লিফট অত্যাবশ্যক, শুল্ক না বাড়ানোর দাবি বেলিয়া’র
১৪ জুন ২০২২ ১৫:৩৭
ঢাকা: লিফটকে অত্যাবশ্যক ‘ক্যাপিটাল মেশিনারি ক্যাটাগরিতে’ রেখে আগের ১১ শতাংশ শুল্কহার বহাল রাখার দাবি জানিয়েছে লিফট আমদানিকারদের সংগঠন বাংলাদেশ এলিভেটর অ্যাকসেলারেটরস অ্যান্ড লিফট ইম্পোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বেলিয়া)।
মঙ্গলবার (১৪ জুন) রাজধানীর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) প্রস্তাবিত বাজেটে লিফটের ওপর আরোপিত অতিরিক্ত আমদানি শুল্ক বৃদ্ধির প্রতিবাদে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটির পক্ষে এ দাবি জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মো. শফিউল আলম উজ্জ্বল। সংগঠনের সহ-সভাপতি আক্তার জামিল ভূঁইয়ার সঞ্চালনায় সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন সংগঠনের সভাপতি এমদাদ উর রহমান। এসময় সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
বেলিয়া’র পক্ষে জানানো হয়, প্রস্তাবিত ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটে লিফট আমদানিতে অতিরিক্ত ৫ শতাংশ আমদানি শুল্ক আরোপের প্রস্তাব করা হয়েছে। আগে লিফট ক্যাপিটাল মেশিনারিজ ক্যাটাগরির অন্তর্ভূক্ত ছিলো। এক্ষেত্রে লিফটের ক্ষেত্রে ১১ শতাংশ শুল্ক (১ শতাংশ আমদানি শুল্ক, ৫ শতাংশ অগ্রিম আয়কর ও ৫ শতাংশ অগ্রিম কর) ছিলো। তবে প্রস্তাবিত বাজেটে লিফটকে ক্যাপিটাল মেশিনারিজ ক্যাটাগরি থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। সেক্ষেত্রে পূর্বের ১১ শতাংশ করসহ ৫ শতাংশ আমদানি শুল্ক ও ১৫ শতাংশ ভ্যাট দিতে হবে। এতে খাতটিতে ৩১ শতাংশ শুল্ক বিদ্যমান। এর ফলে আমদাকিৃত লিফটের দাম ২০ শতাংশ বেড়ে যাবে। বন্ধ হয়ে যেতে পারে লিফট আমাদনিকারক বহু প্রতিষ্ঠান, ক্ষতিগ্রস্ত হবেন ভোক্তারা।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে সংগঠনের নেতারা জানান, স্থানীয় শিল্প রক্ষার নামে আমদানি শুল্ক বাড়ানো হলেও বাজারে তাদের শেয়ার ৫ শতাংশ। পুরোপুরিভাবে দেশে লিফট উৎপাদনকারী কোনো প্রতিষ্ঠানও গড়ে উঠেনি। বছরে দেশে ৪ থেকে ৫ হাজার লিফট আমদানি হয়। ২০২০ সালে ৮০০ কোটি টাকার লিফট আমদানি হয়েছে। আর ২০২১ সালে আমদানি হয়েছে ৯০০ কোটি টাকার লিফট। মূলত ছোট লিফটে চাহিদা বেশি হওয়ায় আমদানিকারকরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। ৮-১০ জনের লিফটের গড় মূল্য ১৮ থেকে ৪০ লাখ টাকা। আমদানি শুল্ক বাড়ানোয় এসব লিফটের দাম ২৫ শতাংশ পর্যন্ত বাড়বে।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মো. শফিউল আলম উজ্জ্বল বলেন, ‘হঠাৎ করেই ২০২২-২০২৩ অর্থ বছরে বাজেটে স্থানীয় শিল্পকে সুরক্ষা দেওয়ার প্রত্যয়ে আমদানি পর্যায়ে বিদ্যমান শুল্ক ১১ শতাংশ থেকে বৃদ্ধি করে ৩১ শতাংশ করা আত্মঘাতী হবে বলে প্রতীয়মান হচ্ছে। আমদানি পর্যায়ে ৩১ শতাংশ কর আরোপের কারণে আমদানি করা লিফটের মূল্য অনেক বেড়ে যাবে এবং বাজারে অসম প্রতিযোগিতা বহুলাংশে বৃদ্ধি পাবে। ফলে আমদানি কমে যাবে এবং সরকারের রাজস্ব আয়ও কমে যাবে।’
সংগঠনটির দাবি, নীতিমালা তৈরি ও নিয়ন্ত্রক সংস্থা প্রনয়ণের আগে পর্যন্ত লিফটকে অত্যাবশ্যক ক্যাপিটাল মেশিনারি ক্যাটাগরিতে রাখা এবং পূর্বের শূল্ক হার ১১ শতাংশ (১ শতাংশ আমদানি শুল্ক, ৫ শতাংশ অগ্রিম আয়কর ও ৫ শতাংশ অগ্রিম কর) বহাল রাখা।
বেলিয়া’র সভাপতি এমদাদ উর রহমান বলেন, ‘লিফট আমদানি নির্ভর পণ্য। যারা আমদানি করে তাদের এখানে এনে সংস্থাপন করতে হয়। ১ বছরের সার্ভিস দিতে হয়। পরবর্তীতে রক্ষণাবেক্ষণ করতে হয়। এই শিল্পের বয়স ৫০ বছর। এটিকে কেবলমাত্র আমদানি নির্ভর পণ্য হিসাবে দেখলে চলবে না। পৃথিবীর সব দেশেই লিফট প্রস্তুতকারীদের জন্য নীতিমালা রয়েছে। আমাদের দেশেও নীতিমালা প্রয়োজন।’
বেলিয়া’র সভাপতি আরও বলেন, ‘হঠাৎ করে স্থানীয় শিল্পকে রক্ষার জন্য শুল্ক বাড়িয়ে দিলে বাজারে অসম প্রতিযোগিতা সৃষ্টি হবে। একাধিক লিফট আমদানিকার প্রতিষ্ঠান যদি বন্ধ হয়ে যায়, দেউলিয়া হয়ে যায়, যারা বিভিন্ন ভবনে লিফট সরবরাহ করেছে, সেইসব ভবনের মানুষের নিরাপত্তা কে দেখবে? লিফটের রক্ষণাবেক্ষণ কে করবে? আমদানি পণ্য হলেও এটি অত্যাবশ্যক, এই রকম পণ্যকে কেবলমাত্র আমদানি নির্ভর পণ্য হিসাবে দেখলেই হবেনা। সরকার অবশ্যই শুল্ক না বাড়িয়ে আগের মতো শুল্ক বহাল রাখবে, এটিই আমাদের দাবি।’
বেলিয়ার সাধারণ সম্পাদক শফিউল আলম উজ্জ্বল বলেন, ‘আমরা উদ্বিগ্ন। এই শিল্প মুখ থুবড়ে পড়বে। আগে আমরা ১১ শতাংশ শুল্ক দিতাম। ৫ শতাংশ শুল্ক বাড়ানোয় এবং ক্যাপিট্যাল মেশিনারিজ থেকে বাদ দেওয়ায় এখন ৩১ শতাংশ করভার বহন করতে হবে। অর্ডার পাওয়ার পর ইউরোপসহ বিভিন্ন দেশ থেকে লিফট আনতে ৬ থেকে ৮ মাস লাগে। অনেক আগে অর্ডার নেওয়া হয়। শুল্ক বাড়ানো হলে এখন আমাদের অতিরিক্ত ২০ শতাংশ অর্থ দিতে হবে। এতে আমাদের প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ হওয়ার উপক্রম হবে।’
সংগঠনটির প্রস্তাবনাগুলো হলো— লিফট প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানের জন্য নীতিমালা প্রণয়ন। আন্তর্জাতিক স্ট্যান্ডার্ডের আলোকে বাংলাদেশ লিফট স্ট্যান্ডার্ড প্রণয়ন। নিয়ন্ত্রক সংস্থা তৈরি এবং প্রয়োজনীয় সক্ষমতা অর্জন। লিফট প্রস্তুত শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার জন্য সহজ শর্তে জায়গার ব্যাবস্থা করা। লিফট প্রস্তুত শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার জন্য সহজ শর্তে মূলধনের ব্যবস্থা করা। এসব প্রস্তুতিমূলক কাজ সম্পাদন করার পর লিফট প্রস্তুত শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ার জন্য নূন্যতম ৩ বছর সময় বেধে দেওয়ার কথাও বলছে সংগঠনটি।
বাজেট পূর্ববর্তী সময়ে খোলা ঋণপত্র এবং এইসব কার্যক্রম সম্পাদন করার পূর্ব পর্যন্ত লিফটকে অত্যাবশ্যক ক্যাপিটাল মেশিনারি ক্যাটাগরিতে রাখা এবং পূর্বের শুল্ক হার ১১ শতাংশ বহাল রেখে বর্তমান সরকারের উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে পারবে বলেও আশা প্রকাশ করা হয়।
সারাবাংলা/ইএইচটি/এমও
এলিভেটর অ্যাকসেলারেটরস অ্যান্ড লিফট ইম্পোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন বেলিয়া লিফট শুল্ক শুল্ক না বাড়ানোর দাবি