।। সৈয়দ সোহেল রানা, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট ।।
ঢাকা: ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের ১০২ নম্বর ওয়ার্ডের এক বেডে শুয়ে আছেন বাস–ট্রাকের চাপায় এক হাত হারানো হৃদয়। পাশে বসা তার বাবা। নিজ সন্তানের এই অবস্থায় কিছুতেই যেন থামছে না তার চোখের জল। মা শাহিদা বেগমেরও একই অবস্থা।
আক্ষেপ করে হৃদয়ের বাবা রবিউল ইসলাম বলেন, এক হাত গেছে কিন্তু ছেলে তো বেঁচে আছে। আল্লাহর কাছে দোয়া করি তিনি যেন আমার হৃদয়কে সুস্থ করে দেন।
তিনি আরও বলেন, ‘চিকিৎসকরা খুব যত্ন সহকারে হৃদয়ের চিকিৎসা করছেন। “চিকিৎসকরা বলেছেন, হাতটাই কাটা পড়েছে। কিন্তু অন্যান্য দিক থেকে ভাল আছে হৃদয়। কিছু জিজ্ঞাসা করলে কথা বলে, নিজে থেকে কথা বলে না।” সুস্থ থাকতে দুষ্টুমিটা করতো। দেখে মনে হত ওর মত দুষ্টু ছেলে আর একটাও নাই।’
ঢামেক হাসপাতালের অর্থপেডিকস বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. মো. শামসুজ্জামান জানান, আল্লাহর রহমতে এখনো হৃদয় ভাল আছে। শুধু হাতটাই সমস্যা। নিউরোসার্জনরা দেখেছে মাথায় তেমন আঘাত নাই। শরীরে রক্তের পরিমাণ কম আছে । আরও এক ব্যাগ রক্ত দিতে বলা হয়েছে। কিন্তু বলব না সে শঙ্কামুক্ত।
গত মঙ্গলবার (১৭ এপ্রিল) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে গোপালগঞ্জ সদর বেতগ্রাম এলাকায় বাস ট্রাক সংঘর্ষে জানালার পাশে বসে থাকা হৃদয়ের এক হাত বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। সেই দিনই বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে স্থানীয় হাসপাতাল থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাকে।
হৃদয় টুঙ্গিপাড়া এক্সপ্রেস নামের একটি পরিবহনে হেলপারের কাজ করতো। হৃদয়ের বাড়ি গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার কাড়ারগাতী গ্রামে। বাবার নাম রবিউল ইসলাম। তিনিও একই বাসের সুপারভাইজারের কাজ করেন। তিন বোন এক ভাইয়ের মধ্যে হৃদয় সবার ছোট।
টুঙ্গিপাড়া এক্সপ্রেসের যাত্রী ও প্রত্যক্ষদর্শী ইডেন কলেজের অনার্স শেষ বর্ষের ছাত্রী রাহিমা মনি জানান, তিনিও একই বাসের যাত্রী ছিল। বাসের পেছনের দুই সিট আগে বসেছিল হৃদয়, পাশের ছিটে বসা ছিল আরেক হেলপার স্বপন। জানালার পাশে হাত রাখা ছিল হৃদয়ের।
বাসটি বেতগ্রাম পৌঁছালে বিপরীত দিক থেকে আসা একটি ট্রাক পাশ কাটিয়ে যাওয়ার সময় বাস ও ট্রাকটির পেছনের অংশে চাপা দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই হৃদয়ের ডান হাতটি বিচ্ছিন্ন হয়ে নীচে পড়ে যায়। গ্লাসে তার নাক-মুখ কেটে যায়।
পরে গুরুতর অবস্থায় তাকে গোপালগঞ্জ সদর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তার অবস্থার অবনতি হলে তাকে ঢামেক হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়।
সারাবাংলা/এসএসআর/টিএম/আইএ
** দ্রুত খবর জানতে ও পেতে সারাবাংলার ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে রাখুন: Sarabangla/Facebook