‘খালেদা জিয়ার কোনো অঘটন ঘটলে পরিণতি কঠিন হবে’
১২ জুন ২০২২ ১৭:২৪
ঢাকা: খালেদা জিয়ার কোনো অঘটন ঘটলে পরিণতি কঠিন হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
রোববার (১২ জুন) দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে আয়োজিত এক বিক্ষোভ সমাবেশে তিনি এ হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন।
খালেদা জিয়ার সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে তাকে বিদেশে পাঠানোর পাশাপাশি নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ও উত্তর বিএনপি এ সমাবেশ আয়োজন করে। সকাল ১০ টায় এ সমাবেশ শুরু হয়। শেষ হয় দুপুর সোয়া ১ টায়।
সমাবেশে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমি বলতে চাই, সরকারকেই দায় নিতে হবে। আজ দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার আল্লাহ না করুক যদি কোনোরকম অঘটন ঘটে তাহলে এদেশের মানুষ আপনাদেরকে ক্ষমা করবে না। টেনে হিঁচড়ে আপনাদের ক্ষমতা থেকে নামিয়ে দেবে।’
‘আমি পরিষ্কার বলতে চাই যে, আমাদের শেষ কথা অবিলম্বে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিন। তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠান। অন্যথায় তার সমস্ত দায়-দায়িত্ব আপনাদেরকে নিতে হবে’- বলেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি বলেন, ‘বেগম খালেদা জিয়া ১৯৯০ সালে জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করে আন্দোলনের মাধ্যমে স্বৈরাচারের পতন ঘটিয়ে নতুন করে গণতন্ত্রকে প্রতিষ্ঠা করার কাজ শুরু করেছিলেন এবং রাষ্ট্রপতির শাসনকে বাদ দিয়ে সংসদীয় গণতন্ত্রকে বেছে নিয়েছিলেন বৃহ্ত্তর ঐক্যের জন্য। তারপর তিনি যতবার দায়িত্ব পেয়েছেন ততবার মানুষের কল্যাণের জন্য কাজ করেছেন। তিনি গণতন্ত্রকে প্রতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়ার জন্য কাজ করেছেন এবং সত্যিকার অর্থে বাংলাদেশকে উদিয়মান ব্যাগ্র হিসেবে আন্তর্জাতিকভাবে পরিচিত করেছিলেন।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া শিক্ষাক্ষেত্রে যুগান্তকারী পরিবর্তন নিয়ে এসেছিলেন। মেয়েদের ক্লাস টুয়েলভ পর্যন্ত বিনা বেতনে লেখাপড়ার সুযোগ করে দিয়েছিলেন। কথাগুলো বলছি এই জন্যই যে, সেই দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলা দিয়ে আটক রাখা হয়েছে। কত টাকার মামলা? ২ কোটি ৩৩ লাখ টাকার মামলা এবং সেই মামলাটাতে তার কোনো সম্পৃক্ততাই নেই।’
‘এই টাকা কোথাও যায় নাই, কেউ তসরুপ করে নাই। এখন প্রায় ৮ কোটি টাকা হয়েছে। তাদের মূল লক্ষ্যটা হচ্ছে খালেদা জিয়াকে রাজনীতি থেকে দূরে সরিয়ে দেওয়া, তাকে রাজনীতি করতে না দেওয়া। সেই কারণে তাকে আটক রাখা হয়েছে’- বলেন মির্জা ফখরুল।
তিনি বলেন, ‘আমাদের ম্যাডাম অত্যন্ত অসুস্থ। চিকিৎসকদের চেষ্টায় কয়েকবার তিনি মৃত্যুর হাত থেকে বেঁচে এসেছেন। গত পরশু রাতে হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ায় তার অবস্থা শোচনীয় ছিল। চিকিৎসকদের অত্যন্ত সময়োচিত পদক্ষেপের কারণে তিনি আপতাত শঙ্কামুক্ত হয়েছেন। কিন্তু তার উন্নত চিকিৎসা প্রয়োজন। সেই জন্যই আজ আমরা এই সমাবেশ আয়োজন করেছি। আমাদের পরিষ্কার কথা- তাকে অনতিবিলম্বে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশ যাওয়ার অনুমতি দিন, নইলে জনগণ আপনাদের ক্ষমা করবে না।’
সমাবেশ ১০ টায় শুরু হওয়ার কথা থাকলেও সকাল নয়টার আগেই রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে মিছিল নিয়ে প্রেস ক্লাবের সামনে আসতে থাকেন বিএনপির নেতা-কর্মীরা। সকাল সাড়ে ৯ টার মধ্যে প্রেসক্লাবের সামনের সড়ক বিএনপির নেতা-কর্মীতে কানায় কানায় পরিপূর্ণ হয়ে যায়। এক পর্যায়ে প্রেস ক্লাবের সামনের এক পাশের সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। ফলে আশপাশের সড়কে সৃষ্টি হয় তীব্র যানজট।
সকাল ১০ টার প্রেসক্লাবের সামনের সড়কে নির্মিত অস্থায়ী মঞ্চে বিএনপির নেতারা বক্তৃতা শুরু করেন। এ সময় ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ও উত্তর বিএনপি, ছাত্রদল, যুবদলসহ, স্বেচ্ছাসেবক দল, মহিলাদল, কৃষকদল, শ্রমিকদল, তাঁতীদল, মৎসজীবীদলসহ বিএনপির অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা স্লোগানে স্লোগানে রাজপথ প্রকম্পিত করে তোলে। তারা তাদের নেত্রী খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবি জানায় এবং সরকারের পতন চায়।
সম্ভাব্য পরিস্থিতি সামাল দিতে সমাবেশস্থলের আশপাশে বিপুলসংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়, জাতীয় প্রেস ক্লাবে প্রবেশের সব কটি ফটক বন্ধ করে রাখা হয়, সাংবাদিক ছাড়া আর কাউকে প্রেস ক্লাবের ভেতরে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি।
ঢাকা উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমানের সভাপতিত্বে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হাবিবুর রহমান হাবিব, আবুল খায়ের ভূঁইয়া, সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত, কেন্দ্রীয় নেতা নাজিম উদ্দীন আলাল, মহানগর নেতা ইশরাক হোসেন প্রমুখ। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সদস্য সচিব রফিকুল আলম মজনু ও উত্তরের সদস্য সচিব আমিনুল হক।
উল্লেখ, ৭৬ বছর বয়সী বিএনপি চেয়ারপারসন বহু বছর ধরে আর্থ্রাইটিস, ডায়াবেটিস, কিডনি, ফুসফুস, চোখের সমস্যাসহ নানা জটিলতায় ভুগছেন। শুক্রবার (১০ জুন) রাতে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরের দিন এনজিওগ্রাম করার পর তার হার্টে ব্লক ধরা পড়ে। এরই মধ্যে রিং পরানো হয়েছে।
২০২১ সালের এপ্রিলে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার পর এ নিয়ে খালেদা জিয়াকে পঞ্চম দফায় ঢাকার বসুন্ধরার এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হল।
দুদকের করা দুর্নীতির মামলায় দণ্ডিত হয়ে ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি কারাগারে যেতে হয় সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে। দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর ২০২০ সালের ২৫ মার্চ সরকারের নির্বাহী আদেশে শর্ত সাপেক্ষে সাজা স্থগিত করে সাময়িকভাবে মুক্তি দেওয়া হয় তাকে।
গত বছর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর তার পরিপাকতন্ত্রে রক্তক্ষরণ এবং লিভার সিরোসিস রোগ ধরা পড়ে। বেশ কিছু দিন হাসপাতালে থাকার পর বাসায় ফেরেন তিনি। শুক্রবার (১০ জুন) মধ্য রাতে খালেদা জিয়া হঠাৎ অসুস্থবোধ করলে ছোট ভাই শামীম এস্কান্দারের গাড়িতে তাকে হাসপাতাল নিয়ে যাওয়া হয়।
সারাবাংলা/এজেড/পিটিএম