Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

২০২১ সালে রেকর্ড সাড়ে ৩ কোটিরও বেশি শিশু বাস্তুচ্যুত

সারাবাংলা ডেস্ক
১৮ জুন ২০২২ ০৯:৫৩

সংঘাত, সহিংসতা আর নানামুখী সংকটে ২০২১ সালে বিশ্বব্যাপী ৩ কোটি ৬৫ লাখ শিশু বাস্তুচ্যুত হয়েছে। জাতিংঘের শিশু তহবিল বিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফ বলছে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে এক বছরে এত বেশি শিশুর বাস্তুচ্যুতি আর কখনো ঘটেনি। এ পরিস্থিতিতে বিভিন্ন দেশের সরকারের প্রতি ছয়টি পদক্ষেপ গুরুত্বের সঙ্গে নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে সংস্থাটি।

আগামী ২০ জুন আন্তর্জাতিক শরণার্থী দিবস সামনে রেখে প্রকাশ করা পরিসংখ্যানে ইউনিসেফ বলছে, গত বছরটিতে বাস্তুচ্যুতির শিকার শিশুদের মধ্যে ১ কোটি ৩৭ লাখ শিশুকে শরণার্থী হতে হয়েছে কিংবা অন্য দেশে আশ্রয় নিতে হয়েছে। অন্যদিকে ২ কোটি ২৮ লাখ শিশুকেই সংঘাত ও সহিংস পরিস্থিতির শিকার হয়ে ভিটেমাটি ছেড়ে আশ্রয় নিতে হয়ে নিজ দেশেই অন্য কোনো স্থানে।

বিজ্ঞাপন

ইউনিসেফ আরও বলছে, এক বছরে কেবল শিশু বাস্তুচ্যুতির এই হিসাবের মধ্যেও আবহাওয়া ও জলবায়ুগত পরিবর্তন কিংবা প্রাকৃতিক দুর্যোগের প্রত্যক্ষ শিকার হয়ে বাস্তুচ্যুত শিশুদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে ভিটেমাটি ছাড়তে বাধ্য হওয়াদেরও এই হিসাবে আনাই হয়নি।

বিপুলসংখ্যক এই শিশুদের বাস্তুচুতিতে প্রত্যক্ষ ভূমিকা রেখেছে বেশ কয়েকটি দেশে অব্যাহতভাবে চলে আসা সহিংস সংকটময় পরিস্থিতি। এর মধ্যে রয়েছে দীর্ঘদিন ধরে তীব্র ও প্রলম্বিত যুদ্ধাবস্থা পেরিয়ে আসা আফগানিস্তান, ভঙ্গুর অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি পার করা ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক অব কঙ্গো ও ইয়েমেন। জলবায়ু পরিবর্তনের দীর্ঘস্থায়ী প্রভাবের কারণেও অনেক দেশেই শিশুদের বাস্তুচ্যুত হতে হয়েছে। ইউনিসেফ বলছে, বিশ্বব্যাপী নাজুক পরিস্থিতির মতোই বাড়ছে শিশু বাস্তুচ্যুতির ঘটনাও। গত বছরে এরকম শিশুর সংখ্যা বেড়েছে ২২ লাখ।

বিজ্ঞাপন

ইউনিসেফের নির্বাহী পরিচালক ক্যাথরিন রাসেল বলেন, সংঘাত ও সংকটের কারণে শিশু বাস্তুচ্যুতি বাড়ছে— এটি প্রমাণিত। একে অগ্রাহ্য করার কোনো সুযোগ নেই। আমাদেরও তাই এসব শিশুদের কাছে পৌঁছানোর দায়িত্বও বেড়ে গেছে। আমরা আশা করব, বিভিন্ন দেশের সরকার তাদের নিজ নিজ দেশে শিশু বাস্তুচ্যুতির ঘটনা প্রতিরোধে অগ্রাধিকারভিত্তিতে কাজ করবে। আর বাস্তুচ্যুত হলেও শিশুরা যেন শিক্ষা ও সুরক্ষাসহ মৌলিক সেবা থেকে বঞ্চিত না হয় এবং তাদের কল্যাণ ও বিকাশের সুযোগ যেন নিশ্চিত হয়, এসব বিষয়েও তাদের সজাগ থাকতে হবে।

ইউনিসেফ আরও বলছে, ইউক্রেন যুদ্ধের মতো সংকটের কারণে এ বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত ২০ লাখেরও বেশি শিশুকে শরণার্থী হতে হয়েছে। আরও প্রায় ৩০ লাখ শিশু অভ্যন্তরীণ বাস্তুচ্যুতির শিকার হয়েছে। এর বাইরেও আফ্রিকার দেশগুলোতে তীব্র খরা এবং বাংলাদেশ, ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকার তীব্র বন্যার মতো আবহাওয়া ও জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে আরও অনেক শিশুকে তাদের পরিবারের সঙ্গে ঘর ছাড়তে হয়েছে। কেবল প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণেই ২০২১ সালে নতুন করে বাস্তুচ্যুত হতে হয়েছে ৭৩ লাখ শিশুকে।

জাতিসংঘের তথ্য বলছে, গত এল দশকে বৈশ্বিক শরণার্থীর সংখ্যা আগের তুলনায় দ্বিগুণেরও বেশি হয়ে গেছে। এর অর্ধেকই শিশু। বাস্তুচ্যুত এই শিশুদের এক-তৃতীয়াংশেরও বেশি বসবাস করছে সাব-সাহারা আফ্রিকা এলাকায়। এই অঞ্চলে আশ্রয় নেওয়া বাস্তুচ্যুত শিশুর সংখ্যা ৩৯ লাখ, যা মোট বাস্তুচ্যুত শিশুর ৩৬ শতাংশ। এছাড়া এশিয়ার দেশগুলোতে বাস্তুচ্যুত শিশুর সংখ্যা ২৬ লাখ (২৫ শতাংশ), মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকায় রয়েছে আরও ১৪ লাখা বাস্তুচ্যুত শিশু (১৩ শতাংশ)।

বিশ্বব্যাপী বাস্তুচ্যুত শিশুর সংখ্যা রেকর্ড পরিমাণে বেড়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা ও সুরক্ষার মতো মৌলিক সেবাপ্রাপ্যতার সুযোগও কমে আসছে। যেমন— শরণার্থী শিশুদের মধ্যে দুই-তৃতীয়াংশ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পায়, যেখানে উচ্চ বিদ্যালয়ে যাওয়া শরণার্থী শিশুর সংখ্যা মাত্র এক-তৃতীয়াংশ।

শরণার্থী কিংবা অভ্যন্তরীণ বাস্তুচ্যুত শিশুরা সুরক্ষার দিক থেকেও অত্যন্ত ঝুঁকির মুখে থাকে। বিশেষ করে পরিবার থেকে আলাদা হয়ে যাওয়া শিশুদের পাচার হয়ে যাওয়া এবং বিভিন্ন ধরনের নির্যাতন ও সহিংসতার শিকার হওয়ার ঝুঁকি বেশি। আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর তথ্য বলছে, বিশ্বব্যাপী মানব পাচারের প্রায় ৩৪ শতাংশের শিকার এসব শিশুরা।

এ পরিস্থিতিতে সদস্য দেশগুলোর প্রতি বাস্তুচ্যুত শিশুদের অধিকার রক্ষায় দেওয়া প্রতিশ্রুতি সমুন্নত রাখার আহ্বান জানিয়েছে ইউনিসেফ। বিশেষ করে গ্লোবাল কমপ্যাক্ট অন রিফিউজিস (জিসিআর) ও গ্লোবাল কমপ্যাক্ট ফর মাইগ্রেশনের (জিসিএম) মতো নীতিমালাগুলো অনুসরণের করতে বলেছে সংস্থাটি। এছাড়া বাস্তুচ্যুতির শিকার শিশুদের প্রকৃত পরিস্থিতি তুলে ধরার জন্য তথ্য ও গবেষণায় আরও বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়েছে।

শরণার্থী, অভিবাসী ও বাস্তুচ্যুত শিশুদের সমান অধিকার ও সুযোগ নিশ্চিত করতে ছয়টি পদক্ষেপ নিতে সব দেশের সরকারের প্রতি আহ্বানও জানিয়েছে ইউনিসেফ। এগুলো হলো—

* যেখান থেকেও আসুক না কেন, সব শিশুর জন্য সমান সমর্থন দিতে হবে;

* শরণার্থী, অভিবাসী বা বাস্তুচ্যুত— সব শিশুকে প্রথমত শিশু হিসেবে চিহ্নিত করে তাদের সুরক্ষা, বিকাশ ও অংশগ্রহণের অধিকার নিশ্চিত করতে হবে;

* যে অবস্থা থেকেই আসুক না কেন, সব শিশুর জন্য শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবার মতো মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করতে সামষ্টিক প্রচেষ্টা জোরদার করতে হবে;

* শরণার্থী, অভিবাসী ও বাস্তুচ্যুত শিশুদের বৈষম্য ও বিদ্বেষ থেকে সুরক্ষা দিতে হবে;

* সীমান্ত ব্যবস্থাপনায় ক্ষতিকর দিকগুলো এবং অভিবাসী শিশুদের আটকের নীতির অবসান ঘটাতে হবে; এবং

* শরণার্থী, অভিবাসী ও বাস্তুচ্যুত তরুণদের মেধা ও তাদের পূর্ণ সক্ষমতা প্রকাশের সুযোগ দিতে তাদের ক্ষমতায়ন করতে হবে।

সারাবাংলা/টিআর

বাস্তুচ্যুতি শিশু

বিজ্ঞাপন

নামেই শুধু চসিকের হাসপাতাল!
২২ নভেম্বর ২০২৪ ২২:০৬

আরো

সম্পর্কিত খবর