বাংলাদেশে সাংবাদিকদের সুরক্ষা নিয়ে আর্টিকেল নাইনটিনের উদ্বেগ
১২ জুন ২০২২ ১৮:৩১
ঢাকা: চলতি বছরের জুন মাসের মধ্যে বাংলাদেশে তিন জন গণমাধ্যমকর্মী খুন হওয়ার ঘটনায় গভীর শঙ্কা ও উদ্বেগ প্রকাশ করেছে আর্টিকেল নাইনটিন। একইসঙ্গে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে দেশজুড়ে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে ঢালাও মামলা এবং সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যা মামলার তদন্ত প্রতিবেদন জমাদান ৮৯তম বারের মতো পেছানোসহ সাংবাদিক নির্যাতনের অব্যাহত ঘটনায় নিন্দা জানিয়েছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাটি।
রোববার (১২ জুন) গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও সাংবাদিকদের সুরক্ষার অধিকার প্রসারে বিশ্বজুড়ে কাজ করা সংস্থাটি বলছে, সাংবাদিকদের অধিকার লঙ্ঘন ও হত্যাসহ নির্যাতনের অব্যাহত এই প্রবণতা বাংলাদেশে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা পরিস্থিতির ক্রমাবনত নাজুক অবস্থা ও বিচারহীনতার পরিস্থিতি নির্দেশ করে।
বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে জানা যায়, গত ৮ জুন রাজধানীর রাজধানীর হাতিরঝিলের পাড় থেকে বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল ডিবিসি নিউজের সিনিয়র প্রযোজনা নির্বাহী আবদুল বারীর ক্ষতবিক্ষত লাশ উদ্ধার করা হয়। একদিন আগে ৬ জুন পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলায় পুকুর থেকে স্থানীয় দৈনিক সরেজমিন বার্তার প্রতিনিধি আবু জাফর প্রদীপের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। আবু জাফরের শরীরে ধারালো অস্ত্রের আঘাতের চিহ্ন ছিল।
এদিকে, গত ১৩ এপ্রিল কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলায় পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় দুর্বৃত্তদের গুলিতে স্থানীয় দৈনিক কুমিল্লার ডাকের সাংবাদিক মহিউদ্দিন সরকার নাঈম নিহত হন। নাঈম হত্যা মামলার প্রধান আসামি ঘটনার অব্যাবহিত পর তথাকথিত ‘বন্দুকযুদ্ধে’ মারা যান।
আর্টিকেল নাইনটিন এই তিন হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু তদন্তসাপেক্ষে ঘটনায় জড়িত প্রকৃত অপরাধীদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছে।
আর্টিকেল নাইনটিন বলছে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে মে পর্যন্ত দেশজুড়ে সাংবাদিকদের ওপর শারীরিক হামলার ৬২টি ঘটনা তারা রেকর্ড করেছে। এসব ঘটনায় ১১৮ জন সাংবাদিক আহত ও লাঞ্ছিত হয়েছেন। দেশের সচেতন নাগরিক, গণমাধ্যম ও সাংবাদিকদের ওপর এসব ঘটনার প্রভাব ও ব্যাপকতা মারাত্মক, যা এরই মধ্যে একটি ভয়ের পরিবেশ ও সংস্কৃতি কায়েম করেছে। আর্টিকেল নাইনটিন সাংবাদিকদের সুরক্ষা নিশ্চিতে হত্যাসহ নির্যাতন ও অধিকার লঙ্ঘনের প্রতিটি ঘটনা সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে দ্রুত ও সুষ্ঠু তদন্তসাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছে। একইসঙ্গে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন সংশোধনে সরকারের প্রতিশ্রুতি অবিলম্বে বাস্তবায়নেরও আহ্বান জানিয়েছে।
গণমাধ্যমে পাঠানো বিবৃতিতে আর্টিকেল নাইনটিন দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক পরিচালক ফারুখ ফয়সল বলেন, আর্টিকেল নাইনটিন ২০১৮ সাল থেকেই মতপ্রকাশের অধিকার ও স্বাধীন সাংবাদিকতার পরিপন্থি বলে চিহ্নিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের নিবর্তনমূলক ধারাগুলো সংশোধনের দাবি জানিয়ে আসছে। আইনটির অপপ্রয়োগ হয়েছে স্বীকার করে সাম্প্রতিক সময়ে সরকারের একাধিক মন্ত্রী এই আইনে সাংবাদিকদের তাৎক্ষণিক গ্রেফতার না করার পাশাপাশি আইনটির সংস্কারের আশ্বাসও দিয়েছেন। কিন্ত বাস্তবতা হলো— ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা দায়ের ও গ্রেফতার হচ্ছে অব্যাহত গতিতে।
ফারুখ ফয়সল বলেন, আইনটির সুষ্ঠু প্রয়োগের চেয়ে সাংবাদিকদের হয়রানি করাসহ অপপ্রয়োগই বেশি হচ্ছে। এ বিষয়ে সরকার ও প্রশাসনও অবগত। তাই কালক্ষেপণ না করে প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী আইনটির প্রয়োজনীয় সংস্কার করতে সরকারের প্রতি আমরা আহ্বান জানাই।
ফারুখ ফয়সল আরও বলেন, সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যা মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের সময় ৮৯ বারের মতো পিছিয়েছে। দীর্ঘ ১০ বছর ধরে চাঞ্চল্যকর ও আন্তর্জাতিকভাবে আলোচিত একটি মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের সময় এভাবে পেছানো নজিরবিহীন। আমরা আশা করি, বারী, আবু জাফর ও নাঈম হত্যাকাণ্ডের তদন্তের এমন দুর্ভাগ্য হবে না।
কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টসের (সিপিজে) ‘গ্লোবাল ইমপিউনিটি ইনডেক্স-২০২১’ অনুযায়ী বিশ্বে সাংবাদিক হত্যার বিচার না হওয়া দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১১তম। তাই কর্তৃপক্ষকে এটা নিশ্চিত করতে হবে যে, সাম্প্রতিক তিনটি হত্যাকাণ্ডসহ সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যা মামলার তদন্ত যেন দ্রুত শেষ হয় এবং প্রকৃত অপরাধীদের আইনের আওতায় আনা হয়— বলেন ফারুখ ফয়সল।
সারাবাংলা/ইএইচটি/টিআর
আর্টিকেল নাইনটিন গণমাধ্যমকর্মী খুন ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন মতপ্রকাশের স্বাধীনতা সাংবাদিকদের সুরক্ষা