Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

এক দশকে অবকাঠামো খাতে আমূল পরিবর্তন হয়েছে: প্রধানমন্ত্রী

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
১৫ জুন ২০২২ ২৩:৩২

ফাইল ছবি: সংসদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

ঢাকা: দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও দারিদ্র্য বিমোচনে অবকাঠামো খাতের গুরুত্ব বিবেচনায় সরকার ভৌত অবকাঠামো খাতে বিশেষ অগ্রাধিকার দিয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জাতীয় সংসদকে তিনি বলেন, বর্তমান সরকারের আমলেই গত এক দশকে অবকাঠামো খাতে দৃশ্যমান হয়েছে আমূল পরিবর্তন। দেশ এখন উন্নয়নের মহাসড়কে ধাবমান। সরকার দেশের উন্নয়নের লক্ষ্যে বিভিন্ন ধরনের মেগা প্রকল্প হাতে নিয়েছে, যেগুলো বর্তমানে বিভিন্ন পর্যায়ে বাস্তবায়নাধীন।

বিজ্ঞাপন

বুধবার (১৫ জুন) জাতীয় সংসদে ময়মনসিংহ-৮ আসনের সংসদ সদস্য ফখরুল ইমামের এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী সংসদে এসব কথা বলেন। স্পিকার ড. শিরীন শারমিনের সভাপতিত্বে সংসদ অধিবেশনের প্রশ্নোত্তর পর্বে প্রশ্ন টেবিলে উত্থাপিত হয়।

এসময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের অগ্রাধিকার পাওয়া বিভিন্ন প্রকল্পের অগ্রগতি জাতীয় সংসদে তুলে ধরেন। তিনি বলেন, পদ্মা বহুমুখী সেতু নির্মাণ প্রকল্পটি ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি ৩৯ লাখ টাকা (সরকারি অর্থায়ন) প্রাক্কলিত ব্যয়ে ২০০৯ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৩ সালের জুন মেয়াদে বাস্তবায়িত হচ্ছে। এ বছরের মে মাস পর্যন্ত প্রকল্পের সার্বিক অগ্রগতি ৯৪ দশমিক ৫০ শতাংশ। মূল সেতুর ভৌত অগ্রগতি ৯৯ শতাংশ এবং জাজিরা-মাওয়া সংযোগ সড়ক ও এরিয়া-২-এর ভৌত অগ্রগতি ১০০ শতাংশ। আগামী ২৫ জুন সেতুটি উদ্বোধন করা হবে।

প্রধানমন্ত্রীর সংসদে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী অন্যান্য মেগা প্রকল্পগুলোর মধ্যে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্পের সার্বিক অগ্রগতি এ বছরের মে পর্যন্ত ৪৬ দশমিক ৪৯ শতাংশ। রামপাল ১৩২০ মেগাওয়াট মৈত্রী সুপার থার্মাল পাওয়ার প্রজেক্টের ভৌত অগ্রগতি ৮১ দশমিক ৭০ শতাংশ এবং আর্থিক অগ্রগতি ৭৮ দশমিক ২৬ শতাংশ। মাতারবাড়ি ১২০০ মেগাওয়াট আল্ট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্পে মে ২০২২ পর্যন্ত ক্রমপুঞ্জিভূত ভৌত অগ্রগতি ৫৯ দশমিক ৭০ শতাংশ, আর্থিক অগ্রগতি ৪৬ দশমিক ৩১ শতাংশ। ঢাকা মাস র‍্যাপিড ট্রানজিট ডেভেলপমেন্ট তথা মেট্রোরেল প্রকল্পে মে পর্যন্ত প্রকল্পের সার্বিক গড় অগ্রগতি ৭৯ দশমিক ৪৯ শতাংশ। পাশাপাশি এমআরটি লাইন-১ প্রকল্পটি ২০২৬ সালের ডিসেম্বর ও এমআরটি লাইন-৫ প্রকল্প ২০২৮ সালের ডিসেম্বর মেয়াদে বাস্তবায়নের কাজ চলছে।

বিজ্ঞাপন

এছাড়া অন্যান্য মেগা প্রকল্পের মধ্যে এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ ও গ্যাস পাইপলাইন স্থাপন প্রকল্পে কক্সবাজারে স্থাপিত দু’টি এফএসআরইউয়ের প্রথমটি ২০১৮ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর ও দ্বিতীয়টি ২০১৯ সালের ২৯ এপ্রিল থেকে জাতীয় গ্রিডে বাণিজ্যিকভাবে গ্যাস (আরএলএনজি) সরবরাহ শুরু করেছে। ২০২২ সালের মে মাসে টার্মিনাল দুইটি থেকে প্রতিদিন ৭০০ এমএমসিএফ হারে গ্যাস জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করা হয়েছে। অন্যদিকে পায়রা গভীর সমুদ্র বন্দর প্রকল্পের ভৌত অগ্রগতি মে মাস পর্যন্ত ৮৫ শতাংশ। পাশাপাশি, পায়রা সমুদ্র বন্দরের প্রথম টার্মিনাল ও আনুষাঙ্গিক সুবিধা নির্মাণ প্রকল্পের ভৌত অগ্রগতি মে পর্যন্ত ২৮ দশমিক ১৪ শতাংশ। পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের ভৌত অগ্রগতি একই সময়ে ৫৮ শতাংশ, আর্থিক অগ্রগতি ৫৯ দশমিক ১৫ শতাংশ। আর দোহাজারী থেকে রামু হয়ে কক্সবাজার ও রামু থেকে মিয়ানমারের কাছে ঘুমধুম পর্যন্ত সিংগেল লাইন ডুয়েল গেজ ট্র্যাক নির্মাণ প্রকল্পের ভৌত অগ্রগতি মে পর্যন্ত ৭১ শতাংশ, আর্থিক অগ্রগতি ৩৬ দশমিক ৬৫ শতাংশ।

এদিকে, পায়রা ১৩২০ মেগাওয়াট তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্পের মাধ্যমে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উৎপাদনে আল্ট্রা সুপারক্রিটিক্যাল প্রযুক্তি ব্যবহারকারী ১৩তম দেশে পরিণত হয়েছে। বিদ্যুৎকেন্দ্রটি গত ২১ মার্চ উদ্বোধন করা হয়েছে। এর বাইরে ভাঙ্গা জংশন (ফরিদপুর) থেকে বরিশাল হয়ে পায়রা বন্দর ও কুয়াকাটা পর্যন্ত ব্রডগেজ (বিজি) রেললাইন নির্মাণ প্রকল্পও সরকার হাতে নিয়েছে। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল, বিশেষ করে মাদারীপুর, বরিশাল, ঝালকাঠি, বরগুনা ও পটুয়াখালী জেলার সঙ্গে এবং পায়রা সমুদ্র বন্দর ও পর্যটন স্পট কুয়াকাটার সঙ্গে রেল যোগাযোগ স্থাপনের লক্ষ্যে হাতে নেওয়া প্রকল্পটি হাতে নেওয়া হয়েছে ২০২৯ সালের মধ্যে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে। আর কক্সবাজার বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করতে প্রথম পর্যায়ের প্রকল্পটি ২০২৩ সালের ডিসেম্বর নাগাদ শেষ হবে।

প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্য দেশে দ্রুত অর্থনৈতিক উন্নয়ন তথা শিল্পায়ন, কর্মসংস্থান, উৎপাদন ও রফতানি বাড়ানো ও বহুমুখীকরণে উৎসাহ দিতে পশ্চাৎপদ ও অনগ্রসর এলাকাসহ সম্ভাবনাময় সব এলাকায় ২০৩০ সালের মধ্যে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনের কথা তুলে ধরেন। দেশের ভূমিহীন, গৃহহীন, ছিন্নমূল ও অসহায় পরিবার পুনর্বাসন ও তাদের আর্থসামাজিক অবস্থার উন্নয়ন করতে আশ্রয়ন-২ প্রকল্প বাস্তবায়নের অগ্রগতি তুলে ধরেন। তিনি আরও তুলে ধরেন কর্ণফুলী নদীর তলদেশে টানেল নির্মাণ প্রকল্পের অগ্রগতি। প্রকল্পটির কাজ এ বছরের ডিসেম্বরে শেষ হবে বলে জানান তিনি। বাংলাদেশ ও ভারতসহ ছয়টি দেশ নিয়ে গঠিত দক্ষিণ এশিয়া উপআঞ্চলিক অর্থনৈতিক সহযোগিতার (সাসেক) আওতায় সড়ক অবকাঠামো তৈরির প্রকল্পের আওতায় ২০২৬ সালের ডিসেম্বর মেয়াদে ঢাকা (কাঁচপুর) থেকে সিলেট পর্যন্ত ২০৯ দশমিক ৩২৮ কিলোমিটার ২-লেন বিশিষ্ট মহাসড়ক (এন-২) চার লেনে উন্নীত করা হবে বলে জানান তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে ব্যাপক কর্মসংস্থান তৈরি হয়েছে এবং প্রকল্পকেন্দ্রিক অনেক ব্যাকওয়ার্ড ও ফরোয়ার্ড লিংকেজের মাধ্যমে প্রকল্পগুলো দেশের অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রাকে ত্বরান্বিত করছে। তাছাড়া, পদ্মা সেতু ও পায়রা গভীর সমুদ্র বন্দর প্রকল্প ছাড়া বাকি প্রকল্পগুলোতে বিদেশি অর্থায়ন থাকায় প্রকল্প সংক্রান্ত আমদানি বায় দেশের বৈদেশিক মুদ্রার ভারসাম্যে বিরূপ প্রভাবও ফেলবে না। দেশের অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সব ক্ষেত্রে উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে প্রয়োজন অনুযায়ী প্রকল্প নেওয়া হচ্ছে। ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে উন্নত দেশে পরিণত করার লক্ষ্যে প্রেক্ষিত পরিকল্পনা অনুযায়ী এসব প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করা হবে।

সারাবাংলা/এএইচএইচ/টিআর

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মেগা প্রকল্প মেগা প্রকল্পের অগ্রগতি সংসদ অধিবেশন

বিজ্ঞাপন

খেজুর আমদানিতে শুল্ক কমলো
২২ নভেম্বর ২০২৪ ২১:০৮

আরো

সম্পর্কিত খবর