সিলেটে দুই লাখ গ্রাহক বিদ্যুৎহীন, দুঃখ প্রকাশ প্রতিমন্ত্রীর
১৭ জুন ২০২২ ২৩:৩২
ঢাকা: উজান থেকে নেমে আসা ঢলের জলে ভাসছে সিলেট। এরই মধ্যে জেলার কয়েক লাখ মানুষ হয়ে পড়েছেন পানিবন্দি। দেখা দিয়েছে খাবার, পানির সংকটও। এই পরিস্থিতিতে সুনামগঞ্জ ও ছাতক এলাকার বেশ কয়েকটি এলাকার বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
বিদ্যুৎ বিভাগ বলছে, প্রচণ্ড পানিতে যে কোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে। দুর্ঘটনা এড়াতে বিদ্যুৎ সরবরাহ সাময়িক বন্ধ রাখা হয়েছে। এদিকে এ পরিস্থিতির জন্য ওই এলাকার গ্রাহকদের কাছে দুঃখ প্রকাশ করেছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ।
বিদ্যুৎ বিভাগ সুত্রে জানা গেছে, সুনামগঞ্জ ও ছাতক এলাকার বেশ কয়েকটি সাব স্টেশনে পানি ঢুকে পড়েছে। কেন্দ্রগুলোতে হাঁটুসমান পানি প্রবাহিত হচ্ছে। যে কারনে ওই সব এলাকার বিদ্যুৎ সরবরাহ সাময়িক বন্ধ রাখা হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে— দক্ষিণ সুরমা ও কোম্পানিগঞ্জ বিদ্যুতের সাব স্টেশনে পানি ওঠায় বৃহস্পতিবার থেকেই বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রাখা হয়েছে। পানি উঠেছে সিলেটের কুমারগাঁওয়ের বিদ্যুতের জাতীয় গ্রিড লাইনের উপকেন্দ্রেও। আরেকটু পানি বাড়লে বন্ধ করা লাগবে এটি সাব স্টেশনও। এটি বন্ধ হলে সিলেট ও সুনামগঞ্জের বেশিরভাগ এলাকার বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাবে। স্টেশনটি চালু রাখতে শুক্রবার দিনভর বিদ্যুৎ বিভাগের সঙ্গে সেনাবাহিনী, ফায়ার সার্ভিস, সিটি করপোরেশন চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। নানা উপায়ে পানি ঠেকানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।
বিতরণ সংস্থা পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ লিমিটেড- পিজিসিবি তাদের ফেইসবুক পেইজে লিখেছে, ছাতকে পিজিসিবি’র গ্রিড উপকেন্দ্র এবং সংলগ্ন এলাকায় বিতরণ সংস্থার বিদ্যুৎ উপকেন্দ্রগুলো পাহাড়ি ঢলে প্লাবিত হয়েছে। ফলে ছাতক থেকে সুনামগঞ্জে বিদ্যুৎ সঞ্চালন বন্ধ রয়েছে। পাহাড়ি ঢলে সুনামগঞ্জেও বহু এলাকা প্লাবিত হয়েছে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে দুর্ঘটনা এড়াতে ছাতক ও সুনামগঞ্জ জেলা সহ সংলগ্ন এলাকাসমূহে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রাখা হয়েছে।
সিলেট সদরে কুমারগাঁও গ্রিড উপকেন্দ্রের সুইচইয়ার্ড প্লাবিত হয়েছে। পানি আরও বাড়লে সিলেটও বিদ্যুৎ বন্ধের ঝুঁকিতে পড়বে।
প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে সম্মানিত বিদ্যুৎ গ্রাহকদের সাময়িক অসুবিধার জন্য বিদ্যুৎ বিভাগ দুঃখ প্রকাশ করছে। বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ামাত্র বিদ্যুৎ সরবরাহ চালু করতে পিজিসিবি, বিউবো এবং পবিস’র প্রকৌশলী সহ সর্বস্তরের কর্মীরা প্রস্তুত রয়েছে।
বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের ফেসবুক পেজে লিখেছে, বৃহস্পতিবার থেকে সিলেট ও সুনামগঞ্জ অঞ্চলে মুষলধারে বৃষ্টি হচ্ছে। পাহাড়ি ঢল ও বন্যার পানি ছাতক ও সুনামগঞ্জ গ্রিড উপকেন্দ্রে প্রবেশ করায় নিরাপত্তার স্বার্থে উক্ত গ্রিড উপকেন্দ্র বন্ধ রাখা হয়েছে। উপকেন্দ্র বন্ধ থাকায় ওই এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ আছে।
অব্যাহত বৃষ্টিপাতের ফলে সিলেটের কুমারগাঁও উপকেন্দ্র ঝুঁকির মধ্যে আছে। যে কোনো সময় এই উপকেন্দ্রও বন্ধ করা প্রয়োজন হতে পারে।
ফেঞ্চুগঞ্জ, বিবিয়ানা, বিয়ানীবাজার ও শ্রীমঙ্গল এলাকায় বন্যার পানি মারাত্মক না হওয়ার ফলে ওইসব এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক আছে। বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি এবং স্থাপনার দুর্ঘটনা এড়াতে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে সম্মানিত বিদ্যুৎ গ্রাহকদের সাময়িক অসুবিধার জন্য বিদ্যুৎ বিভাগ দুঃখ প্রকাশ করছে। বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ামাত্র বিদ্যুৎ সরবরাহ চালু করা হবে। এ বিষয়ে প্রকৌশলী ও বিদ্যুৎ কর্মীগণ সর্বদা তৎপর রয়েছে।
সাময়িক এই পরিস্থিতির জন্য গ্রাহকদের কাছে দুক্ষ প্রকাশ করে বিদ্যুৎ,জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেছেন, ছাতক ও সুনামগঞ্জে পাহাড়ি ঢলে প্রচণ্ডভাবে পানি বেড়ে গেছে। ওই সকল এলাকায় আমাদের যে বিদ্যুতের সাব স্টেশনগুলো রয়েছে সেগুলো খুব নাজুক অবস্থায় রয়েছে। সেখানে পানি উঠে গেছে, সুইসবোডে পানি উঠে গেছে। আমরা জরুরি ক্ষেত্র দেখে সেগুলি আমরা বন্ধ করে দিয়েছি। সেখানকার সাধারণ মানুষের কষ্ট হচ্ছে আমি বুঝতে পারছি। আমরা দুঃখ প্রকাশ করছি।
জানা গেছে, সিলেট বিভাগের চার জেলায় পিডিবির প্রায় সাড়ে চার লাখ গ্রাহক রয়েছে। এরমধ্যে সিলেটের এক লাখ এবং সুনামগঞ্জের ৯০ হাজার গ্রাহক এখন বিদ্যুৎহীন।
সারাবাংলা/জেআর/একে