সমাজসেবা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলা
১৪ জুন ২০২২ ১৭:২১
বরিশাল: ভোলা সদর উপজেলা সমাজসেবা অফিসার মো. দেলোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছেন এক নারী। তার অভিযোগ, স্বামী-স্ত্রীর পরিচয়ে ১০ বছর সংসার করলেও দেলোয়ার তাকে বিয়ে করেননি। যে তিনটি স্থানে স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে তারা বসবাস করেছেন, তার স্বাক্ষী রয়েছে বলেও জানান তিনি।
মঙ্গলবার (১৪ জুন) দুপুরে বরিশাল রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (বিআরইউ) এক সংবাদ সম্মেলনে এসব অভিযোগের কথা তুলে ধরেন ওই ভুক্তভোগী নালী।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে ভুক্তভোগী জানান, ২০১০ সালের মাঝামাঝি সময় তিনি ঝালকাঠি সমাজসেবা অফিসে ছয় মাস মেয়াদি কম্পিউটার প্রশিক্ষণের জন্য ভর্তি হন। সমাজসেবা অফিসে আসা-যাওয়ার সময় ঝালকাঠি সমাজসেবা কর্মকর্তা মো. দেলোয়ার হোসেনের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। এক পর্যায়ের তাদের মধ্যে প্রেম হয়। তবে তাকে পরিবার থেকে অন্য এক জনের সঙ্গে জোর করে বিয়ে দেয়।
ওই নারী বলেন, বিয়ের পরও তাকে ফোন দিতেন। তিনি যোগাযোগ করতে নিষেধ করলেও দেলোয়ার শোনেননি। তাদের মধ্যে ফোনে যোগাযোগের বিষয়টি জানাজানি হলে স্বামীর সঙ্গে তার বিচ্ছেদ হয়ে যায়। এসময় দেলোয়ার তাকে বিয়ে করার আশ্বাস দিলে তিনি পরিবার ছেড়ে তার কাছে চলে যান। ওই সময় থেকে তিনি ভোলা সদর উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা পদে কর্মরত রয়েছেন।
ভুক্তভোগী নারী বলেন, পরিবার ছেড়ে দেলোয়ারের কাছে গেলে বরিশালে স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে বাসা ভাড়া নেন তারা। প্রথমে নগরীর নথুল্লাবাদ ভাড়ার বাসায় বসবাস করতে শুরু করেন। পরে নগরীর ১৪ নম্বর ওয়ার্ড মীরা বাড়িরপুল সংলগ্ন এলাকার একটি বসতঘরে এবং এরপর একই এলাকায় আরেকটি ভাড়া বাসায় তারা বসবাস শুরু করে। এখনো সেখানেই অবস্থান করছেন।
ওই নারীর ভাষ্য, দেলোয়ার ভোলা থেকে প্রতি বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় আসেন বরিশাল। রোববার সকালে চলে যান। সরকারি ছুটির দিনগুলোতেও তিনি নিয়মিত আসতেন বরিশাল। মাঝেমধ্যে গ্রামের বাড়িও চলে যেতেন। ১০ বছর ধরে সংসার করার বিষয়টি জানেন তাদের ভাড়া বাসার এলাকার স্থানীয় বাসিন্দারা। এর মধ্যে দুই বার গর্ভধারণ করলেও গর্ভপাত করিয়েছেন তিনি।
ওই নারী আরও বলেন, শুরু থেকেই আমি বিয়ের কথা বলে আসছি। গত ফেব্রুয়ারিতে আবার তাকে একই কথা বলি। ধর্মীয় ও সামাজিকভাবে স্ত্রীর স্বীকৃতি না দিলে আর শারীরিক সম্পর্ক করব না বলে জানাই। এ কথা বলার সঙ্গে সঙ্গেই আমাকে ধর্ষণ করেন তিনি। এরপর থেকে আর তিনি আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেননি। এখানকার ভাড়া বাসাতেও তিনি আর আসেননি। ভোলায় একাধিকবার গিয়েও তাকে ফিরিয়ে আনতে পারিনি। বাধ্য হয়ে গত ১১ মে দেলোয়ার হোসেনকে আসামি করে বরিশাল কোতয়ালি মডেল থানায় ধর্ষণ মামলা দায়ের করেছি।
দীর্ঘ দিন ধরে সংসার করা এবং ধর্ষণের অভিযোগ অস্বীকার করেন ভোলা সদর উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মো. দেলোয়ার হোসেন। তিনি বলছেন, ওই নারীকে তিনি ব্যক্তিগতভাবে চেনেন। মাঝে মাঝে তার ঘরেও তিনি গিয়েছেন বলে স্বীকার করেছেন। তবে তাদের মধ্যে আর কোনো সম্পর্ক ছিল না। দেলোয়ার বলেন, পরিচয়ের সুবাদে একসঙ্গে ছবিও হয়তো থাকতে পারে। কিন্তু ওই নারী যা বলেছেন, তা সত্য নয়।
ভোলা সমাজসেবা অধিদফতরের উপপরিচালক মো. নজরুল ইসলাম বলেন, অভিযোগ পেয়েছি। লোকমুখে ঘটনা শুনেছিও। অভিযোগকারীও আমার কাছে এসেছিলেন। লিখিত অভিযোগ পেলে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আজিমুল করিম বলেন, ভোলা সদর উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মো. দেলোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে এক তরুণী ধর্ষণের অভিযোগে মামলা করেছেন। মামলাটির তদন্ত চলছে। তদন্ত শেষে অভিযোগপত্র দেওয়া হবে।
সারাবাংলা/টিআর