ঢাকায় ৮৫ কিলোমিটার চক্রাকার সড়ক হবে: প্রধানমন্ত্রী
১৫ জুন ২০২২ ২২:২৭
ঢাকা: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, রাজধানীর যানজট নিরসনে মোট ৮৫ কি মি দীর্ঘ ইনার সার্কুলার (চক্রাকার) সড়ক তৈরির পরিকল্পনা করা হয়েছে।
বুধবার (১৫ জুন) লক্ষ্মীপুর-২ নুর উদ্দিন চৌধুরী নয়নের এক প্রশ্নের জবাবে প্রধান মন্ত্রী এ তথ্য জানান সংসদে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ডেমরা থেকে উত্তর-পূর্ব দিকে বেড়াইদ-পূর্বাচল-তেরমুখ হয়ে আব্দুল্লাপুর পর্যন্ত প্রায় ২৫ কি মি দীর্ঘ ইস্টার্ন বাইপাস হিসাবে পরিচিত। এর পরে ইনার সার্কূলার সড়কের ২য় অংশে প্রায় ৬০ কি মি দীর্ঘ যা আব্দুল্লাহপুর হতে দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে ধউর-বিরুলিয়া-গাবতলী- সোয়ারিঘাট-বাবুবাজার-কদমতলী-তেঘরিয়া- পোস্তগোলা-চাষাড়া-শিমরাইল হয়ে ডেমরা পর্যন্ত সড়ক ৩ ধাপে নির্মানের কাজ বাস্তবায়িত হচ্ছে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘বর্তমান সরকার রূপকল্প ২০২১, টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট ২০৩০ এবং রূপকল্প ২০৪১ অর্জনের মাধ্যমে উন্নত দেশে উপনীত হওয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে। বর্ণিত লক্ষ্য অর্জনের জন্য সরকার ৮ম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা (জুলাই ২০২০-জুন ২০২৪), প্রেক্ষিত রিকল্পনা (২০১০-২০২১), ডেল্টা মহাপরিকল্পনা-২১০০ এবং বাংলাদেশ ২য় প্রেক্ষিত পরিকল্পনা (জুলাই ২০২০- জুন ২০৪১) গ্রহণ করেছে। এ রকম স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনার ভিত্তিতে আওয়ামী লীগ সরকার নির্বাচনী ইশতেহার অনুযায়ী জোরদার কার্যক্রম শুরু করেছে। সার্বিক যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নয়নে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়/বিভাগ সুপরিকল্পিত ও সুসমন্বিত আন্ত:কার্য-কাঠামোভিত্তিক পরিকল্পনা বাস্তবায়নের মাধ্যমে সময়াবদ্ধ লক্ষ্য অর্জনে সচেষ্ট রয়েছে।’
সংসদ নেতা বলেন, ‘রাজধানী ঢাকা’র যানজট নিরসনে একইসাথে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়/বিভাগ সমন্বিত পরিকল্পনার আওতায় স্ব স্ব কার্যপরিধি অনুযায়ী কাজ করে যাচ্ছে। এ বিষয়ে ঢাকার চারপাশে চক্রাকার উড়াল সড়ক তৈরির পরিকল্পনার আওতায় বাস্তবায়িতব্য কার্যক্রমগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো ইনার সার্কুলার সড়ক এবং ৩টি রিং রোড নির্মাণ। এ তিনটি কার্যক্রমের বাস্তবায়ন অগ্রগতি হলো: রাজধানীর যানজট নিরসনে মোট ৮৫ কি. মি. দীর্ঘ ইনার সার্কুলার (চক্রাকার) সড়ক তৈরির পরিকল্পনা রয়েছে। ইনার সার্কুলার সড়কের ১ম অংশ ডেমরা হতে উত্তর-পূর্ব দিকে বেড়াইদ-পূর্বাচল-তেরমুখ হয়ে আব্দুল্লাহপুর পর্যন্ত প্রায় ২৫ কি. মি. দীর্ঘ যা ইস্টার্ন বাইপাস সড়ক হিসেবে পরিচিত। বর্তমানে এই অংশে কোনো সড়ক নেই।’
তিনি বলেন, ‘পরিকল্পনা অনুযায়ী ইস্টার্ন বাইপাসের এলাইনমেন্টে প্রথমে পানি উন্নয়ন বোর্ডের মাধ্যমে ভূমি অধিগ্রহণ এবং বাঁধের কাজ করা হবে, যার উপর সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর কর্তৃক সড়ক তথা পূর্ণাঙ্গ ইস্টার্ন বাইপাস নির্মাণ করা হবে। বর্তমানে পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃক ভূমি উন্নয়ন এবং ফিজিবিলিটি স্টাডি প্রকল্পের কাজ চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে; ইনার সার্কুলার সড়কের ২য় অংশ প্রায় ৬০ কি. মি. দীর্ঘ যা আব্দুল্লাহপুর হতে দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে ধউর বিরুলিয়া গাবতলী সোয়ারিঘাট- বাবুবাজার – কদমতলী • তেঘরিয়া পোস্তগোলা চাষাড়া শিমরাইল হয়ে ডেমরা পর্যন্ত বিস্তৃত। এ ৬০ কি. মি এর মধ্যে মোট ১৩ কি. মি: অংশ ৩টি প্রকল্পের মাধ্যমে বাস্তবায়িত হচ্ছে। এর মধ্যে আব্দুলাপুর হতে খউর পর্যন্ত ৫.৯০ কি.মি অংশ বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ কর্তৃক, চুনুকুটিয়া হতে পোস্তগোলা সেতু পর্যন্ত ৪.১৫ কি. মি অংশ ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা প্রকল্পের আওতায় এবং শিমরাইল হতে ডেমরা পর্যন্ত ৩ কি. মি. অংশ পিপিপি-এর মাধ্যমে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর কর্তৃক বাস্তবায়িত হচ্ছে; ইনার সার্কুলার সড়কের ২য় অংশের বাকি ৪৭ কি. মি সড়ক উন্নয়নের নিমিত্ত সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর এর মাধ্যমে ডিটেইল্ড ডিজাইন ও ফিজিবিলিটি স্টাডি সম্পন্ন হয়েছে।
স্টাডি অনুযায়ী ইনার সার্কুলার সড়কের এই ৪৭ কি. মি অংশ নির্মাণে ভূমি অধিগ্রহণসহ মোট ১২,৪৭৮ কোটি টাকার প্রয়োজন হতে পারে। এ লক্ষ্যে প্রণীত পিডিপিপি অনুমোদনের প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। Asian Infrastructure Investment Bank (AIIB) এ প্রকল্পে অর্থায়নের জন্য প্রাথমিকভাবে সম্মত হয়েছে। বৈদেশিক অর্থায়ন নিশ্চিত হওয়ার পূর্বেই অধিক গুরুত্বপূর্ণ অংশসমূহ জিওবি অর্থায়নে বাস্তবায়নের পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিশেষত ধউর-গাবতলী অংশের ১৪ কি. মি এবং পোস্তগোলা-চাষাড়া অংশের প্রায় ১১ কি:মি: সহ সর্বমোট ২৫ কি:মি: সড়ক ইনার চক্রাকার সড়ক হিসেবে উন্নয়নের লক্ষ্যে ডিপিপি প্রণয়নের কাজ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।’
এ ছাড়া ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) কর্তৃক কৌশলগত পরিবহন পরিকল্পনা সংশোধন ও হালনাগাদ করে Revised Strategic Transport Plan 2015 (২০১৫-২০৩৫ মেয়াদে) প্রণীত হয় এবং গত ২৯ আগষ্ট ২০১৬ তারিখ মন্ত্রিসভা কর্তৃক সংশোধিত Strategic Transport Plan (STP) চূড়ান্ত অনুমোদন লাভ করে। Revised Strategic Transport Plan (RSTP) -এ ৩টি রিং রোড [ইনার, মিডল এবং আউটার] নির্মাণের উল্লেখ রয়েছে ; RSTP- Feasibility Study on Dhaka Outer Ring Road: Eastern, Western & Northern Part ডিটিসিএ কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন রয়েছে। ঢাকা মহানগরী ও পার্শ্ববর্তী জেলাসমূহের শহরের যানজট নিরসনের লক্ষ্যে প্রকল্পটি গ্রহণ করা হয়েছে। এটি ঢাকা নগরীকে বাইপাস করে একটি আঞ্চলিক রুট তৈরি করবে, যা পদ্মা সেতুর লিংক রোড, গাজীপুর, আশুলিয়া এবং সাভারের শিল্প কেন্দ্রগুলি, চট্টগ্রাম ও আর্জাতিক কন্টেইনার বন্দরে সরাসরি রুটকে সংযুক্ত করবে। আউটার রিং রোডটি ঢাকা ও পাশ্ববর্ এলাকা জুড়ে উন্নত যান চলাচলের ব্যবস্থা করার মাধ্যমে দেশজুড়ে উন্নত ব্যবস্থার উন্নয়ন ঘটবে। বর্মানে সমীক্ষার জন্য পরামর্ক নিয়োগের কার্ক্রম চলমান আছে।
সারাবাংলা/এএইচএইচ/একে