Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘কালো টাকা’ ছড়ানোর পাল্টাপাল্টি অভিযোগে শেষ কুসিকের প্রচারণা

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
১৪ জুন ২০২২ ১২:৫১

কুমিল্লা থেকে: আর মাত্র ২৪ ঘণ্টার অপেক্ষা। তারপরই ১৫ জুন অনুষ্ঠিত হবে কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের (কুসিক) নির্বাচন। নির্বাচনকে ঘিরে প্রার্থীদের প্রচার-প্রচারণা শেষ হয়েছে সোমবার (১৩ জুন) মধ্যরাতে। এদিন প্রচারণার শেষ দিনেও ছিল পাল্টাপাল্টি অভিযোগ।

নগরজুড়ে প্রার্থীদের মুখে সবচাইতে আলোচিত শব্দ ছিল- কালো টাকা ছড়ানো, নগরীতে বহিরাগতদের অবস্থান ও কুমিল্লা-৬ আসনের সংসদ সদস্য আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহারের নির্বাচনী এলাকা না ছাড়ার কারণে সুষ্ঠু নির্বাচনকে ঘিরে শঙ্কা। এছাড়াও প্রার্থীদের কাছে শেষ মুহূর্তে নানা রকম প্রতিশ্রুতি নিয়ে এদিন প্রচারণা কাজে ইতি টানেন মেয়র-কাউন্সিলর-সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদের প্রার্থীরা। প্রচারণার শেষ দিকে নগরজুড়ে জোরদার করা হয় নিরাপত্তা ব্যবস্থাও।

বিজ্ঞাপন

গতকাল সোমবার (১৩ জুন) প্রচারণার শেষদিনের প্রথমভাগে কুসিক নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী আরফানুল হক রিফাত নিজ নির্বাচনী কার্যালয়ে অবস্থান করেন। কুসিক নির্বাচনে সাবেক মেয়র মনিরুল হক সাক্কু সারা শহরে কালোটাকা ছড়াচ্ছেন বলে অভিযোগ তুলেন নৌকা মার্কা প্রতীক বরাদ্দ পাওয়া আরফানুল হক রিফাত।

সাক্কুর বিরুদ্ধে ‘কালো টাকা’ ছড়ানোর অভিযোগ রিফাতের
কুমিল্লার মানুষ শান্তিপ্রিয় উল্লেখ করে আরফানুল হক রিফাত বলেন, ‘ভোটের দিন কুমিল্লার ভোটকেন্দ্রগুলোর পরিবেশ শান্ত থাকবে। কিন্তু সেদিন যদি কেউ ভোটকেন্দ্রে বা এর আশেপাশে কালোটাকার ছড়াছড়ি করতে যায় জনতা তাদের প্রতিহত করবে। এর দায়দায়িত্ব আমি নিতে পারবো না। আমার প্রতিপক্ষ প্রার্থী সারা শহরেই কালোটাকা ছড়াচ্ছে। এমনকি আমি এমনও অভিযোগ পেয়েছি, আমার দলের কর্মীদের টাকা অফার করা হচ্ছে। মূলত মেয়র থাকার সময় দুর্নীতির মাধ্যমে অবৈধ আয়ের টাকাই এখন ছড়ানো হচ্ছে ভোটারদের মাঝে।’

বিজ্ঞাপন

তবে এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের কাছে অভিযোগ না করার কথাও জানান আরফানুল হক রিফাত। তিনি বলেন, ‘সেখানে না করলেও আমি জনতার কাছে অভিযোগ করেছি। আমি কেন নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ করবো? যারা আমাদের এলাকার সংসদ সদস্যকে এলাকা ছাড়তে বলছেন বারবার। সেখানে অভিযোগ করে কোনো লাভ নাই। আমাদের এমপি কী আমার কোনো নির্বাচনী প্রচারণার কাজে ছিলেন? তিনি কি আমার কোনো নির্বাচনী সভায় গিয়েছেন? উনি আমার পথসভায় কিংবা উঠান বৈঠক কোথাও অংশ নিয়েছেন? উনি কি আমার সাথে দাঁড়িয়েছেন কোনোদিন? একজন প্রার্থী অভিযোগ করলো আর সঙ্গে সঙ্গে একটা চিঠি পাঠিয়ে দিলেন।’


তিনি আরও বলেন, ‘আসি আসলে একজন দুর্ভাগা লোক। আমার এমপি, যার ছত্রছায়ায় আমি এতবছর রাজনীতি করে আজকের এই জায়গায় এসেছি, উনি আমার পাশে নেই। আমাকে কোনোরকম সাহায্য করতে পারছেন না। উল্টো আবার আমাদেরই ব্লেইম দেওয়া হচ্ছে আমরা নির্বাচনে প্রভাব বিস্তার করছি। ভোটের দিন জনগণ এই প্রশ্নের জবাব দিবে। কুমিল্লার জনগণ আমার শক্তি, আর জনগণের শক্তি বাহার ভাই।’

এদিন বিকেলে তিনি বিভিন্ন এলাকায় গণসংযোগ করেন ও দুর্নীতিমুক্ত কুমিল্লা গড়ে তোলার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভোটারদের কাছে নৌকা মার্কায় ভোট দেওয়ার আহ্বান জানান।

‘কালো টাকা’ নিয়ে পাল্টা অভিযোগ সাক্কুর
এ দিন সকাল ও বিকেলে দুই মেয়র প্রার্থী প্রচারণা চালালেও কার্যত সারাদিন ঘরেই ছিলেন স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী মনিরুল হক সাক্কু। এদিন তিনি নিজের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীদের সঙ্গে দেখা করেন।

পরে গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে আলোচনায় নির্বাচনে সুষ্ঠু ভোটগ্রহণ নিয়ে আশঙ্কার কথা প্রকাশ করেন মনিরুল হক সাক্কু। একইসঙ্গে তিনি নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আরফানুল হক রিফাতের অভিযোগের উত্তরও দেন।

সাক্কু বলেন, ‘নৌকা প্রতীকের প্রার্থী শুরু থেকেই আমার বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তুলে আসছেন। একবার বলছেন আমি দুর্নীতি করেছি। এখন বলছেন টাকা ছিটাচ্ছি। তার কাছে কি কোনো প্রমাণ আছে? প্রমাণ ছাড়া কথা বলে লাভ নাই, আমি টাকা ছড়াই নাই। আমি মিথ্যা কথার মানুষ না, মিথ্যা বলি না। তারাই নানাভাবে মিথ্য প্রপাগণ্ডা ছড়ায়।’

তিনি বলেন, ‘প্রমাণ না থাকায় কালো টাকা ছড়ানোর অভিযোগ ভিত্তিহীন। যারা অভিযোগ করছেন তারাই বরং কালো টাকার ব্যবহার করছেন। মানুষ আমাকে এমনিতেই ভালোবাসেন, আমাকে তাদের টাকা দিতে হয় না। আমার প্রতিপক্ষ টাকা নিয়ে ভোটারদের কাছে যাচ্ছেন, এমন খবর আমার কাছে আছে।’


তিনি আরও বলেন, ‘এখন যেই পরিস্থিতি, সেই পরিস্থিতিতে সুষ্ঠু নির্বাচন কিভাবে আশা করি। সংসদ সদস্য বাহাউদ্দিন বাহার (আ ক ম বাহাউদ্দিন) এখনও এলাকায় আছেন। সিইসি (প্রধান নির্বাচন কমিশনার) বললো, নিরুপায়। সিইসি যেখানে নিরুপায় সেখানে আমি কেমনে আশাবাদী হই। উনি (সিইসি) একটা সংস্থার প্রধান, এটা সাংবিধানিক পোস্ট। উনি অসহায় হয়ে গেলে আমরা সাধারণ মানুষ আর কি করবো?’

দ্বিগুণ ভোটে জয়লাভ করার আশাবাদ জানিয়ে সাক্কু বলেন, ‘ইতোমধ্যে আমি ২৭টি ওয়ার্ডে গণসংযোগ সম্পন্ন করেছি। আজকে শেষ দিনে আমি আমি আমার কেন্দ্র কমিটির লোকজনের সঙ্গে কথা বলছি, বিভিন্ন দিক নির্দেশনা দিচ্ছি। আশা করি সুষ্ঠু নির্বাচন হলে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর চেয়ে দ্বিগুণ ভোটে জয়লাভ করবো।’

বহিরাগতদের মহড়া বন্ধের দাবি কায়সারের
নির্বাচনী প্রচারণার শেষ দিনে সকাল ১১টার দিকে কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ জানান ঘোড়া মার্কা প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী নিজাম উদ্দিন কায়সার। অভিযোগে তিনি নির্বাচনী এলাকায় বহিরাগতদের আগমন, সন্ত্রাসীদের মহড়া ও ইভিএম নিয়ে শংকা প্রকাশ করেন।

লিখিত অভিযোগে নিজাম উদ্দিন কায়সার উল্লেখ করেন, প্রচারণার শেষ মুহূর্তে এসে লক্ষ্য করছি নির্বাচনী এলাকায় বহিরাগতদের আনাগোনা বেড়েছে। বিভিন্ন হত্যা মামলার আসামীরাও প্রকাশ্যে এসেছে। অলি-গলিতে ক্যাডাররা মহড়া দিচ্ছে। ফলে সাধারণ ভোটারদের মাঝে ভয় ও শংকা সৃষ্টি হয়েছে। প্রতি কেন্দ্রের চূড়ান্ত ফলাফলের লিখিত বিবরণীর সঙ্গে মাস্টার ইভিএমের প্রিন্ট কপি সংযুক্ত করে এজেন্টকে সরবরাহের দাবি জানান তিনি।

অভিযোগ দেওয়ার পর কায়সার সাংবাদিকদের বলেন, ইভিএম নিয়ে জনমনে ব্যাপক সন্দেহ থাকা সত্ত্বেও আমরা সিইসির আশ্বাসের প্রেক্ষিতে নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহন করি। আমি দাবি করেছিলাম প্রতি কেন্দ্রের চূড়ান্ত ফলাফলের লিখিত বিবরণীর সঙ্গে মাস্টার ইভিএম এর প্রিন্ট কপি (সকল বুথের সম্মিলিত ফলাফলের প্রিন্ট কপি) সংযুক্ত আকারে প্রার্থীর পোলিং এজেন্টকে সরবরাহ করার জন্য। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া না হলে জনমনে শংকা থেকেই যাবে।

পরবর্তীতে বিকেলের দিকে কায়সার বিভিন্ন স্থানে গণসংযোগ ও উঠান বৈঠক করে নিজের নির্বাচনী প্রচারণা শেষ করেন।

কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের নির্বাচনকে সামনে রেখে এদিন সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত নগরীর ১০৫টি ভোট কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত হয় মক ভোটিং। নির্দিষ্ট ওয়ার্ডের স্ব স্ব কেন্দ্রে গিয়ে ভোটাররা দেখে আসেন ইভিএম ভোটিং পদ্ধতি। তবে সংখ্যায় ভোটারদের তেমন উপস্থিতি দেখা যায়নি কেন্দ্রগুলোতে।

কুসিক নির্বাচনে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন পাঁচজন প্রার্থী। এছাড়াও কাউন্সিলর পদে ১০৮ জন এবং সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে ৩৬ প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

উল্লেখ্য, নির্বাচন কমিশনের তফসিল অনুযায়ী কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে ১৫ জুন। এবার কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের ২৭টি ওয়ার্ডের ১০৫টি কেন্দ্রে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোট নেওয়া হবে। এই সিটি করপোরেশনে মোট ভোটার দুই লাখ ২৯ হাজার ৯২০। এর মধ্যে নারী ভোটার এক লাখ ১৭ হাজার ৯২, পুরুষ ভোটার এক লাখ ১২ হাজার ৮২৬।

কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের এটি তৃতীয় নির্বাচন। এর আগে দুই নির্বাচনেই মেয়র পদে ভোটে নির্বাচিত হন মনিরুল হক সাক্কু। প্রথমবার স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে এবং দ্বিতীয়বার ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে বিএনপি প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন তিনি।

সারাবাংলা/এসবি/এমও

কালো টাকা কুসিকের প্রচারণা পাল্টাপাল্টি অভিযোগ

বিজ্ঞাপন

খুলনায় যুবকের পেটে মিলল ইয়াবা
২২ নভেম্বর ২০২৪ ১২:০২

আরো

সম্পর্কিত খবর