সহজলভ্য ও সস্তা তামাকপণ্যে দাম বাড়ানোর প্রস্তাব
১৮ জুন ২০২২ ১৬:৪৮
ঢাকা: আগামী ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট পাস হলে তরুণ ও দরিদ্র জনগোষ্ঠীর মধ্যে সিগারেটসহ সবধরনের তামাকপণ্যের ব্যবহার বাড়বে। স্বাস্থ্য ব্যয় বেড়ে যাবে এবং অতিরিক্ত রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হবে সরকার। ফলে নিত্যপণ্যের তুলনায় তামাকপণ্য আরও সস্তা হবে এবং তরুণ ও নিম্ন আয়ের মানুষ এসব পণ্য ব্যবহারে উৎসাহিত হবে, যা জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকিস্বরূপ। এজন্য সহজলভ্য ও সস্তা তামাকপণ্য চূড়ান্ত বাজেটে কার্যকরভাবে দাম বাড়ানোর প্রস্তাব জানানো হয়েছে।
শনিবার (১৮ জুন) দুপুরে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি নসরুল হামিদ মিলনায়তনে ২০২২-২৩ বাজেটে তামাক কর ও মূল্য পদক্ষেপ প্রত্যাশা ও প্রাপ্তির সংবাদ সম্মেলনে আয়োজকেরা এই প্রস্তাব তুলে ধরেন।
বক্তরা বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটে নিম্ন স্তরের সিগারেটের দাম বাড়ানো হয়েছে মাত্র ২.৫৬ শতাংশ। বর্তমানে সিগারেট বাজারের ৭৫ শতাংশই নিম্ন স্তরের দখলে যার প্রধান ভোক্তা মূলত তরুণ ও দরিদ্র জনগোষ্ঠী। মধ্যম, উচ্চ এবং অতি উচ্চ স্তরে দাম বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে যথাক্রমে ৩.১৭ শতাংশ, ৮.৮২ শতাংশ এবং ৫.১৮ শতাংশ।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য তুলে ধরে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ২০২১ সালের তুলনায় ২০২২ সালে (প্রভিশনাল) জনগণের মাথাপিছু আয় বেড়েছে প্রায় ১০ শতাংশ (নমিনাল)। সিগারেটের দামবৃদ্ধি মাথাপিছু আয় বৃদ্ধির তুলনায় খুবই কম হওয়ায় সিগারেট আরো সহজলভ্য হবে এবং তরুণরা সিগারেট ব্যবহারে বিশেষভাবে উৎসাহিত হবে।
কৃষি বিপণন অধিদফতর কর্তৃক প্রকাশিত তথ্য থেকে চারটি মহানগরীর (ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী এবং খুলনা) নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দৈনিক গড় খুচরা মূল্যের তুলনামূলক বিশ্লেষণ তুলে ধরে সংবাদ সম্মেলনে আরও জানানো হয়, ২০২১ সালের (৮ জুন) তুলনায় ২০২২ সালে (৮ জুন) সয়াবিন তেলের দাম বেড়েছে ৪৫.১৮ শতাংশ, আটার দাম ৪৪.৬৩ শতাংশ, ডিমের দাম ৩৪.০৩ শতাংশ, মসুর ডালের দাম ২৫.৪৩ শতাংশ, গুঁড়ো দুধের দাম ১৮.১৯ শতাংশ, ব্রয়লার মুরগির দাম ১৬.৬৩ শতাংশ এবং মিনিকেট চালের দাম বেড়েছে ১২.৫ শতাংশ। অথচ প্রস্তাবিত বাজেটে সিগারেট বাজারের ৭৫ শতাংশ দখলে থাকা নিম্ন স্তরের সিগারেটের দাম বাড়ানো হয়েছে মাত্র ২.৫৬ শতাংশ এবং জর্দা, গুল ও বিড়ির দাম অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে। ফলে নিত্যপণ্যের তুলনায় তামাকপণ্য আরো সস্তা হবে এবং তরুণ ও নিম্ন আয়ের মানুষ এসব পণ্য ব্যবহারে উৎসাহিত হবে, যা জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকিস্বরূপ।
বক্তরা আরও বলেন, তামাকবিরোধীদের প্রস্তাব অনুযায়ী চূড়ান্ত বাজেটে সুনির্দিষ্ট কর আরোপের মাধ্যমে সিগারেটসহ সকল তামাকপণ্যের দাম বৃদ্ধি করা হলে প্রায় ১৩ লক্ষ প্রাপ্তবয়স্ক ধূমপান থেকে বিরত থাকতে উৎসাহিত হবে, দীর্ঘমেয়াদে ৪ লাখ ৪৫ হাজার প্রাপ্তবয়স্ক এবং ৪ লাখ ৪৮ হাজার তরুণ জনগোষ্ঠীর অকাল মৃত্যু রোধ করা সম্ভব হবে এবং সিগারেট থেকে সম্পূরক শুল্ক, স্বাস্থ্য উন্নয়ন সারচার্জ এবং ভ্যাট বাবদ অতিরিক্ত ৯ হাজার ২০০ কোটি টাকা রাজস্ব আয় হবে। একইসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী প্রতিশ্রুতিতে ২০৪০ সালের মধ্যে তামাকমুক্ত বাংলাদেশ অর্জন সহজ হবে।
সংবাদ সম্মেলনে ২০২২-২৩ সালের চূড়ান্ত বাজেটে অন্তর্ভুক্তির জন্য যেসব প্রস্তাব তুলে ধরা হয় সেগুলো হচ্ছে: সিগারেট: নিম্ন স্তরে প্রতি ১০ শলাকা সিগারেটের খুচরা মূল্য ৫০ টাকা নির্ধারণ করে ৩২.৫০ টাকা সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক আরোপ, মধ্যম স্তরে ১০ শলাকা সিগারেটের খুচরা মূল্য ৭৫ টাকা নির্ধারণ করে ৪৮.৭৫ টাকা সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক আরোপ, উচ্চ স্তরে ১০ শলাকা সিগারেটের খুচরা মূল্য ১২০ টাকা নির্ধারণ করে ৭৮.০০ টাকা সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক আরোপ এবং প্রিমিয়াম বা অতি উচ্চ স্তরে প্রতি ১০ শলাকা সিগারেটের খুচরা মূল্য ১৫০ টাকা নির্ধারণ করে ৯৭.৫০ টাকা সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা। বিড়ি, ফিল্টারবিহীন ২৫ শলাকা বিড়ির খুচরা মূল্য ২৫ টাকা নির্ধারণ করে ১১.২৫ টাকা সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক আরোপ এবং ফিল্টারযুক্ত ২০ শলাকা বিড়ির খুচরা মূল্য ২০ টাকা নির্ধারণ করে ৯.০০ টাকা সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা। জর্দা এবং গুল, প্রতি ১০ গ্রাম জর্দার খুচরা মূল্য ৪৫ টাকা নির্ধারণ করে ২৭.০০ টাকা সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা এবং প্রতি ১০ গ্রাম গুলের খুচরা মূল্য ২৫ টাকা নির্ধারণ করে ১৫.০০ টাকা সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা।
সংবাদ সম্মেলনে আরো বক্তব্য রাখেন, বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ এবং জাতীয় তামাকবিরোধী মঞ্চের আহ্বায়ক ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. রুমানা হক, ক্যাম্পেইন ফর টোব্যাকো ফ্রি কিডস (সিটিএফকে)- বাংলাদেশ এর লিড পলিসি অ্যাডভাইজর মো. মোস্তাফিজুর রহমান, আত্মা’র কনভেনর মর্তুজা হায়দার লিটন, প্রজ্ঞা’র নির্বাহী পরিচালক এবিএম জুবায়ের, নাদিরা কিরণ, প্রধান হাসান শাহরিয়ার প্রমুখ।
সারাবাংলা/এআই/একে