৭০ বছর ধরে এলাকার নেতৃত্ব এক পরিবারের হাতেই, জম্পীর টানা ৭ জয়
১৬ জুন ২০২২ ১১:১৪
কুমিল্লা থেকে: না, কোনো ধরনের বিজ্ঞাপনের প্রচারণা নয়— যেখানে নৃত্যশিল্পী ও অভিনেত্রী রওশন জামিল বলেছিলেন, সেই ১৯৫৩ সাল থেকে। সংবাদের শিরোনামটা কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের (কুসিক) ৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পরিবারের দুই সদস্যকে নিয়ে।
১৯৫২ সালে কুমিল্লা পৌরসভার কমিশনার আবদুর রশিদ প্রথমবারের মতো দায়িত্ব পালন শুরু করেন এলাকায়। যা এখন কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের ৯ নম্বর ওয়ার্ড বলে পরিচিত। সেই থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত এই ওয়ার্ডে দায়িত্বে পালন করেছেন একই পরিবারের দুই সদস্য। পূর্ব পাকিস্তান আমলের স্থানীয় সরকার নির্বাচনে এই ওয়ার্ডের সব নির্বাচনেই বিজয়ী প্রার্থী আবদুর রশিদ। একটানা ৩২ বছর এলাকার দায়িত্ব পালন শেষে তিনি মারা যান ১৯৮৫ সালে। এর পর এই ওয়ার্ডের কমিশনার পদে উপ-নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এতে কমিশনার পদে অংশগ্রহণ করেন জমির উদ্দিন খান জম্পী নামে একজন তরুণ সদস্য।
১৯৮৫ সালে ৯ নম্বর ওয়ার্ডের উপ-নির্বাচনে কমিশনার পদে জয়লাভ করেন জমির উদ্দিন খান জম্পী। আর কখনো পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে। এরপর ১৯৮৯, ১৯৯৩, ২০০০, ২০১২ ও ২০১৭ সালের স্থানীয় নির্বাচনেও জয়ী হন জমির উদ্দিন খান জম্পী।
সর্বশেষ গতকাল বুধবার (১৫ জুন) অনুষ্ঠিত কুসিক নির্বাচনে জয় পেয়ে টানা সপ্তমবারের মতো এলাকার কাউন্সিলর হয়েছেন তিনি। চাচা-ভাতিজা মিলে সেই ১৯৫২ সাল থেকেই এলাকার অভিভাবক হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। ফলে ৭০ বছর ধরে এক পরিবার থেকেই কমিশনার ও কাউন্সিলর পদে নির্বাচিত হয়ে আসছে।
গতকাল বুধবার অনুষ্ঠিত কুসিক নির্বাচনে কাউন্সিলর পদে জমির উদ্দিন খান জম্পী এক হাজার ৯৮ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। এবার তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী পেয়েছেন ৬৪৭ ভোট। চার হাজার ৯৮৭ জন ভোটারের এই ওয়ার্ডে এবার মিষ্টি কুমড়া প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করা জমির উদ্দিন জম্পীর বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ছিলেন আরও চারজন। তারা হলেন- ঘুড়ি প্রতীকের কামাল হোসেন, কাঁটাচামচ প্রতীকের মিজানুর রহমান মিলন, ট্রাক্টর প্রতীকের মো. কাউসার ও লাটিম প্রতীকের আশিকুর রহমান। এর মধ্যে কামাল ও মিজানুর আগেও কাউন্সিলর পদে নির্বাচন করলেও জম্পীর বিপক্ষে জিততে পারেনি।
সপ্তমবারের মতো কাউন্সিলর পদে বিজয়ী জমির উদ্দিন খান জম্পী কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক। রাজনীতির পাশাপাশি সামাজিক বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে জড়িত তিনি। এছাড়া এলাকার ভোটারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে তার জনপ্রিয়তার প্রমাণ। গতকাল বুধবার কুসিক নির্বাচনে সরেজমিনে এই ওয়ার্ডে গিয়ে কথা হয় একাধিক ভোটারের সঙ্গে।
ভোটাররা জানান, এই পরিবারের সদস্যরা সেই ১৯৫২ সাল থেকে আমাদের অভিভাবক। কিন্তু এতদিন ক্ষমতায় থাকলেও কখনো তা অপব্যবহার করতে খুব কম মানুষই দেখেছেন। তারপরে দোষে-গুণে মিলিয়ে মানুষ। তবে তার ক্ষেত্রে খুব একটা বেশি বড় ভুল এখন পর্যন্ত তেমন দেখা যায়নি বললেই চলে। এলাকার মানুষ চাইলেই তার কাছে যেতে পাড়ে। এলাকাবাসীর বিপদে তিনিও এগিয়ে যান সংবাদ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই। আর তাই তার এই সফলতা। সাতবার জিতে তিনি এখন তার চাচার রেকর্ডও ভেঙে ফেললেন।
তবে টানা সপ্তমবারের মতো জিতলেও খুব একটা বেশি উচ্ছাস নেই জমির উদ্দিন খান জম্পীর মাঝে। তিনি বলছেন, ‘এটা তো স্বাভাবিক বিষয়। এলাকা বাসীর অনুরোধেই আমি প্রার্থী হয়েছি এবার।’
নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে জমির উদ্দিন খান জম্পী বলেন, ‘আমার চাচা এ ওয়ার্ডে টানা ৩৩ বছর কাউন্সিলর ছিলেন। তার অনুসারী হিসেবে আমিও ৩৭ বছর পার করছি। এবারও এলাকাবাসীর অনুরোধে প্রার্থী হয়েছি।’
তিনি বলেন, ‘আমার খুব বেশি চাওয়া-পাওয়া নেই। এলাকাবাসী আমার জন্য নির্বাচনে কাজ করছেন। আমার অসমাপ্ত কাজগুলো শেষ করার জন্য প্রার্থী হয়েছি। ওয়ার্ডের জলাবদ্ধতাসহ বিভিন্ন নালা ও সড়কে কিছু টুকটাক সমস্যা তো নেই বললে ভুল হবে। তবে এবার আবার এলাকাবাসী আমাকে সুযোগ দিয়েছে কাউন্সিলর পদে নির্বাচিত করে। আমি তাদের জন্য আমার অসমাপ্ত কাজগুলো শেষ করতে চাই।’
তিনি আরও বলেন, ‘সামনে পাঁচ বছরের মেয়াদ রয়েছে। এলাকাবাসীর খেদমত করে এই সময় তাদের জন্যেই কাজ করে যেতে চাই। আমাকে আবার ভোট দিয়ে নির্বাচিত করায় আমি ভোটারদের প্রতি কৃতজ্ঞ।’
এর আগে, বুধবার (১৫ জুন) সকাল ৮টা থেকে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) নগরীর ২৭টি ওয়ার্ডের ১০৫ কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ শুরু হয়। বিপুল উৎসাহের মধ্য দিয়ে বিকেল ৪টায় ভোটগ্রহণ শেষ হয়। তবে যেসব কেন্দ্রে ভোটার ছিলেন সেসব কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ বিকেল ৪টার পরেও চলে।
রিটার্নিং কর্মকর্তার দফতর সূত্রে জানা যায়, নির্বাচনে মোট দুই লাখ ২৯ হাজার ৯২০ ভোটার ছিলেন। এর মধ্যে এক লাখ ৩৫ হাজার ৬৪টি ভোট পড়ে। তবে বাতিল হয় ৩১৯ ভোট। ভোট পড়েছে ৫৮ দশমিক ৭৪ শতাংশ। মোট ১০৫টি কেন্দ্রের ৬৪০টি কক্ষে ভোটগ্রহণ হয়েছে। নির্বাচনে সাধারণ কাউন্সিলর পদে ১০৬ জন ও সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর পদে ৩৬ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। এর আগেই দুইজন কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থী না থাকায় জয়লাভ করেন।
কুসিক নির্বাচনের ঘোষিত ফল অনুযায়ী, নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আরফানুল হক রিফাত পেয়েছেন ৫০ হাজার ৩১০ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী মনিরুল হক সাক্কু পেয়েছেন ৪৯ হাজার ৯৬৭ ভোট। মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী অন্য তিন প্রার্থী মোহাম্মদ নিজাম উদ্দিন কায়সার ঘোড়া প্রতীকে ২৯ হাজার ৯৯, রাশেদুল ইসলাম হাতপাখায় তিন হাজার ৪০ ও কামরুল আহসান বাবুল হরিণ প্রতীকে দুই হাজার ৩২৯ ভোট পেয়েছেন।
সারাবাংলা/এসবি/এনএস/পিটিএম
৯ নং ওয়ার্ড কুমিল্লা সিটি করপোরেশন কুসিক নির্বাচন ২০২২ জমির উদ্দিন জম্পী