মূল্যস্ফীতির লক্ষ্য উচ্চাভিলাষী: সানেম
৯ জুন ২০২২ ২১:২৫
ঢাক: প্রস্তাবিত বাজেটে মূল্যস্ফীতির লক্ষ্য ৫ দশমিক ৬ শতাংশ ধরে রাখাকে উচ্চাভিলাষী বলে মন্তব্য করেছে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং (সানেম)। বৃহস্পতিবার (৯ জুন) জাতীয় সংসদে প্রস্তাবিত বাজেট বিষয়ে গবেষণা প্রতিষ্ঠানটি এ প্রতিক্রিয়া দেয়।
বাজেটে মূল্যস্ফীতি মোকাবেলায় বিবৃত পদক্ষেপগুলোর অধিকাংশই বাস্তবে প্রশ্নসাপেক্ষ অবস্থায় রয়েছে বলে দাবি করে সানেম। গণমাধ্যমে পাঠানো বাজেট প্রতিক্রিয়ায় সানেম জানায়, টিসিবির মাধ্যমে বা সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির মাধ্যমে স্বল্প আয়ের মানুষের কাছে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য পৌঁছানোর যে উদ্যোগ, তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল বলেই মনে হয়েছে। এই উদ্যোগগুলো বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে যে চ্যালেঞ্জগুলো বিদ্যমান, তার আলোচনার অভাব রয়েছে বাজেট ডকুমেন্টে। একদিকে, চাহিদার প্রবৃদ্ধি কমানোর পদক্ষেপ সংক্রান্ত বক্তব্য স্পষ্ট নয়, কারণ, প্রথমত, বর্তমান মূল্যস্ফীতি সংক্রান্ত সংকটের কারণ চাহিদা বৃদ্ধিজনিত নয় বরং যোগানের সরবরাহের সংকট; দ্বিতীয়ত, এ ধরনের পদক্ষেপ অর্থনীতিকে সংকুচিত করবে, যা অতিমারি থেকে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের পথে বাধার সৃষ্টি করবে। আগামী বাজেটে গড় মূল্যস্ফীতি ৫.৬ শতাংশ রাখার কথা বলা হয়েছে, বর্তমান প্রেক্ষাপটে যা উচ্চাভিলাষী বলে মনে হয়েছে।’
সানেম বলছে, অতিমারি থেকে পুনরুদ্ধারের যে দাবি বাজেটে করা হয়েছে তা প্রশ্নসাপেক্ষ। বিশেষত, সামাজিক পুনরুদ্ধারের গতি দুর্বল, যা বাজেটে প্রতিফলিত হয়নি। এমনকি দারিদ্র্য হারেরও হালনাগাদকৃত তথ্যের অভাব রয়েছে বাজেটে। পাশাপাশি, বর্তমান প্রেক্ষাপট অতিমারি থেকে পুনরুদ্ধারকে কিভাবে প্রভাবিত করছে সেই সংক্রান্ত আলোচনার অভাব বাজেটে লক্ষণীয়। বাজেটে উল্লেখিত ছয়টি অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত বিষয়ের তালিকায় দারিদ্র্য এবং কর্মসংস্থান সংক্রান্ত আলোচনার অভাব পরিলক্ষিত হয়েছে।
গবেষণা প্রতিষ্ঠানটি জানায়, বাজেট ঘোষণায় জাতীয় সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির একশন প্ল্যান ২০১৫ বাস্তবায়ন করার বলা হলেও এখনো এ কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য একটি সম্পূর্ণ তথ্যভাণ্ডার তৈরি করা সম্ভব হয়নি। এই অবস্থায় সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির ক্ষেত্রে যে অসামঞ্জস্যতা রয়েছে, প্রকৃত গ্রহীতা নির্বাচনের ক্ষেত্রে যে দুর্বলতা রয়েছে, তা কিভাবে দূর করা হবে বাজেট ঘোষণায় তা অনুপস্থিত ছিল। সংগঠনটি বলছে, প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারের কথা বলা হলেও গতানুগতিকতার বাইরে বড় ধরণের কোন সংস্কারের কথা বাজেট ঘোষণায় পরিলক্ষিত হয়নি। আর্থিক খাতে সুশাসন প্রতিষ্ঠার বিষয়ে যে সংস্কারগুলির প্রয়োজন ছিল, তাও প্রস্তাবিত বাজেটে পাওয়া যায়নি।
সানেম জানায়, সুদের হার যৌক্তিকীকরণের কথা বলা হলেও ব্যাংক খাতে সুদের হারের নয়—ছয় শতাংশের যে নির্ধারিত সীমা রয়েছে, তার ফলে মূল্যস্ফীতি ছয় শতাংশের বেশি হলে আমানতের প্রকৃত সুদের হার যে ঋণাত্মক হতে পারে সে বিষয়ে বাজেটে কোনো দিকনির্দেশনা চোখে পড়েনি।
বৃহস্পতিবার (৯ জুন) জাতীয় সংসদে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বাজেট উপস্থাপন করেন। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে বাজেট অধিবেশন চলে।
নতুন বাজেটের আকার ধরা হয়েছে ছয় লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকা। এর আগে, ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটের আকার ছিল ছয় লাখ তিন হাজার ৬৮১ কোটি টাকা। সংশোধিত বাজেটে তা ১০ হাজার ১৮১ কোটি টাকা কমে পাঁচ লাখ ৯৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকায় নেমে আসে। সে হিসাবে নতুন বাজেটের আকার সবশেষ বাজেটের তুলনায় ৭৪ হাজার ৩৮৩ কোটি টাকা বা ১২ দশমিক ৩২ শতাংশ বেশি। আর সংশোধিত বাজেটের চেয়ে এটি ৮৪ হাজার ৫৬৪ কোটি বা ১৪ দশমিক ২৪ শতাংশ বেশি।
আগামী অর্থবছরের জন্য বাজেটে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আকার ধরা হয়েছে দুই লাখ ৪৬ হাজার ৬৬ কোটি টাকা। অন্যদিকে জিডিপি’র আকার প্রাক্কলন করা হয়েছে ৪৪ লাখ ৪৯ হাজার ৯৫৯ কোটি টাকা। জিডিপি প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ। অন্যদিকে আগামী অর্থবছরের বাজেটে মূল্যস্ফীতি ৫ দশমিক ৬ শতাংশ হবে বলে প্রক্ষেপণ করা হয়েছে।
সারাবাংলা/ইএইচটি/আইই
২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেট ৫২তম বাজেট অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল অর্থমন্ত্রীর চতুর্থ বাজেট বাজেট ২০২২-২৩