মালয়েশিয়ায় যেতে নিবন্ধন শুরু, কর্মী যাবে প্রশিক্ষণের পর
১৬ জুন ২০২২ ২২:০৯
ঢাকা: পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে দক্ষ কর্মী পাঠাতে নিবন্ধন শুরু করেছে জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোতে (বিএমইটি)। জুন থেকে সামনের কয়েক মাস জুড়ে চলবে এই নিবন্ধন। এরপর সারা দেশ থেকে নিবন্ধিত কর্মীদের দেওয়া হবে দক্ষতা উন্নয়য়ন প্রশিক্ষণ। এ কারণে জুন থেকে মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানোর কথা থাকলেও দেশটিতে এখনই কোনো শ্রমিক পাঠানো সম্ভব হচ্ছে না।
বিএমইটি মহাপরিচালক মো. শহীদুল আলম সারাবাংলাকে বলেন, ‘দু’দিন হলো আমরা কর্মী নিবন্ধন শুরু করেছি। এই প্রক্রিয়া চলেব আরও কয়েক মাস। ফলে এই মাস থেকেই মালয়েশিয়াতে দক্ষ কর্মী পাঠানো সম্ভব হবে না।’
তিনি বলেন, ‘নিবন্ধনের পর আমরা কর্মীদের ওরিয়েন্টেশন করাব। একটা নতুন দেশে গিয়ে নতুন পরিবেশে কীভাবে নিজেকে মানিয়ে নিতে হয় সেসব বিষয় শিখিয়ে দেওয়া হবে কর্মীদের। প্রতিটা দেশের নিজস্ব কিছু সংস্কৃতি থাকে। সেই সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচিত হলে কর্মীদের মানিয়ে নেওয়া সহজ হয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘এরপর ৫৫টি বিষয়ে আমরা কর্মীদের দক্ষতার প্রশিক্ষণ দেব। সারাদেশেই এই প্রশিক্ষণ কর্মসূচি চলবে। এরপর মালয়েশিয়ায় কর্মী যাবে।’
তবে এর আগে মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানোর বিষয়ে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী ইমরান আহমদ বলেছিলেন, ‘চলতি জুন মাস থেকে কর্মী পাঠানো শুরু হচ্ছে দেশটিতে। চুক্তি অনুযায়ী প্রথম বছরেই দুই লাখ কর্মী যাওয়ার কথা। এছাড়া পাঁচ বছরে পাঁচ লাখ কর্মী যাওয়ার কথা। তাদের চাহিদা এবং পরিস্থিতি অনুযায়ী আশাকরি পাঁচ লাখ কর্মী আমরা দ্রুত পাঠিয়ে দিতে পারব।’
মন্ত্রণালয় এবং বিএমইটি’র তথ্য মতে, মন্ত্রী এই আশাবাদ প্রকাশ করলেও বাস্তবতা ভিন্ন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে মন্ত্রণালয়ের বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা সারাবাংলাকে বলেন, ‘এই বছরের শেষের দিকে মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানো সম্ভব হবে। এর আগে লোক পাঠানো কোনোভাবেই সম্ভব নয়।’
তবে বিএমইটি মহাপরিচালক মো. শহীদুল আলম বলেন, ‘আমরা কিন্তু কাজ দ্রুত এগিয়ে নিচ্ছি। জুনে সম্ভব না হলেও জুলাই থেকেই মালয়েশিয়াতে কর্মী পাঠানো সম্ভব।’
এদিকে, মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানোর বর্তমান অবস্থা প্রসঙ্গে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান সচিব মুনিরুছ সালেহীন বলেন, ‘চুক্তি অনুযায়ী দেশটি কম খরচে কর্মী নেবে। পাশাপাশি সিকিউরিটি পারসোনাল এবং ডোমেস্টিক ওয়ার্কার্স পদে লোক নেবে। এসব খাত এখনো বাংলাদেশের জন্য উন্মুক্ত হয়নি।’
তিনি আরও বলেন, ‘অভিবাসন খরচ আমরা একেবারে জিরোতে রাখার কথা বলেছি। যদি কোনো রিক্রুটিং এজেন্সি নিয়ম ভঙ্গ করে, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেব। আমরা একটি খরচ নির্ধারণ করে দেব। তার বাইরে কোনো বাড়তি টাকা নিলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
উল্লেখ্য, ২০২১ সালের ১৯ ডিসেম্বর মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠাতে সমঝোতা চুক্তি হয়। চুক্তির এক মাসের মধ্যেই কর্মী পাঠানোর কথা থাকলেও বিভিন্ন কারণে তা এখনো সম্ভব হয়নি। তবে সমস্যার সমাধান করে এখন কর্মী নিবন্ধন করা হচ্ছে। সামনেই দেশটিতে কর্মী পাঠানো সম্ভব হবে মনে করছেন এর সঙ্গে জড়িতরা।
যেভাবে নিবন্ধন করা যাবে
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মালয়েশিয়ায় কর্মী হিসেবে যেতে ইচ্ছুক ব্যক্তিরা জেলা কর্মসংস্থান অফিস বা অনলাইনে ‘আমি প্রবাসী’ অ্যাপে নিবন্ধন করতে পারছেন। নিবন্ধনের জন্য পাসপোর্ট, পাসপোর্ট সাইজের ছবি, নিজের মুঠোফোন নম্বর, ই–মেইল (যদি থাকে), দক্ষতা সনদ (যদি থাকে) লাগছে। যাদের দক্ষতা সনদ নেই বা কোনো বিষয়ে দক্ষতা নেই তাদের প্রশিক্ষণ দেবে বিএমইটি।
বিএমইটি বলছে, বৈদেশিক কর্মসংস্থান ও অভিবাসী আইন অনুযায়ী, ডাটাবেইজে নিবন্ধিত কর্মীর তালিকা থেকে বৈদেশিক কর্মসংস্থানের জন্য স্বয়ংক্রিয়ভাবে দৈবচয়নের ভিত্তিতে কর্মী নির্বাচন করার বিধান রয়েছে। ঠিক এ কারেণেই মালয়েশিয়া যেতে ইচ্ছুক কর্মীদের বিএমইটি ডাটাবেইজে নিবন্ধন করা হচ্ছে।
বিএমইটির আওতাধীন জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিস অথবা নির্ধারিত কারিগরি প্রশিক্ষণকেন্দ্রে (টিটিসি) সরাসরি উপস্থিত হয়ে নিবন্ধন করা যাবে। নিবন্ধনের জন্য ২০০ টাকা সরকারি ফি (অফেরতযোগ্য) দিতে হবে। এ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্যের জন্য জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিস বা টিটিসির সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে।
তবে যারা ‘আমি প্রবাসী’ অ্যাপে নিবন্ধন করবেন তাদেরকে ফি ২০০ টাকার সঙ্গে অতিরিক্ত সার্ভিস চার্জ করসহ ১০০ টাকা পরিশোধ করতে হবে। নিবন্ধনের জন্য কর্মীর বয়স ১৮-৪৫ বছরের মধ্যে হতে হবে। নিবন্ধন নম্বর ও এর কার্যকারিতা নিবন্ধনের তারিখ থেকে দুই বছর বহাল থাকবে। ইতিমধ্যে যারা বিদেশ গমনের জন্য নিবন্ধন করেছেন, তাদের নতুন করে নিবন্ধনের প্রয়োজন নেই। তবে নিবন্ধনকালে কাঙ্ক্ষিত দেশ ও পেশা নির্বাচন করা না থাকলে আপডেট করা যাবে।
সারাবাংলা/টিএস/পিটিএম