‘রাষ্ট্রপতি, স্পিকার ও আমি কালো টাকার মালিক’
১৬ জুন ২০২২ ১৯:৩৮
ঢাকা: ‘একটা প্লট থাকার জন্য যদি কালো টাকার মালিক হয়, তাহলে অর্থমন্ত্রীর নতুন সংজ্ঞা অনুযায়ী মাননীয় স্পিকার আপনি, রাষ্ট্রপতি ও আমি কালো টাকার মালিক’— এভাবেই সংসদে অর্থমন্ত্রীর বক্তব্যের কড়া জবাব দিলেন বিরোধীদল জাতীয় পার্টির মহাসচিব ও সংসদ সদস্য মুজিবুল হক চুন্নু।
বৃহস্পতিবার (১৬ জুন) বিকেলে সংসদ অধিবেশনে প্রস্তাবিত ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটের উপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি এসব কথা বলেন। এ সময় আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোট করা নিয়ে নতুন করে ভাবনার কথাও তুলে ধরেন তিনি।
মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, ‘অর্থমন্ত্রী বলেছেন, ঢাকায় যার ফ্ল্যাট-প্লট আছে সে কালো টাকার মালিক। আমি পাঁচ বার এমপি ও তিন বার মন্ত্রী হয়েছি। আমার ঢাকায় কোনো বাড়ি নাই। ২০১১ সালে আমি পূর্বাচলে প্লট পেয়েছিলাম। তার মানে অর্থমন্ত্রীর নতুন সংজ্ঞা অনুযায়ী আমি কালো টাকার মালিক হয়ে গেছি। মাননীয় স্পিকার আমরা ঢাকায় যারা আছি আপনি, রাষ্ট্রপতি, আমি সবাই কালো টাকার মালিক। তবে আমি আইন লঙ্ঘন করে কালো টাকার মালিক হয়েছি কি-না সংসদে এর ব্যাখা চাই।’
তিনি বলেন, ‘অর্থমন্ত্রী বাজেট দিয়েছেন। মনের মাধুরী মিশিয়ে কথার ফুলছড়ি দিয়ে এই বাজেট প্রণয়ন করেছেন, যার পাঠ উদ্ধার করা কঠিন। সামাজিক সুরক্ষা খাতে ১ লাখ ৭ হাজার কোটি টাকা ছিল চলতি বাজেটে। এবারের বাজেটে এক লাখ ১৩ হাজার কোটি করা হয়েছে। ১ লাখ ৭ হাজার কোটি টাকা যখন ছিল তখন ছিল জিডিপির ৩ দশমকি ১১ শতাংশ। এবার একটু নিচে নেমে গেছে। এবার জিডিপির ২ দশমিক ৫৫ শতাংশ। মূল্যস্ফীতি কীভাবে নিয়ন্ত্রণ হবে সেটা বাজেটে উল্লেখ করেন নাই।’
পাচারকৃত অর্থ ফেরাতে অর্থমন্ত্রীর বাজেট প্রস্তাবনার কড়া সমালোচনা করে বলেন, ‘অর্থমন্ত্রী বলেছেন ৭ শতাংশ ট্যাক্স দিলে পাচারকৃত অর্থ বৈধ হয়ে যাবে। ৪০ বছর যাবৎ সব সরকার (আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি) সরকার কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দিয়েছে। কিন্তু কালো টাকা সাদা হয়েছে কম। আমি যখন ব্যবসা করি ২৫ শতাংশ ট্যাক্স দিতে হয়। তাহলে বিদেশে টাকা পাঠিয়ে ৭ শতাংশ ট্যাক্স দিয়ে হালাল করব। এটা মানি লন্ডারিং আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। আইন সংশোধন করা না হলে এটা বাস্তবায়নের কোনো সুযোগ নেই।’
তিনি বলেন, ‘কীভাবে বিদেশ থেকে পাচার করা টাকা আনবেন। আইন সংশোধন না হলে তা বাস্তবায়ন হবে না। এই সুযোগ দেওয়া সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক, বেআইনি, অনৈতিক। তিনি আরও বলেন, ‘সিগারেটের উপর আমরা ট্যাক্স বাড়াতে বলি। জনগণ চায় ১০০ ভাগ ট্যাক্স বাড়ানো হোক সিগারেটে। তামাকের উপর ট্যাক্স বাড়ান, সিগারেটের উপর ট্যাক্স বাড়ান- এটা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।’
জাতীয় পার্টির এই সংসদ সদস্য বলেন, ‘আওয়ামী লীগের এক এমপি বিএনপির কথা বলতে গিয়ে এরশাদ সাহেবকে স্বৈরাচার বলেছেন। যার লগে করলাম চুরি সেই যদি বলে চোর, তাহলে কোথায় যাই। আওয়ামী লীগের সঙ্গে এত খাতির করলাম। নির্বাচন করলাম, ক্ষমতায় আনলাম, আসলাম। আর সেই আওয়ামী লীগের ভাইয়ের যদি জিয়াউর রহমানকে গালি দিতে গিয়ে এরশাদ সাহেবরে গালি দেন তাহলে আর যাই কোথায়? তাহলে তো নতুন করে ভাবতে হবে। কী করব, কোথায় যাব।’ এ সময় আওয়ামী লীগের এক সংসদ সদস্যের উদ্দেশে বলেন, ‘কি ভালো লাগে না? লাগবে। সময় আসতাছে চিন্তা কইরেন না।’
চুন্নু বলেন, রাষ্ট্রপতি অবসরে গেলে সরকারি কোনো বাড়ি পায় না। ভারতে রাষ্ট্রপতি অবসরের পর বাড়ি দেওয়া হয়, পাকিস্তানেও দেওয়া হয়। আমাদের দেশের রাষ্ট্রপতিদের এর কোনো সুযোগ নেই। অবসরে গেলে যানবাহনের সুবিধা দেওয়া হয় না। ভারতে দেওয়া হয়। বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি ভ্রমণের কোনো সুযোগ পান না। অথচ ভারতের রাষ্ট্রপতি পান। যিনি দুই/তিন বারের প্রধানমন্ত্রী তার যদি কোনো বাড়ি না থাকে, রাষ্ট্রপতির যদি কোন বাড়ি না থাকে- তাহলে তারা কোথায় থাকবেন? আমি প্রধানমন্ত্রীকে বলছি বিষয়গুলো ভাবার দরকার।’
সারাবাংলা/এএইচএইচ/পিটিএম