ঢলের তোড়ে ভাসছে সিলেট
১৭ জুন ২০২২ ২০:৪৭
সিলেট: উজানের ঢলে ভাসছে সিলেট। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে লাখ লাখ মানুষ। সিলেটের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়েছে কয়েকটি উপজেলার। বন্যা কবলিত মানুষের জায়গা হচ্ছে না আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে। এরই মধ্যে রানওয়েতে পানি উঠে যাওয়ায় বন্ধ হয়ে গেছে সিলেট বিমানবন্দর। বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইনে পানি ঢুকে যাওয়ায় বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। এ পরিস্থিতিতে পানিবন্দি মানুষদের উদ্ধার করাকেই সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
বৃহস্পতিবার (১৬ জুন) রাত থেকে আচমকা উজান থেকে পানি নামতে থাকে সিলেট-সুনামগঞ্জ এলাকায়। জানা গেছে, ভারতের চেরাপুঞ্জি ও মৌসিনরামে গত আড়াই দশকের মধ্যে ২৪ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয়েছে গত মঙ্গল-বুধবার। সেখানে বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকলে পানির ঢল নামতে শুরু করে সিলেট-সুনামগঞ্জ দিয়ে। তাতেই শুক্রবার (১৭ জুন) সকালে এই দুই জেলার বেশিরভাগ এলাকাতেই হাঁটু থেকে শুরু করে গলা পর্যন্ত উচ্চতার পানি দেখা গেছে।
এ পরিস্থিতিতে শুক্রবার সকালেই সেনাবাহিনীকে উদ্ধার তৎপরতায় কাজে লাগানোর সিদ্ধান্ত হয়। পরে শুক্রবার দুপুর থেকে সেনাবাহিনীর ১৭ পদাতিক ডিভিশনের সাতটি ইউনিট সিলেট ও সুনামগঞ্জের আট উপজেলায় উদ্ধার কাজ শুরু করেছে।
১৭ পদাতিক ডিভিশনের ডিওসি মেজর জেনারেল হামিদুল হক জানিয়েছেন, সেনা সদস্যরা সিলেট জেলার সদর, কোম্পানীগঞ্জ, গোয়াইনঘাট ও জৈন্তাপুর এবং সুনামগঞ্জের ছাতক, দোয়ারাবাজার, দিরাইসহ আট উপজেলায় উদ্ধার তৎপরতা চালাচ্ছে। পাশাপাশি বন্যার্তদের চিকিৎসাসহ বেসামরিক প্রশাসনের সঙ্গে মিলে খাদ্য সহায়তা পৌঁছানোর কাজও করবে তারা।
বন্যা কবলিত এলাকায় সেনাবাহিনী মোতায়েনে উদ্ধার তৎপরতা জোরদার হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। তারা বলছেন, সেনা সদস্যরা দুর্গম এলাকাগুলোতে গিয়ে পানিবন্দি মানুষদের উদ্ধার করছে।
সিলেট জেলা প্রশাসন বলছে, জেলার কোম্পানীগঞ্জ, গোয়াইনঘাট, জৈন্তাপুর ও সদরের প্রায় শতভাগ এলাকা বন্যা কবলিত। উজানের ঢলের তোড় বেশি থাকার কারণে উদ্ধার তৎপরতা চালানো কঠিন হয়ে পড়েছে। এছাড়া ঢলের তোড়ে জৈন্তাপুরের সারি ও কোম্পানীগঞ্জের ধলাই নদীর তীরবর্তী দু’টি বাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। সদরে ঢলের তোড়ে তলিয়ে যাওয়া এক তরুণ সন্ধ্যা পর্যন্ত নিখোঁজ রয়েছেন।
আচমকা এই বন্যা পরিস্থিতিতে সিলেটের সঙ্গে কোম্পানীগঞ্জ সদর ও গোয়াইনঘাট সদরের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। শহরতলীর টুকেরবাজার, হাটখোলা, উমাইরগাও এলাকায় বন্যার্তদের মধ্যে হাহাকার চলছে। সিলেট জেলার চার শতাধিক আশ্রয় কেন্দ্রেও লোকজনের ঠাঁই হচ্ছে না। কোম্পানীগঞ্জ, জৈন্তাপুর ও গোয়াইনঘাটের কয়েকটি এলাকার মানুষ বাধ্য হয়ে সড়কে অবস্থান নিয়েছে।
এদিকে, সিলেট ওসমানী আর্ন্তজাতিক বিমানবন্দরের ফ্লাইট ওঠানামা বন্ধ করা হয়েছে। এয়াপোর্টের ম্যানেজার হাফিজ উদ্দিন জানিয়েছেন, রানওয়ের কাছাকাছি পানি এসে গেছে। যেকোনো সময় পানি উঠে যেতে পারে— এমন আশঙ্কায় ফ্লাইট আপাতত বন্ধ রাখা হয়েছে।
অন্যদিকে, নগরের কুমারগাওয়ে ৩৩ হাজার কেভি বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইনে পানি ঢুকে পড়ায় সিলেটের বিদ্যুৎ সরবরাহ নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। বন্যার কারণে এরই মধ্যে কোম্পানীগঞ্জ, গোয়াইনঘাট, জৈন্তাপুর, সিলেট সদর ও সিটি করপোরেশনের কিছু কিছু অংশে বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ রাখা হয়েছে।
সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, এই মুহূর্তে আমরা সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছি কুমারগাও বিদ্যুৎ স্টেশনকে। আর ৫/৬ ইঞ্চি পানি বাড়লে এই কেন্দ্রের বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ হয়ে যাবে। এই কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন না হলে গোটা সিলেট বিভাগের বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাবে। এমনটি হলে কার্যত সিলেট বন্যার ক্ষতির পাশাপাশি বড় ধরনের সংকটে পড়বে।
মেয়র আরও বলেন, পানিবন্দি মানুষদের উদ্ধার করে আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে আসতে সিলেট সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলরা সর্বাত্মকভাবে কাজ করছেন। আমরা এ পরিস্থিতিতে সবার কাছে সহযোগিতা কামনা করছি।
এদিকে, সিলেট নগরের নদী তীরবর্তী অর্ধশতাধিক এলাকা পানির নিচে তলিয়ে গেছে। বিশেষ করে পাইকারি আড়ত কালিঘাটে পানি ঢুকে পড়ায় বেচাকেনা বন্ধ হয়ে গেছে। স্থানীয় চাল বাজারের ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ফারুক আহমদ জানিয়েছেন, কালিঘাটের সব ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পানিতে তলিয়ে গেছে। দুপুরের পর থেকে ব্যবসায়ীরা নিত্যপণ্য পাশ্ববর্তী সরকারি পাইলট স্কুলে নিয়ে রাখছেন।
সিলেট সিটি করপোরেশনের ১০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর তারেক উদ্দিন ও ১২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সিকন্দর আলী জানিয়েছেন, দুই ওয়ার্ডে অন্তত ১২টি আশ্রয়কেন্দ্র রয়েছে। সব আশ্রয়কেন্দ্রই বন্যার্ত মানুষের ঠাসা। এসব আশ্রয়কেন্দ্রে শুকনো ও রান্না করা খাবার বিতরণ করা হচ্ছে।
সারাবাংলা/টিআর