Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘আইনপ্রণেতা হয়েও আইন ভাঙলে ইজ্জত গেল কার?’

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
১৩ জুন ২০২২ ১৭:০৯

কুমিল্লা থেকে: কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের নির্বাচনকে সামনে রেখে সংসদ সদস্য আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা অনুযায়ী এলাকা না ছাড়ায় কার ইজ্জত গেল?— তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন দুই নির্বাচন কমিশনার রাশেদা সুলতানা ও ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আহসান হাবিব খান। একজন আইনপ্রণেতা হয়েও আইন লঙ্ঘন করায় এ বিষয়ে প্রশ্ন তোলেন তারা।

সোমবার (১৩ জুন) সকালে কুমিল্লায় গণমাধ্যমকর্মীদের প্রশ্নের জবাবে পালটা উত্তর দিয়ে তারা এসব বলেন। এদিন সকালে কুমিল্লার ফয়জুন্নেসা বালিকা বিদ্যালয়ের অডিটোরিয়ামে কুসিক নির্বাচনের প্রিজাইডিং কর্মকর্তাদের নিয়ে ব্রিফিং অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামরুল হাসান। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আহসান হাবিব খান।

বিজ্ঞাপন

কুমিল্লা সিটি করপোরেশনে নির্বাচন ১৫ জুন। নির্বাচন আচরণ বিধিমালা অনুযায়ী প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণায় অংশ নেওয়ার কারণে সংসদ সদস্য আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহারকে কুমিল্লা-৬ নির্বাচনি এলাকা ছাড়ার নির্দেশনা দেয় নির্বাচন কমিশন। কিন্তু নির্দেশ অমান্য করে হাইকোর্টে রিট আবেদন করে এলাকাতেই অবস্থান করেন আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার। এমন অবস্থায় আইন না মানা ও মানাতে না পারার ব্যর্থতা কার?

গণমাধ্যমকর্মীদের এমন প্রশ্নের জবাবে নির্বাচন কমিশনার রাশেদা সুলতানা বলেন, ‘আমার মর্যাদা আমিই যদি সমুন্নত না রাখি তবে কে রাখবে? তিনি গেলেন না তো গেলেন-ই না। আপনারা চিন্তা করেন, উনি কী?

তিনি বলেন, ‘আইনের একটু ঘাটতি-খামতি আছে। আর তাছাড়া উনি একজন সম্মানী লোক। তাকে এভাবে টেনে-হিঁচড়ে ঘর থেকে বের করে দেওয়া যায় না। সেটাও কিন্তু আসলে কোনো দিক দিয়ে কিছু হয় না। আপনি যখন আমাকে বলবেন যে, আপনি চলে যান তখন আমারই কিন্তু উচিত নিজের সম্মান রেখে চলে যাওয়া। আমি এইটুকুই বলতে চাই। নিজের সম্মান নিজে যদি না রাখি কাউকে তো জোর করে সম্মানিত করা যায় না। আপনারা উনাকে ইমাজিন করেন।’

বিজ্ঞাপন

আজ স্বতন্ত্র প্রার্থী কথা বলেছেন। তিনি বলেছেন যে, এমপি এলাকা না ছাড়ায় ইসি একটা চিঠি দিয়েছে। এতে করে ইসির ইজ্জত গেছে। আপনাদের কি ইজ্জত গেছে? গণমাধ্যমকর্মীর এমন আরেক প্রশ্নের জবাবে রাশেদা সুলতানা বলেন, ‘না, আমি মনে করি ইজ্জত যায় নাই।’ কার ইজ্জত গেছে তবে?— গণমাধ্যমকর্মীদের এমন আরেক প্রশ্নের জবাবে রাশেদা সুলতানা বলেন, ‘এখন আপনারাই বুঝেন। আপনারা নিশ্চয় বিবেকবান মানুষ, আপনারা বুঝবেন। যিনি আচরণবিধি লঙ্ঘন করেন তার ইজ্জত কতটুকু থাকে?— এই প্রশ্ন আমি করে গেলাম।‘

জনগণ তো মনে করে এটা আপনাদের ব্যর্থতা। কী বলবেন?— গণমাধ্যমকর্মীদের এমন আরেক প্রশ্নের জবাবে রাশেদা সুলতানা বলেন, ‘না, না, না। জনগণ আসলে আইনের খুঁটিনাটি অনেক কিছুই জানে না। আচরণ বিধি লঙ্ঘন করায় আমরা উনাকে নির্দেশ দিয়েছি চলে যাওয়ার জন্য। চলে গেলে উনি ভালো করতেন। কিন্তু উনি গেলেন না। তাহলে কে কাকে কতটুকু ইয়ে করলেন? বলেন আপনারা। আমি তো মনে করি আমরা ঠিক আছি। আমাদের যতটুকু মেজারমেন্ট ছিল আমরা নিয়েছি।’

জনগণ তো মনে করছে ইসি ব্যর্থ। আপনারা কী এমন মনে করছেন?— গণমাধ্যমকর্মীদের এমন প্রশ্নের জবাবে রাশেদা সুলতানা বলেন, ‘জনগণ অনেক কিছুই মনে করতে পারে। এই জনগণের মনে করাটা তাদের হয়তো সেন্টিমেন্টে লাগতে পারে। কিন্তু আসলে কথাটা ঠিক না। আমরা দায়িত্বশীলতার সঙ্গে বলছি যে, আমাদের কোনো রকম ত্রুটি হয় নাই।’

এ সময় আরেক কমিশনার আহসান হাবিব খান বলেন, ‘আসলে সমস্যাটা হয়তো আমাদের আইনের মধ্যে। সিটি করপোরেশন বলেন, পৌরসভা বলেন, জেলা পরিষদ বলেন, ইউনিয়ন বলেন— প্রত্যেক আইনের মধ্যে কিছু কিছু দুর্বলতা আছে। যেগুলো নিয়ে আমরা অলরেডি বসেছি এবং সে সমস্ত আইন আরও কঠোর করে যাতে ভবিষ্যতে এগুলো আমরা আরও ভালোভাবে ইমপ্লিমেন্ট করতে পারি তার ব্যবস্থাও আমরা নিয়েছি।’

তিনি বলেন, ‘আপনারা যে কথাটা বললেন, ইজ্জত কার গেল? ধরেন জনগণের ভোটে আপনি নির্বাচিত। আপনি একজন জনপ্রতিনিধি। এভাবে আপনি একজন আইনপ্রণেতা। আপনি আইনপ্রণেতা হয়ে তা নিজেই ভঙ্গ করলেন। তাহলে কার ইজ্জত গেল?’

তিনি আরও বলেন, ‘ভোটের পরিস্থিতি ভালোই আছে। কোনো ধরনের খারাপ ঘটনা এখনও ঘটেনি। নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। সুষ্ঠু ভোটের জন্য যা যা দরকার সবই করা হয়েছে।’

নির্বাচন কমিশনার রাশেদা সুলতানা বলেন, ‘যদি ভোটের পরিস্থিতি ভালো না থাকে তাহলে নির্বাচন স্থগিত করা হবে। নির্বাচন সুষ্ঠু করার জন্য আমাদের সর্বাত্মক প্রচেষ্টা রয়েছে।’

এ সময় উপস্থিত ছিলেন কুসিক নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা শাহেদুন্নবী চৌধুরী, কুমিল্লা জেলা প্রশাসক কামরুল হাসান ও জেলা পুলিশ সুপার ফারুক আহমেদ প্রমুখ।

এর আগে, ৮ জুন সন্ধ্যায় নির্বাচনি আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগে সংসদ সদস্য আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহারকে নির্বাচনি এলাকা ছাড়ার নির্দেশ দেয় নির্বাচন কমিশন (ইসি)। তবে সোমবার (১৩ জুন) বিকেল পর্যন্ত তিনি এলাকা ছাড়েননি।

প্রসঙ্গত, কুসিক নির্বাচনে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন পাঁচজন প্রার্থী। এছাড়াও কাউন্সিলর পদে ১০৮ জন এবং সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে ৩৬ প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

উল্লেখ্য, নির্বাচন কমিশনের তফসিল অনুযায়ী কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে ১৫ জুন। এবার কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের ২৭টি ওয়ার্ডের ১০৫টি কেন্দ্রে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোট নেওয়া হবে। এই সিটি করপোরেশনে মোট ভোটার দুই লাখ ২৯ হাজার ৯২০। এর মধ্যে নারী ভোটার এক লাখ ১৭ হাজার ৯২, পুরুষ ভোটার এক লাখ ১২ হাজার ৮২৬।

কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের এটি তৃতীয় নির্বাচন। এর আগে দুই নির্বাচনেই মেয়র পদে ভোটে নির্বাচিত হন মনিরুল হক সাক্কু। প্রথমবার স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে এবং দ্বিতীয়বার ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে বিএনপি প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন তিনি।

সারাবাংলা/এসবি/পিটিএম

আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার কুমিল্লা সিটি করপোরেশন কুসিক নির্বাচন সংসদ সদস্য

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর