‘সন্দেহ থাকলে কেন্দ্রে থাকা এজেন্টের সই করা ফলাফল মেলাতে পারেন’
১৭ জুন ২০২২ ০৮:২০
কুমিল্লা থেকে: কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের (কুসিক) নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে কারো সন্দেহ থাকলে কেন্দ্র থেকে দেওয়া পোলিং এজেন্টের সই করা কাগজ মিলিয়ে দেখার আহ্বান জানিয়েছেন কুসিক নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা শাহেদুন্নবী চৌধুরী।
বৃহস্পতিবার (১৬ জুন) দুপুরে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন শাহেদুন্নবী চৌধুরী।
কুমিল্লা সিটি করপোরেশন (কুসিক) নির্বাচনের ফলাফল পাল্টানো হয়েছে শেষদিকে, এমনটা দাবি করে আদালতে রিট করবেন বলে জানিয়েছেন সাবেক মেয়র ও টেবিল ঘড়ি প্রতীকের প্রার্থী মনিরুল হক সাক্কু।
বুধবার (১৫ জুন) ফলাফল ঘোষণা শেষে মনিরুল হক সাক্কু বলেন, আমাকে পরিকল্পিতভাবে হারানো হয়েছে। বিজয়ী প্রার্থী জোর করে জিতেছেন। আমার হিসাবে ৯৮০ ভোটে এগিয়ে ছিলাম। শেষ মুহূর্তে ফল পাল্টে দেওয়া হয়েছে। ষড়যন্ত্র করে আমাকে হারানো হয়েছে। ভোট পুনরায় গণনার জন্য আমি আদালতে রিট করব, আইনি ব্যবস্থা নেবো।
তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশন তার প্রথম পরীক্ষায় বিশ্বাসযোগ্যতা হারিয়ে ফেলেছে। ফলাফল ঘোষণা দেরি করে সরকারের সঙ্গে আঁতাত করে পরিকল্পিতভাবে আমাকে হারানো হয়েছে। গুটিকয়েক কেন্দ্রের ফল আটকে রাখা হয় পরিকল্পিতভাবে। আমি হারিনি কিন্তু আমাকে হারিয়ে দেওয়া হয়েছে।
তবে কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা শাহেদুন্নবী চৌধুরী এই দাবি অস্বীকার করেছেন।
তিনি বলেন, ইচ্ছে করে কাউকে জিতিয়ে দেওয়া হয়েছে কথাটি সম্পূর্ণ মিথ্যা। চার কেন্দ্রের ফলাফল শিটে সকল পোলিং এজেন্টদের সাইন করা ছিল। সকল কেন্দ্রের ফলাফল একসঙ্গে করে তা সকল মিডিয়াকর্মী ও প্রার্থীদের প্রতিনিধিদের সামনেই ঘোষণা করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, আমি শুধু এটুকু বলতে পারি, ভোটাররা দিনভর তাঁদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিয়েছেন। ভোটাররা যেভাবে ভোট দিয়েছেন, সেভাবে ফলাফল নির্ধারিত হয়েছে।
চার কেন্দ্রের ফলাফল ঘোষণায় দেরি হয়েছে কেনো?- গণমাধ্যম কর্মীদের এমন প্রশ্নের জবাবে কুসিক নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা বলেন, চার কেন্দ্রের ফলাফল ঘোষণা করতে দেরি হয়েছিল, সেসব কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসাররা ফলাফল নিয়ে আসতে দেরি করেছেন বৃষ্টির কারণে। ফলাফল ঘোষণার পর তুমুল বৃষ্টি হয়। যে চার কেন্দ্রের ফলাফল ঘোষণা দেরি হয়েছে ওই কেন্দ্রগুলো শহরতলী থেকে কিছুটা দূরে হওয়ায় বৃষ্টির প্রতিবন্ধকতায় প্রিসাইডিং অফিসাররা আসতে দেরি করেছেন।
ওই চার কেন্দ্রের নাম উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই চারটি কেন্দ্র হলো ৪২, ৭৮, ৭৯, ৯৭। এসব কেন্দ্রের ফলাফলের কাগজ দেখিয়ে তিনি এগুলোতে ঘষামাজা হয়েছে কি না, তা উপস্থিত গণমাধ্যমকর্মীদের দেখার অনুরোধ জানাই। কেন্দ্র থেকে প্রত্যেক প্রার্থীর এজেন্টদের রেজাল্ট শিট দিয়ে আসা হয়েছে। কারও সন্দেহ হলে তাঁরা চাইলে কেন্দ্রের রেজাল্ট শিটের সঙ্গে আমাদের ঘোষণা দেওয়া রেজাল্ট শিট মিলিয়ে দেখতে পারেন।
তিনি বলেন, ১০১টি কেন্দ্রের ফলাফল ঘোষণার পর যখন দুই মেয়র প্রার্থীর নেতা–কর্মী ও সমর্থকদের মধ্যে গন্ডগোল শুরু হয়, তখন বাকি ৪টি কেন্দ্রের ফলাফল আমি ঘোষণা করেছি। গন্ডগোলের কারণে হয়তো আপনারা তখন শুনতে পাননি।
ফলাফল ঘোষণার কেন্দ্রে গণজমায়েত বিষয় নির্বাচন কমিশনের ব্যর্থতা কি না?— গণমাধ্যমকর্মীদের এমন প্রশ্নের জবাবে শাহেদুন্নবী চৌধুরী বলেন, আমি এখানে ব্যর্থতার কিছু দেখছি না, আমি স্বচ্ছতায় বিশ্বাস করি। তবে সাধারণত ফলাফল ঘোষণার সময় এ ধরনের জমায়েত করতে দেওয়া হয় না। তবে আমি চেয়েছি, যাঁরা ফলাফল ঘোষণা দেখতে চান, তাঁরা আসবেন, দেখবেন। যাতে কারও মনে কোনো প্রশ্ন না থাকে। কিন্তু সেখানে দুই প্রার্থীর লোকজন এসে মুখোমুখি অবস্থান নেওয়ার কারণেই ফলাফল ঘোষণায় দেরি হয়েছে। এটা আমাদের ইচ্ছাকৃত ছিল না।
ফলাফল ঘোষণার সময় সেখানে পুলিশ সদস্যরা উপস্থিত থাকার পরেও একজন প্রার্থীর গায়ের ওপর অন্য প্রার্থীর সমর্থকেরা পড়ে গেল পুলিশের সামনে। রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে এর দায় নিচ্ছেন কি না? এতে পুলিশের কোনো ব্যর্থতা রয়েছে কি না জানতে চাইলে রিটার্নিং কর্মকর্তা বলেন, এ বিষয়ে আমি কোনো মন্তব্য করতে চাই না। সেখানে পুলিশ সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন, তাঁরা কোন কৌশলে কাজ করবেন, সেটা তাঁরা জানেন।
ফলাফল ঘোষণার সময় ফোন আসার বিষয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তা বলেন, ওই সময়ের পরিস্থিতি (হট্টগোলের সময়) বিবেচনা করে আমাকে বিভিন্ন স্থানে যোগাযোগ করতে হয়েছে।
উল্লেখ্য, গতকাল বুধবার (১৫ জুন) কুসিক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আরফানুল হক রিফাত ৩৪৩ ভোটে স্বতন্ত্র প্রার্থী মনিরুল হক সাক্কুকে পরাজিত করেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ দেশের মানুষদের মাঝে নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা নিয়ে চলছে নানারকম আলোচনা ও সমালোচনা।
সারাবাংলা/এসবি