ধরলার পানি বিপৎসীমার ২২ সেন্টিমিটার ওপরে, ডুবছে কুড়িগ্রাম
১৮ জুন ২০২২ ১৬:৫৪
কুড়িগ্রাম: বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হওয়ায় জেলার ৯টি উপজেলার লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। ধরলা, ব্রহ্মপুত্র ও দুধকুমার নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় প্লাবিত হয়ে পড়েছে নতুন নতুন এলাকা।
স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, ধরলার পানি সেতু পয়েন্টে বিপৎসীমার ২২ সেন্টিমিটার ও ব্রহ্মপুত্রের পানি চিলমারী পয়েন্টে বিপৎসীমার ২২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
স্থানীয় মানুষদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বন্যার পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে পড়েছে নিম্নাঞ্চল ও নদ-নদীর অববাহিকায় বসবাসকারী চরাঞ্চলের মানুষজন। দুর্গম চরাঞ্চলের অনেক পরিবার নৌকা ও বাঁশের মাচানে আশ্রয় নিয়ে দিনপার করছে। আবার অনেকেই ঘর-বাড়ি ছেড়ে উঁচু সড়কে আশ্রয় নিতে শুরু করেছে। বসতবাড়ি পানিতে তলিয়ে থাকায় দেখা দিয়েছে শুকনো খাবার ও বিশুদ্ধ পানির সংকট। নিজেদের পাশাপাশি গবাদি পশুর খাদ্য সংকট নিয়েও বিপাকে পড়েছেন তারা। পানি বৃদ্ধির ফলে এসব চরাঞ্চলের অনেকেই তাদের গবাদি পশু নিয়ে উঁচু জায়গায় আশ্রয়ের প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
বন্যাকবলিত এলাকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গুলোতে পাঠদান রেখেছে শিক্ষা বিভাগ।
কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়নের চর পারবতীপুরের জব্বার আলী বলেন, পানি বৃদ্ধির ফলে ঘরের ভেতর আর থাকার উপায় নেই। বর্তমানে নৌকায় অবস্থান করছি। ৩/৪ দিন ধরে পানিতে বসবাস করছি। চুলা জ্বালাতে পারছি না। এখন পর্যন্ত কোনো সহযোগিতা পাইনি।
জেলার উলিপুর উপজেলার বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের মশালের চরের সহরত জানান, কোনো রকমে ঘরের মাঁচান উঁচু করে বউ বাচ্চা নিয়ে আছি। এভাবে পানি বৃদ্ধি পেতে থাকলে আর ঘরে থাকারও উপায় থাকবে না।
উলিপুর উপজেলার বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বাবলু মিয়া বলেন, আমার ইউনিয়নের মশালের চর ও পূর্বমশালেরসহ সবমিলে প্রায় ৫ শতাধিক পরিবার পানিবন্দি। এরমধ্যে কিছু পরিবার ফকিরের চর আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয় নিলেও আশ্রয় কেন্দ্রটিও ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে। উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করেও এখন পর্যন্ত কোনো ত্রাণ সহায়তা পাইনি।
রৌমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আশরাফুল আলম রাসেল বলেন, ভারীবর্ষণে ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে উপজেলার ৬টি ইউনিয়নের বেশিরভাগ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে মনিটরিং টিম ও বন্যা নিয়ন্ত্রণ সমন্বয় কক্ষ চালু করা হয়েছে।
কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল্ল্যাহ আল মামুন বলেন, পানি তোড়ে নাগেশ্বরী উপজেলার বামনডাঙ্গা ইউনিয়নের ১শ মিটার বাঁধ ভেঙ্গে গেছে। আপাতত পানি সামান্য বৃদ্ধি পেলেও অনেকটাই স্থিতিশীল অবস্থায় রয়েছে। এখন পর্যন্ত যা পুর্বাভাস রয়েছে তাতে আগামী দুই দিন পর্যন্ত পানি সামান্য আপ-ডাউন করতে পারে। তারপর পানি নেমে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, বন্যা কবলিতদের জন্য ৯ উপজেলায় ২শ ৯৫ মেট্রিক টন চাল, নগদ ১১ লাখ টাকা, শুকনো খাবার ১হাজার প্যাকেট, ১৭ লাখ টার শিশু খাদ্য ও ১৯ লাখ টাকার গো-খাদ্য বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। জেলার রৌমারী, রাজিবপুর ও কুড়িগ্রাম সদর উপজেলায় ত্রাণ কার্যক্রম শুরু হয়েছে। বাকি উপজেলাগুলোতেও দ্রুত শুরু হবে।
সারাবাংলা/এএম