বিপৎসীমার ওপরে ১০ নদীর পানি, ৭২ ঘণ্টার আগে কমছে না বৃষ্টি
১৭ জুন ২০২২ ২২:৩৯
ঢাকা: একদিকে উজান থেকে নেমে আসা ঢলের পানি আরেকদিকে মুষলধারে দিনভর বৃষ্টি। দুইয়ে মিলে দুর্ভোগে একাকার দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল। এ সব অঞ্চলের অন্তত দশটি নদ-নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে বলে জানিয়েছে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র। এদিকে ৭২ ঘণ্টার আগে বৃষ্টি কমছে না বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদফতর। এই পরিস্থিতিতে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের জন্য নগদ অর্থ ও খাদ্য সহায়তা দিচ্ছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়।
বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের তথ্য অনুযায়ী— শুক্রবার (১৭ জুন) দেশের উত্তর ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলের ১০ নদ-নদীর পানি ১৩ পয়েন্টে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ব্রক্ষ্মপুত্র নদের পানি হাতিয়া পয়েন্টে বিপৎসীমার ৬০ এবং চিলমারী পয়েন্টে ৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। দুধকুমার নদের পাটেশ্বরী পয়েন্টে ৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ধরলার পানি কুড়িগ্রাম পয়েন্টে ৯ সেন্টিমিটার এবং তিস্তা নদীর পানি ডালিয়া পয়েন্টে ৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সুরমা নদীর পানি কানাইঘাট পয়েন্টে ১০৮ সেন্টিমিটার আর সিলেট পয়েন্টে ৭০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে এবং সুনামগঞ্জ পয়েন্টে ১২০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সারিয়াগোয়াইন নদীর পানি সারিঘাটে ২৩ সেন্টিমিটার, পুরাতন সুরমা নদীর পানি দেরাই পয়েন্টে ২ সেন্টিমিটার বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
এ ছাড়া যাদুকাটা নদের পানি লরেরগড় পয়েন্টে সর্বোচ্চ ১৫৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে। সোমেশ্বরী নদীর কমলাকান্দা পয়েন্টে ৫৬ সেন্টিমিটার এবং ভুগাই নদী নাকুয়াগাঁও পয়েন্টে ৩ সেন্টিমিটার বিপৎসীমার ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে। এ সব নদ-নদীর পানি বাড়ার কারণে ওই অঞ্চলে বন্যা দেখা দিয়েছে।
পূর্বাভাস কেন্দ্র তাদের প্রতিবেদনে বলছে— বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকলে সিলেট ও রংপুর অঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হতে পারে।
এ প্রসঙ্গে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আরিফুজ্জামান ভূঁইয়া জানিয়েছেন, উজানের ঢলের কারণে দেশের সব প্রধান নদ-নদীর পানি হু হু করে বাড়ছে।
তিনি বলেন, ‘আগামী ৭২ ঘণ্টায় দেশের উত্তর, উত্তর- পূর্বাঞ্চল এবং এর কাছাকাছি ভারতের আসাম, মেঘালয় ও হিমালয় পাদদেশীয় পশ্চিমবঙ্গের কিছু স্থানে ভারী এবং অতি ভারী বৃষ্টিপাতের আশঙ্কা রয়েছে। যে কারণে আগামী ৪৮ ঘণ্টায় ব্রক্ষ্মপুত্র-যমুনা, গঙ্গা-পদ্মা, সুরমা, কুশিয়ারা, তিস্তা, ধরলা ও দুধকুমারসহ সব প্রধান নদ- নদীর পানি বাড়তে থাকবে। ফলে দেশের উত্তর- পূর্বাঞ্চল অর্থাৎ সিলেট, রংপুর, নেত্রকোনা এলাকায় বন্যা পরিস্থিতি আরও অবনতি হতে পারে।
এদিকে আগামী ২৪ ঘণ্টায় সারাদেশে মাঝারি ও ভারী বৃষ্টিপাতের আভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদফতর। সংস্থাটির প্রতিদিনের মৌসুমী বায়ু হালনাগাদ প্রতিবেদন অনুযায়ী দেশের আট বিভাগে বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে।
সেখানে বলা হয়েছে, রংপুর, রাজশাহী, ঢাকা, ময়মনসিংহ, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় অস্থায়ীভাবে ঝড়ো হাওয়াসহ মাঝারী থেকে ভারী বৃষ্টিপাত হতে পারে।
আবহাওয়াবিদ মো. শাহীনুল ইসলাম জানিয়েছেন, এই পরিস্থিতি আগামী তিন দিন অব্যাহত থাকবে এবং পাঁচদিন পরে বৃষ্টিপাতের প্রবনতা কমে আসতে পারে।
অন্যদিকে বন্যাকবলিত এলাকায় ক্ষতিগ্রস্তদের খাদ্য ও নগদ সহায়তা বরাদ্দ দিয়েছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে বন্যাসহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্তদের সাহায্যার্থে মানবিক সহায়তা হিসেবে বিতরণের লক্ষ্যে ২৬ হাজার শুকনো ও অন্যান্য খাবারের প্যাকেট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে । প্রতিটি প্যাকেটে চাল-ডাল-তেল-লবণ চিনিসহ যে খাদ্য সামগ্রী রয়েছে তা পাঁচ সদস্যের একটি পরিবারের এক সপ্তাহ চলবে বলে আশা করা যায়। একইসঙ্গে নগদ টাকা এবং চালও বরাদ্দ প্রদান করা হয়েছে । গতকাল দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে এ বরাদ্দ দেওয়া হয়।
বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত (১) সিলেট জেলার অনুকূলে দুইশত মেট্রিকটন চাল, ৩০ লক্ষ নগদ টাকা এবং ৮ হাজার শুকনো ও অন্যান্য খাবারের প্যাকেট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। (২) সুনামগঞ্জ জেলার জন্য নগদ ৩০ লক্ষ টাকা এবং ৮ হাজার শুকনো ও অন্যান্য খাবারের প্যাকেট (৩) নেত্রকোনা জেলার জন্য একশত মেট্রিকটন চাল, ১০ লক্ষ নগদ টাকা এবং ৩ হাজার শুকনো ও অন্যান্য খাবার প্যাকের বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ।(৪) কুড়িগ্রাম জেলার জন্য নগদ দশ লাখ টাকা এবং ১ হাজার শুকনো ও অন্যান্য খাবারের প্যাকেট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। (৫) রংপুর জেলার জন্য ৩ হাজার এবং(৬) নীলফামারী জেলার জন্য ৩ হাজার শুকনো ও অন্যান্য খাবারের প্যাকেট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ।
বরাদ্দকৃত ত্রাণকার্য (নগদ) অর্থ শুধুমাত্র আপৎকালীন সময়ে বন্যাসহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে মানবিক সহায়তা হিসেবে বিতরণ করতে হবে।
সারাবাংলা/জেআর/একে