Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

প্রস্তাবিত বাজেট বাস্তবতা বর্জিত: বিএনপি

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
১১ জুন ২০২২ ১৭:০৭

ঢাকা: ২০২২-২০২৩ অর্থ বছরের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটকে ‘বাস্তবতা বর্জিত’ বলে আখ্যায়িত করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

শনিবার (১১ জুন) বিকেলে গুলশানে দলটির চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে দলের পক্ষে আনুষ্ঠানিক বাজেট প্রতিক্রিয়া দেন তিনি।

এ সময় তিনি বলেন, ‘এ বাজেট জনগণের জন্য নয়। এ বাজেট ডলার পাচারকারী ও অর্থ লুটেরাদের বাজেট। এবারের বাজেট বর্তমান কঠিন সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে সম্পূর্ণ বাস্তবতা বর্জিত একটি বাজেট। এটি কেবলমাত্র সরকারের আশীর্বাদপুষ্টদের জন্যই করা হয়েছে।’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা আগেই বলেছি, যেহেতু এই সরকার জনগণের দ্বারা নির্বাচিত নয়, সুতরাং জনগণের সমস্যা সমাধানের জন্য বাজেট পেশ করার এখতিয়ারও তাদের নেই। এ সরকার পরিকল্পিতভাবে মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার হরণ করেছে। জনগণ ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত হয়েছে। একটি অনির্বাচিত সরকার কখনই জনগণের অর্থনৈতিক অধিকার নিশ্চিত করতে পারে না।’

তিনি বলেন, “নিশি রাতের ভোটডাকাত সরকার ২০২২-২৩ অর্থবছরের জন্য যে বাজেট প্রস্তাব করেছে সেটা কোনো অর্থেই সাধারণ জনগণের বাজেট নয়। এটা স্রেফ ‘ডলার পাচারকারী ও অর্থ লুটেরাদের বাজেট’। কারণ, পাচারকারীদের অর্থ নিরাপদে দেশে ফিরিয়ে আনা কিংবা বিদেশে ভোগ করার বৈধতা দিতেই এবারের বাজেট প্রণয়ন করা। পাশাপাশি লুটেরা মন্ত্রী, সংসদ সদস্য ও সুবিধাভোগী ব্যবসায়ী স্বজনদের অর্থ পাচারের সুযোগ করে দিতেই এবারের বাজেট। চাল, ডাল, তেল, লবণ, চিনি ও গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানির মূল্য হ্রাসের কোনো কার্যকরী কৌশল না নিয়ে শুধুমাত্র নিজেদের বিত্ত বৈভব বাড়ানোর লক্ষ্যেই এ বাজেট প্রণিত হয়েছে।’

বিজ্ঞাপন

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এই বাজেট প্রকৃতপক্ষে দুর্নীতির মাধ্যমে বিদেশে পাচার হয়ে যাওয়া বিপুল অংকের টাকা বৈধ করার ম্যাজিক বক্স। কর দিয়ে এসব অর্থ বৈধ হয়ে গেলে এর বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে পারবে না কেউ। বিদেশে অর্জিত স্থাবর সম্পত্তি বাংলাদেশে আনা না হলে এর উপর ১৫ শতাংশ, বিদেশে থাকা অস্থাবর সম্পত্তি বাংলাদেশে আনা না হলে ১০ শতাংশ ও বাংলাদেশে পাঠানো রেমিটকৃত নগদ অর্থের ওপর ৭ শতাংশ কর আরোপের মাধ্যমে তা বৈধ করার প্রস্তাব দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। আগামী অর্থবছরে এ ব্যবস্থা বহাল থাকবে।’

তিনি বলেন, ‘বৈদেশিক মুদ্রা সংকটের যুক্তিতে পাচারকৃত অবৈধ অর্থ বৈধ করার প্রস্তাব কেবল অনৈতিক নয়, এটা রীতিমতো আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক এবং দুর্নীতি ও অর্থপাচারকে রাজ ক্ষমা ঘোষণার শামিল। এতে বর্তমানে চলমান অর্থ পাচার সংক্রান্ত মামলাগুলোর ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়বে। এটি অসাংবিধানিক, বৈষম্যমূলক।’

‘যেখানে পাচারকারীদের শাস্তির আওতায় আনা এবং তাদের অবৈধভাবে পাচারকৃত অর্থ দেশে ফেরত আনাই আইনগতভাবে প্রত্যাশিত, সেখানে তাদের এ অর্থ-সম্পদ বৈধ করে পাচারকারীদের উৎসাহিত করা হচ্ছে। এটি দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরকারের তথাকথিত জিরো টলারেন্স নীতির সঙ্গেও সাংঘর্ষিক এবং অসাংবিধানিক। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী গর্হিত এই অপরাধের জন্য শাস্তির বদলে পুরস্কার দেওয়ার ব্যবস্থা অর্থ পাচারকারী ও দুর্নীতিবাজদের রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতার শামিল’— বলেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

তিনি বলেন, ‘গত ১৪ বছরে সরকার ঘনিষ্ট লোকজন বিপুল অর্থ বিদেশে পাচার করে নিয়েছে। এখন এ ঘোষণার মাধ্যমে সরকার ওইসব পাচারকারীদের অবৈধ অর্থ বৈধ করার ঢালাও সুযোগ করে দিল। এর আগেও বাজেটে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়া হয়েছিল। এবার পাচার হওয়া টাকা দেশে আনার বৈধতা দেওয়া হচ্ছে। এটা রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও নৈতিক— যেকোনো মানদণ্ডে অগ্রহণযোগ্য।’

বিজ্ঞাপন

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘২০০৯-২০১৪ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ থেকে ৪ হাজার ৯৬৫ কোটি ডলার পাচার হয়েছে এবং প্রতিবছর গড়ে ৭৫ হাজার কোটি টাকা পাচার হচ্ছে। কানাডার বেগম পাড়া অনেক আলোচিত। সিঙ্গাপুরে পাঁচ তারকা হোটেল, দুবাই আলিসান বাড়ি করার পাশাপাশি বিভিন্ন দেশের ব্যাংকে নগদ অর্থ রেখেছেন অনেকে। নিউইয়র্কে মন্ত্রীদের বাড়ি ও উপদেষ্টাদের বিলাসবহুল একাধিক বাড়ির কথাও বহুল আলোচিত। পিকে হালদারের ঘটনা আরও রোমাঞ্চকর। আর কত পিকে হালদারের তথ্য অনাবিষ্কৃত রয়েছে, তা কেবল বিধাতাই জানেন। সরকার এদের সকলের পাচার করা অর্থ বৈধ করার সুযোগ দিল।’

‘মানুষের আশা-আকঙ্ক্ষা পূরণের জন্য এই মুহূর্তে গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার কোনো বিকল্প নেই। আমরা মনে করি, সব রাজনৈতিক দল, ব্যক্তি-সংগঠন তথা জনগণের ঐক্যের মধ্য দিয়ে এই কর্তৃত্ববাদী, ফ্যাসিবাদী সরকারকে পদত্যাগে বাধ্য করতে হবে। নিরপেক্ষ, নির্দলীয় নির্বাচনকালীন সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্থান্তর করে, সংসদ বাতিল করে, নতুন নির্বাচন কমিশনের মাধ্যমে জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে গঠিত পার্লামেন্ট ও সরকার গঠনই এই রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট থেকে উত্তরণের একমাত্র পথ’— বলেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

‘মানুষের আশা-আকঙ্ক্ষা পূরণের জন্য এই মূহুর্তে গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থার প্রতিষ্ঠার কোনো বিকল্প নেই। আমরা মনে করি, সব রাজনৈতিক দল, ব্যক্তি সংগঠনের তথা জনগণের ঐক্যের মধ্য দিয়ে এই কর্তৃত্ববাদী, ফ্যাসিবাদী সরকারকে পদত্যাগে বাধ্য করতে হবে। নিরপেক্ষ, নির্দলীয় নির্বাচনকালীন সরকারের নিকট ক্ষমতা হস্থান্তর করে এবং সংসদ বাতিল করে নতুন করে গঠিত নির্বচন কমিশনের পরিচালনায় জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে গঠিত পার্লামেন্ট ও সরকার গঠনই এই রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট থেকে উত্তরণের একমাত্র পথ’— বলেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

সারাবাংলা/এজেড/পিটিএম

প্রতিক্রিয়া বাজেট বিএনপি

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর