প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। নিম্নআয়ের মানুষ যাতে উপকৃত হয় সেদিকে খেয়াল রাখা হয়েছে। সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী বাড়ানো হয়েছে। করপোরেট কর কমানো হয়েছে, যাতে দেশীয় শিল্প বিকশিত হতে পারে, নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হতে পারে। বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সমস্যার দিকে খেয়াল রেখে বিদেশ নির্ভরতা কমানোর চেষ্টা করা হয়েছে। বিলাসবহুল পণ্যে করের হার বাড়ানো হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম যাতে বৃদ্ধি না পায় সেদিকে খেয়াল রাখা হয়েছে। শিক্ষা খাত বিশেষ করে মানবসম্পদ উন্নয়নে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ৭ দশমিক ৫ শতাংশ ধরা হয়েছে। মূল্যস্ফীতি ৫ দশমিক ৬ শতাংশ হবে বলে প্রক্ষেপণ করা হয়েছে। বৈশ্বিক পরিস্থিতির সঙ্গে খেয়াল রেখেই এই বাজেট খেটে খাওয়া মানুষের বাজেট, ব্যবসাবান্ধব ও গণমুখী বাজেট।’
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বাজেট প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন ‘ভবিষ্যতে আরও লুট করবে, তার একটা হিসাব হচ্ছে এই বাজেট। এ জন্য আমার আগ্রহ নেই। এতটুকু গুরুত্ব নেই আমার কাছে।’ এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, ‘বিএনপি ও মির্জা ফখরুলের রাজনীতি লুটপাটের রাজনীতি, দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়নের রাজনীতি। তারা কখনোই সাধারণ মানুষের কথা ভাবেনি, এখনো ভাবে না। জনমানুষের উন্নয়নের এই বাজেট তাই তাদের ভালো লাগছে না।’
এদিকে, বৃহস্পতিবার বিকেলে প্রস্তাবিত বাজেটকে স্বাগত জানিয়ে বঙ্গবন্ধু এভিনিউ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগসহ সহযোগী সংগঠনের পক্ষ থেকে আনন্দ মিছিল করা হয়েছে।
সারাবাংলা/এনআর/পিটিএম