৪ দিনের ব্যবধানে শনাক্তের সংখ্যা দ্বিগুণেরও বেশি
১৫ জুন ২০২২ ১৭:৩৪
ঢাকা: চারদিনের ব্যবধানে দেশে নভেল করোনাভাইরাসে সংক্রমিত নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছেন দ্বিগুণের বেশি। গত ১২ জুন করোনাভাইরাসে সংক্রমিতদের মধ্যে শনাক্ত হয়েছিলেন ১০৯ জন, এর পরদিন ১২৮ জন, ১৪ জুন ১৬৩ জন ও ১৫ জুন ২৩২ জন শনাক্ত হওয়ার খবর জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। ফলে টানা চারদিন করোনাভাইরাসে সংক্রমণের হার ঊর্ধ্বমুখী অবস্থায় রয়েছে। ১২ জুন শনাক্তের তুলনায় ১৫ জুন শতকরা হিসেবে শনাক্ত হয়েছেন ১১২ শতাংশ বেশি রোগী।
এর আগে, গত ১৭ মার্চ করোনায় শনাক্ত হয়েছিলেন ২৩৩ জন রোগী। এর ফলে ৮৯ দিন পর করোনায় শনাক্তের সংখ্যা দুইশ পার হলো।
সংক্রমণ বাড়লেও অবশ্য গত ২৪ ঘণ্টায় করোনাভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ে কেউ মারা যাননি। ফলে টানা ১৫ দিনের মতো করোনায় মৃত্যুশূন্য দিন কেটেছে। তবে নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে সংক্রমণের হারও আগের দিনের তুলনায় বেড়েছে।
বুধবার (১৫ জুন) স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবীরের সই করা করোনাভাইরাস সংক্রান্ত নিয়মিত বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
নমুনা সংগ্রহ ও পরীক্ষা
বিজ্ঞপ্তির তথ্য বলছে— গত ২৪ ঘণ্টায় সারাদেশে ৮৭৯টি ল্যাবে করোনাভাইরাসের নমুনা পরীক্ষা হয়েছে। এর মধ্যে আরটি-পিসিআর ল্যাব ১৬০টি, জিন এক্সপার্ট ল্যাব ৫৭টি, র্যাপিড অ্যান্টিজেন ল্যাব ৬৬২টি। মোট ল্যাবের মধ্যে সরকারি ৫৪৫টি ও বেসরকারি ১১৭টি।
এসব ল্যাবে গত ২৪ ঘণ্টায় ৫ হাজার ৯৮৮টি নমুনা সংগ্রহ করা হয়। এর মধ্যে নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে ৫ হাজার ৯৮৬টি। এ নিয়ে এখন পর্যন্ত সরকারি ব্যবস্থাপনায় ৯৩ লাখ ৫৭ হাজার ৬৮৯টি ও বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ৪৮ লাখ ৪১ হাজার ৩১১টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। সব মিলিয়ে মোট নমুনা পরীক্ষার সংখ্যা ১ কোটি ৪১ লাখ ৯৯ হাজার।
সংক্রমণ ও শনাক্ত
গত ২৪ ঘণ্টায় পরীক্ষা করা নমুনার ২৩২টিতে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। এ নিয়ে দেশে ১৯ লাখ ৫৪ হাজার ৬৩৭ জনের শরীরে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শনাক্ত হলো। ২৪ ঘণ্টায় নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে সংক্রমণ শনাক্তের হার ৩ দশমকি ৮৮ শতাংশ। এই হার আগের দিন ছিল ৩ দশমিক ৫৬ শতাংশ। আর এখন পর্যন্ত মোট নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে সংক্রমণ শনাক্তের হার ১৩ দশমিক ৭৭ শতাংশ।
সুস্থতার সংখ্যা
আগের দিন করোনা সংক্রমণ থেকে সুস্থ হয়েছিলেন ৭৯ জন। এ নিয়ে এখন পর্যন্ত করোনামুক্ত হয়েছেন ১৯ লাখ ৫ হাজার ৫০৪ জন। সংক্রমণ শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ৯৭ দশমিক ৪৯ শতাংশ।
১৫ দিন মৃত্যুশূন্য
এর আগে, গত ৩০ মে সবশেষ করোনা সংক্রমণ নিয়ে একজনের মৃত্যুর পর আর কেউ করোনা সংক্রমণ নিয়ে মারা যাননি। ফলে করোনায় মোট মৃত্যু ২৯ হাজার ১৩১ জনে স্থির রয়েছে। এ পর্যন্ত করোনায় মারা যাওয়াদের মধ্যে পুরুষ ১৮ হাজার ৫৯৭ জন, নারী ১০ হাজার ৫৩৪ জন।
সংক্রমণের হার ঊর্ধ্বমুখী
এ বছরের শুরু থেকেই করোনাভাইরাস সংক্রমণের চিত্র ছিল নিম্নমুখী। দৈনিক সংক্রমণ এর মধ্যে এক অঙ্কেও নেমে এসেছিল। তবে গত কয়েকদিন ধরে ফের করোনা সংক্রমণে ঊর্ধ্বগতি দেখা যাচ্ছে।
বিজ্ঞপ্তির তথ্য বলছে— গত ১৬ মে থেকে ২২ মে পর্যন্ত এ বছরের এপিডেমিওলজিক্যাল ২০তম সপ্তাহে দেশে ৩৩ হাজার ৯২১টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছিল। এর মধ্যে সংক্রমণ শনাক্ত হয় ২২১টি নমুনায়। এ সপ্তাহে নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে সংক্রমণ শনাক্তের হার ছিল শূন্য দশমিক ৬৫ শতাংশ।
২৩ মে থেকে ২৯ মে পর্যন্ত এ বছরের এপিডেমিওলজিক্যাল ২১তম সপ্তাহে দেশে ৩০ হাজার ২২৬টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছিল। এর মধ্যে সংক্রমণ শনাক্ত হয় ২১৪টি নমুনায়। এ সপ্তাহে সংক্রমণ কমলেও নমুনা পরীক্ষা হয়েছিল তুলনামূলকভাবে বেশি কম। ফলে নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে সংক্রমণ শনাক্তের হার কিছুটা বেড়ে দাঁড়ায় শূন্য দশমিক ৭১ শতাংশে।
এরপর এ বছরের এপিডেমিওলজিক্যাল ২২তম সপ্তাহ তথা ৩০ মে থেকে ৫ জুন পর্যন্ত সময়ে দেশে নমুনা পরীক্ষা হয় ৩৩ হাজার ৪৯৫টি। সংক্রমণ শনাক্তের পরিমাণ আরও কমে যায় এ সপ্তাহে। ২১০টি নমুনায় পাওয়া যায় করোনা সংক্রমণ। নমুনা পরীক্ষা বাড়লেও সংক্রমণ কমে আসায় এ সপ্তাহে নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে সংক্রমণ শনাক্তের হার আগের দুই সপ্তাহের তুলনায় কমে শূন্য দশমিক ৬২ শতাংশে নেমে আসে।
তবে সবশেষ এ বছরের ২৩তম এপিডেমিওলজিক্যাল সপ্তাহ তথা ৬ জুন থেকে ১২ জুন পর্যন্ত সময়ে সংক্রমণের চিত্র ছিল ব্যাপক ঊর্ধ্বমুখী। এ সপ্তাহে দেশে নমুনা পরীক্ষা হয় ৩৫ হাজার ৩৭৭টি। এর মধ্যে সংক্রমণ শনাক্ত হয় ৪৫৮টি নমুনায়। আগের সপ্তাহের তুলনায় এ সপ্তাহে নমুনা পরীক্ষা বেশি হয় ১০ দশমিক ৮ শতাংশ। তবে সংক্রমণ শনাক্ত হয় আগের সপ্তাহের দ্বিগুণেরও বেশি। এতে নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে সংক্রমণের হারেও উল্লম্ফন দেখা গেছে। এক লাফে সংক্রমণের এই হারও হয়েছে ১ দশমিক ২৯ শতাংশ, যা আগের তিন সপ্তাহের তুলনাতেও প্রায় দ্বিগুণ।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের কোভিড-১৯ সংক্রান্ত বুলেটিনের তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, গত ২৫ মার্চ দেশে ১০২ জন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছিলেন। এরপর থেকে ১১ জুন পর্যন্ত ৭৮ দিনে আর কখনোই দেশে একদিনে শতাধিক মানুষের শরীরে করোনা সংক্রমণ শনাক্ত হয়নি। এর মধ্যে গত ৫ মে একদিনে সর্বনিম্ন ৪ জন পর্যন্ত সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছিল।
ওই ২৫ মার্চের ৭৮ দিন পর গত ১২ জুন দেশে ১০৯ জনের শরীরে করোনা সংক্রমণ শনাক্ত হয়। পরদিনই দৈনিক সংক্রমণ ১২৮ জনে পৌঁছে যায়। আর সবশেষ গত ২৪ ঘণ্টায় সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে ২৩২ জনের শরীরে।
সারাবাংলা/টিআর/একে