বাজেটে বেসিসের প্রস্তাবের আশানুরূপ প্রতিফলন ঘটেনি
১১ জুন ২০২২ ২৩:৪৭
ঢাকা: ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে তথ্যপ্রযুক্তি খাতের উন্নয়নে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অফ সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস (বেসিস) এর প্রস্তাবের আশানুরূপ প্রতিফলন ঘটেনি। শনিবার (১১ জুন) রাজধানীর কারওয়ান বাজারের বেসিস অডিটোরিয়ামে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বেসিস নেতারা এ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন।
বেসিস-এর বাজেট প্রতিক্রিয়া শীর্ষক এ সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন- বেসিস সহ-সভাপতি (প্রশাসন) আবু দাউদ খান, বেসিস সহ-সভাপতি (অর্থ) ফাহিম আহমেদ ও বেসিস পরিচালক এ কে এম আহমদেুল ইসলাম বাবু।
গত ৯ জুন জাতীয় সংসদে ২০২২-২৩ অর্থবছরের জন্য ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকার বাজেট উপস্থাপন করায় অর্থমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়ে বেসিস সহ-সভাপতি (প্রশাসন) আবু দাউদ খান বলেন, ‘বাজেটে তথ্যপ্রযুক্তি খাতের জন্য বরাদ্দ গত বছরের সংশোধিত বাজেটের তুলনায় ১৬.৬৯ শতাংশ অর্থাৎ প্রায় ২৭৪ কোটি টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে এই অর্থ কোন কোন প্রকল্প বা খাতে ব্যয় হবে এবং তার মাধ্যমে তথ্যপ্রযুক্তি শিল্প এবং এই খাতের ব্যবসায়ীরা কীভাবে উপকৃত হবে সে বিষয়ে সুস্পষ্ট কোনো ধারণা বা ইঙ্গিত পাওয়া যায়নি।’
সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা বলেন, ‘তথ্যপ্রযুক্তি খাতের বাজেটে বেসিসের প্রস্তাবের আশানুরূপ প্রতিফলন ঘটেনি। তথ্যপ্রযুক্তি খাতে বিদেশি বিনিয়োগ উৎসাহিত করতে কর অব্যহতির সময়সীমা ২০২৪ সাল থেকে বাড়িয়ে ২০৩০ সাল পর্যন্ত করার প্রস্তাব করেছিলাম, এই বিষয়টি বাজেটে গুরুত্ব পায়নি। অন্যদিকে স্থানীয় সফট্ওয়্যার ও প্রযুক্তি নির্ভর সেবার উপর এখন ব্যবসায়পর্যায়ে ৫ শতাংশ হারে উৎসে মূল্য সংযোজন কর কর্তন করা হয়, দেশের সফটওয়্যার শিল্পের অনুকূলে স্থানীয় বাজার সম্প্রসারণের উদ্দেশ্যে তা প্রত্যাহারের প্রস্তাব রেখেছিলাম। পাশাপাশি, সব মন্ত্রণালয় ও তাদের অধিভুক্ত সংস্থাগুলোর অভ্যন্তরীণ উন্নয়নের জন্য যে বাজেট রয়েছে তার অন্তত ১০ শতাংশ সফটওয়্যার এবং আইটিইএস ক্রয়ের জন্য বরাদ্দ করারও প্রস্তাব করেছিল বেসিস। কিন্তু এগুলোর বিষয়ে এবারের বাজেটে কোন সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা আমরা দেখতে পাইনি।’
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, সাইবার সিকিউরিটি এখন শুধু বাংলাদেশ নয়, সারাবিশ্বের সমস্যা। ঠিকমতো নিরাপত্তা বিধান না করার ফলশ্রুতিতেই বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির মতো ঘটনা ঘটেছে। আর সাইবার সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজনীয় সাইবার সিকিউরিটি সফটওয়্যার পণ্যসমূহের উপর উচ্চ শুল্কহার প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে। এগুলো বিবেচনায় নিয়ে সাইবার সিকিউরিটি সফটওয়্যারের জন্য নতুন করে এইচএস কোড নির্ধারণ করে শুল্ক হার নির্ধারণ করার বিষয়ে আমরা বলেছিলাম, যা আমরা এবারের বাজেট বক্তৃতায় প্রতিফলিত হতে দেখিনি।
পাশাপাশি, তথ্যপ্রযুক্তি খাতে নারীদের অংশগ্রহণ বৃদ্ধি করতে তাদের জন্য ২ শতাংশ সুদে ঋণ দেওয়ার লক্ষ্যে অন্তত ৩০০ কোটি টাকার তহবিল ও আইসিটি খাতে নারীদের কর্মসংস্থান বৃদ্ধিতে, নারীদের জন্য কর্মসুযোগ সৃষ্টিকারি সফটওয়্যার ও আইটি প্রতিষ্ঠানসমূহকে নিয়োগকৃত নারী কর্মকর্তা/কর্মচারীর মাসিক বেতনের ১০ শতাংশ সরকারি আর্থিক প্রণোদনা দেয়ার ব্যাপারে আমরা বলেছিলাম। অন্যদিকে, টেকনিক্যাল অ্যাসিস্ট্যান্স (টিএ) প্রকল্প গ্রহণের জন্য ৫০০ কোটি টাকা তহবিল তৈরির প্রস্তাব করেছিলাম।
একইসঙ্গে, অনলাইনে লেনদেন উৎসাহিত করতে ক্রেতা এবং মার্চেন্ট উভয়কে যথাক্রমে ৩ এবং ২ শতাংশ হারে নগদ প্রণোদনা প্রদানের প্রস্তাব করেছিলাম। এছাড়াও আইটিইএস এর সংজ্ঞায় প্ল্যাটফর্ম অ্যাজ এ সার্ভিস (প্যাস) ই-সার্ভিসেস এবং সফটওয়্যার অ্যাজ এ সার্ভিস (স্যাস)-কে অন্তর্ভুক্তির প্রস্তাব করেছিলাম, কিন্তু এই বিষয়গুলো আইটিইএসের সংজ্ঞায় অন্তর্ভুক্ত হয়নি।
বক্তারা আরও বলেন, ‘অন্যান্য খাতের মতো তথ্যপ্রযুক্তি খাতও করোনাভাইরাসের কারণে আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছিল। তাই এটি দ্রুততার সঙ্গে পুষিয়ে নিতে ৫ শতাংশ সরকার-ভর্তুকিযুক্ত সুদের হারে একটি আইসিটি খাত-নির্দিষ্ট ২ হাজার কোটি টাকার উদ্দীপনা প্যাকেজের কথা বলেছিলাম, কিন্তু এটিও বাজেটের রূপরেখায় আমরা দেখতে পাইনি।’
অন্যদিকে তথ্যপ্রযুক্তি খাতের সবচেয়ে প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম বিশেষত ল্যাপটপ, প্রিন্টার, টোনার ইত্যাদির ওপর ১৫ শতাংশ মূল্য সংযোজন কর (মূসক বা ভ্যাট) আরোপের প্রস্তাব করা হয়েছে। এতে করে এই খাতের ব্যবসায়ী এবং ভোক্তা উভয়েরই ব্যয় বৃদ্ধি পাবে। ফলে আমদানি করা ল্যাপটপের দাম বেড়ে গিয়ে দেশের ফ্রিল্যান্সারদের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে যাওয়ার একটা আশংকা সৃষ্টি হতে পারে।
এবারের প্রস্তাবিত বাজেটে স্টার্টআপ উদ্যোক্তাদের উৎসাহিত করতে বাজেটে স্টার্টআপ উদ্যোক্তাদের আয়কর রিটার্ন দাখিল ব্যতীত অন্য সব ধরনের রিপোর্টিংয়ের বাধ্যবাধকতা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হচ্ছে। সরকারের সময়োপযোগী এসব পদক্ষেপকে সাধুবাদ জানিয়েছেন বেসিস নেতারা।
বেসিসের সহ-সভাপতি (অর্থ) ফাহিম আহমেদ আশা ব্যক্ত করেন যে, সরকার বাজেট আলোচনার মাধ্যমে বিষয়গুলো বিবেচনা করবে।
সারাবাংলা/ইএইচটি/এমও