পাটখাতে স্বয়ংসম্পূর্তার জন্য বিদেশি বিনিয়োগ আনতে সরকার কাজ করছে
১৩ জুন ২০২২ ১৮:২৯
ঢাকা: বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী বলেছেন, পাটখাতে স্বয়ংসম্পূর্তার জন্য বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আনতে কাজ করছে সরকার।
সোমবার (১৩ জুন) বিরোধীদলীয় সংসদ সদস্য ও জাপা মহাসচিব মো. মুজিবুল হকে এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী সংসদে এ কথা জানান। জাতীয় সংসদের বাজেট অধিবেশনে টেবিলে উত্থাপিত প্রশ্নোত্তর পর্বে বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী এ সব কথা বলেন।
মন্ত্রী বলেন, ‘পাটশিল্প বিকাশে বিদেশে আরও বেশি পরিমাণ পাট ও পাটজাতদ্রব্য রফতানি বাড়াতে সরকার পদক্ষেপ নিয়েছে।’
মন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী বলেন, ‘পাটশিল্প বিকাশের জন্য বিদেশে আরও বেশি পরিমাণ পাট ও পাটজাত দ্রব্য রফতানি করার জন্য বহুমুখী পাটজাত পণ্যকে জনপ্রিয় করতে প্রচার প্রচারণাসহ বিদেশে বিভিন্ন মেলার আয়োজন করার কাজ চলমান রয়েছে। মেলা পাটজাত পণ্য উৎপাদনকারী, বিপণনকারী, ব্যবহারকারী এবং বিদেশি ক্রেতাদের মধ্যে অধিক যোগাযোগ স্থাপনে সহায়ক হবে। Expo-2020, Dubai সহ সকল আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ বাণিজ্য মেলায় বহুমুখী পাটপণ্যের প্রতি মানুষের ব্যাপক আগ্রহ লক্ষ্য করা যাচ্ছে। ভবিষ্যতে বিভিন্ন আর্ন্তজাতিক মেলায় অংশগ্রহণের মাধ্যমে বিশ্বে পাটপণ্যের ব্যবহার ও রফতানি বৃদ্ধির পরিকল্পনা রয়েছে।’
পাট পণ্য রফতানিতে ভারত সরকারের Anti Dumping প্রত্যহারের জন্য অনুরোধ জানিয়ে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে পত্র প্রদান করা হয়েছে। অন্যদিকে যে সব বাজারে পাটপণ্য রফতানিতে প্রতিবন্ধকতা রয়েছে (যথা-শুল্ক ও এন্টি ডাম্পিং) সে সব প্রতিবন্ধকতা নিরসনে সরকার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশ সরকারের দূতাবাসগুলোর মাধ্যমে বিদেশে পাট পণ্যের প্রচার কার্যক্রম চলমান রয়েছে। পাটজাত পণ্য রফতানিতে সরকার পাটজাত পণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর রফতানির ওপর সর্বোচ্চ ২০% ভর্তুকি প্রদান জুট ডাইভারসিফিকেশন প্রমোশন সেন্টার (জেডিপিসি) কর্তৃক বহির্বিশ্বে বহুমুখী পাটপণ্যের ব্যবহার ও রফতানি বৃদ্ধির লক্ষ্যে আন্তর্জাতিকমানের যুগোপযোগী ও মানসম্পন্ন বহুমুখী পাটজাতপণ্য উৎপাদনের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়ে থাকে। যার ফলে উদ্যোক্তাগণ বিভিন্ন প্রকার পরিবেশবান্ধব দৃষ্টিনন্দন বহুমুখী পাটপণ্য উৎপাদনে সক্ষমতা অর্জন করেছে। রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো এর সঙ্গে জেডিপিসির উদ্যোক্তগণ বিদেশে বিভিন্ন মেলায় অংশগ্রহণ করতে পারে তার ব্যবস্থা করা হয়েছে; বাংলাদেশে অবস্থিত বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূতগণের কাছে উপস্থাপনের জন্য জেডিপিসি বহুমুখী পাট পণ্যের প্রদর্শনী/মেলার আয়োজনের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। বিভিন্ন বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতগণের নিকট দেশে অবস্থিত আধাসরকারি পত্র প্রেরণ করা হয়েছে, যাতে বহির্বিশ্বে পরিবেশবান্ধব বহুমুখী পাটপণ্যের ব্যবহার সম্প্রসারিত হয় জেডিপিসি নিজস্ব ওয়েবসাইটের মাধ্যমে বহুমুখী পাটপণ্যের উৎপাদন ও সরবরাহ সংক্রান্ত তথ্যাদি প্রচার করে আসছে এবং ক্রেতাদের নিকট বহুমুখী পাটপণ্য সহজলভ্য করার প্রয়াসে জেডিপিসি ভবনে একটি আন্তর্জাতিক মানের প্রদর্শনীও বিক্রয় কেন্দ্র চালু করা হয়েছে বিমানবন্দরে পর্যটনের শপে জেডিপিসি’র উদ্যোক্তাদেরউৎপাদিত বহুমুখী পাটপণ্য বিক্রয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
চট্টগ্রাম-৪ সংসদ সদস্য দিদারুল আলমের অপর এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, ‘সীতাকুণ্ড সদরে টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা আপাতত সরকারের নেই। তবে চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলার জোরারগঞ্জে ১টি টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ, চট্টগ্রাম শহরের বায়েজিদে ১টি টেক্সটাইল ইনস্টিটিউট ও ১টি টেক্সটাইল ভোকেশনাল ইনস্টিটিউট-এ শিক্ষা কার্যক্রম চলমান রয়েছে। চট্টগ্রামের চন্দনাইশ উপজেলায় ১টি টেক্সটাইল ভোকেশনাল ইনস্টিটিউট- এর উন্নয়ন প্রকল্পের ডিপিপি প্রস্তুতের কাজ চলমান রয়েছে।’
টাঙ্গাইল-৬ আসনের সংসদ সদস্য আহসানুল ইসলাম টিটুর অপর এক প্রশ্নের জবাবে বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী বলেন, বর্তমানে সরকার ৩য় মেয়াদে ক্ষমতা গ্রহণের পর গত তিন অর্থবছরে টাঙ্গাইল-৬ নাগরপুর-দেলদুয়ার উপজেলায় নিম্নরূপ ২টি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে: ক্রমিক প্রকল্পের নাম বরাদ্দকৃত অর্থের পরিমাণ ২৫৩.৭১ লাখ টাকা ৯৭৮.২৪ লাখ টাকা। তাঁতিদের আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়নে চলতি মূলধন সরবরাহ ও তাঁতের আধুনিকায়ন’ শীর্ষক প্রকল্প ৫টি বেসিক সেন্টারে ৫টি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, ১টি ফ্যাশন ডিজাইন ইনস্টিটিউট এবং ২টি মার্কেট (১ম সংশোধিত)” শীর্ষক অনুমোদিত প্রকল্পের আওতায় টাঙ্গাইল সদর, দেলদুয়ার তাঁতিদের উন্নয়নের জন্য টাঙ্গাইল সদরের বাজিতপুরে ১টি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপনের শিগগিরই কাজ শুরু হবে।
জামালপুর-৫ আসনের সংসদ সদস্য মো. মোজাফ্ফর হোসেনের অপর এক প্রশ্নের জবাবে বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী বলেন, ‘বস্ত্রখাতে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের লক্ষ্যে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের উৎসাহিতকরণে সরকারের গৃহীত পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। পদক্ষেপগুলো হচ্ছে বস্ত্ৰ আইন, ২০১৮; বায়িং হাউজ নিবন্ধনের প্রজ্ঞাপন, ২০১৯; বস্ত্রশিল্প (নিবন্ধন ও ওয়ানস্টপ সার্ভিস কেন্দ্র) বিধিমালা, ২০২১ জারি করা হয়েছে। উল্লেখিত আইন ও বিধিমালার আওতায় বস্ত্ৰ শিল্পের নিবন্ধন, বায়িং হাউজ নিবন্ধন, আইআরসি (ইমপোর্ট রেজিষ্ট্রেশন সার্টিফিকেট) প্রদানের সুপারিশ করা হয়। ওই সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে আমদানি ও রফতানি প্রধান নিয়ন্ত্রকের দফতর থেকে শিল্প আইআরসি প্রদান করা হয়। এর ফলে কাঁচামাল ও ক্যাপিটাল মেশিনারিজ আমদানি করার ক্ষেত্রে বস্ত্ৰ শিল্প কারখানা গুলো শুল্ক রেয়াতি সুবিধা পেয়ে থাকে যা দেশে বৈদেশিক বিনিয়োগে সহায়ক হিসেবে কাজ করছে। বস্ত্র খাতে দক্ষ জনবল তৈরির লক্ষ্যে বস্ত্র অধিদফতর নিয়ন্ত্রিত টেক্সটাইল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহ নতুন নতুন কোর্স চালু করা হচ্ছে। নতুন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপনের জন্য উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণও বাস্তবায়ন করা হচ্ছে; বিটিএমসি’র নিয়ন্ত্রণাধীন ১৬টি মিল পিপিপি এর আওতায় পরিচালনার জন্য অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি কর্তৃক নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়। উক্ত ১৬টি মিলের মধ্যে প্রথম পর্যায়ে ২টি এবং দ্বিতীয় পর্যায়ে ৪টি মিলের আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করা হয়।’
(খ) গৃহীত পদক্ষেপের বাস্তবায়ন অগ্রগতি ও গ্রান্ত সফলতা হচ্ছে দেশের অভ্যন্তরীণ বস্ত্র চাহিদা পূরণ, রফতানি বৃদ্ধি এবং ব্যাপক কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির লক্ষ্যে বাংলাদেশের বস্ত্রখাতকে প্রতিযোগিতায় সক্ষমতা যুগোপযোগীকরণ, আন্তর্জাতিক অর্জনের সহায়তাকরণ, টেকসই উন্নয়ন এবং বিনিয়োগ আকৃষ্টকরণের জন্য ‘বস্ত্র আইন, ২০১৮’ পাশ হয়েছে যা বাস্তবায়নে বস্ত্র অধিদফতর কাজ করছে; আলী আজম (ভোলা-২) আসনের সংসদ সদস্য মন্ত্রী সংসদে আরো জানান,বর্তমান সরকার রেশম শিল্প সম্প্রসারণে নিম্নবর্ণিত পদক্ষেপগুলো গ্রহণ করেছেন: রেশম শিল্পের উন্নয়ন ত্বরান্বিত করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ রেশম বোর্ড, বাংলাদেশ রেশম গবেষণা ও প্রশিক্ষণ ইন্সটিটিউট ও বাংলাদেশ সিল্ক ফাউন্ডেশনকে একীভূত করে ২০১৩ সালে ১৩ নং আইনের মাধ্যমে বাংলাদেশ রেশম উন্নয়ন বোর্ড গঠন করা হয়েছে; মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক প্রদত্ত নির্দেশনার আলোকে রেশম চাষকে ‘আমার বাড়ি আমার খামার’ প্রকল্পের সঙ্গে সম্পৃক্ত করা হয়েছে; তৎকালীন সরকারের আমলে অর্থাৎ ২০০২ সালে বন্ধঘোষিত রাজশাহী রেশম কারখানা আনুষ্ঠানিকভাবে ২৭ জুলাই ২০১৮ ইং চালু করা হয়েছে; অভাবে রেশম ঠাকুরগাঁও জনবলের কারখানাটি বেসরকারি উদ্দ্যোক্তাদের নিকট লিজ প্রদানের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে; রাজশাহী রেশম কারখানা চত্বরে একটি আধুনিক শো-রুম স্থাপন করা হয়েছে; রেশম বস্ত্র বিক্রয়ের জন্য ২৪ জানুয়ারি ২০২১ সালে ঢাকার ফার্মগেটে শো-রুম চালু করা হয়েছে; রেশম বস্ত্রের বাজার জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছানোর জন্য www.silkbsdb.com নামে একটি e-commerce website করা হয়েছে; বর্তমান সরকারের ১৩ (তেরোঁ) বছর মেয়াদে প্রায় ২১৪ কোটি টাকা ব্যয়ে ৭টি উন্নয়ন প্রকল্প অনুমোদন হয়েছে। এরমধ্যে ৩টি বাস্তবায়িত হয়েছে এবং ৪টি বাস্তবায়নাধীন রয়েছে।
সারাবাংলা/এএইচএইচ/একে
গোলাম দস্তগীর গাজী পাটখাত বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী বিদেশি বিনিয়োগ