‘পদ্মা সেতুর সঙ্গে থাকতে না পেরে বিশ্বব্যাংকই বঞ্চিত হয়েছে’
১৮ জুন ২০২২ ১৯:০৮
ঢাকা: পদ্মা সেতুর মতো এ রকম বড় প্রকল্পে থাকতে না পেরে বিশ্বব্যাংকই বঞ্চিত হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রীর অর্থবিষয়ক উপদেষ্টা মসিউর রহমান।
শনিবার (১৮ জুন) রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণাবিষয়ক উপকমিটি আয়োজিত জাতীয় এক সেমিনারে তিনি এমন মন্তব্য করেন।
সেমিনারে সভাপতির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রীর অর্থবিষয়ক উপদেষ্টা মসিউর রহমান বলেন, ‘পদ্মা সেতুর অর্থায়ন নিয়ে দুর্নীতির বিষয়ে অভিযোগ উঠলে, আমার কাছে নালিশ আসার পর বিশ্বব্যাংককে আমি বললাম, এমন জায়গায় যেন বিচার করা হয় যেখানে আমার আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ থাকে। তখন এ বিষয়ে আলোচনার জন্য বিশ্বব্যাংক, এডিপি ও জাইকা অফিসে আমাকে ডাকা হলে আমি যায়নি। এর পর বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূতরা আমার কাছে আসেন। এর এক পর্যায়ে বিশ্ব ব্যাংক আমাকে পরামর্শ দেয়, তুমি পদত্যাগ করো, দেশ ছেড়ে চলে যাও। আমি বললাম, আমি দেশ ছেড়ে যাব না। আমাকে নানা পরামর্শ দেয় তারা। কিন্তু আমি রাজি হইনি।’
তিনি বলেন, ‘আমি ওদের বলেছিলাম, তোমরা দুর্নীতি সম্পর্কে যেসব তথ্য দিচ্ছ তা আমাদের দেশের পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত হচ্ছে। এসব পত্র-পত্রিকার মধ্যে দুয়েকটি সংবাদপত্র যারা আওয়ামী লীগের সঙ্গে বৈরীভাব রয়েছে এবং আরও দুয়েকটির বিরুদ্ধে জঙ্গি সম্পৃক্ততার অভিযোগ রয়েছে। এসব বিষয় বিবেচনায় রাখার জন্যেও বলা হয়। এ সময় আমার ও পিএস’র অ্যাকাউন্ট হ্যাক হয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘তারা জানায়, এসব দুর্নীতির অভিযোগের বিষয়ে আদালতে গিয়ে অভিযোগ করবে না এবং কোনো মামলাও করবে না। তারা চেয়েছিল নালিশ করার মাধ্যমে যদি কাউকে শাস্তি দেওয়া যায়। তাদের জন্য এটাই ছিল বড় বিষয়। আমি মনে করি এ রকম বড় প্রকল্পে থাকতে না পেরে বিশ্ব ব্যাংক নিজেরাই বঞ্চিত হয়েছে, আমরা হইনি।’
সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেন, ‘পদ্মা সেতু দেশের দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের জন্য অর্থনৈতিক লাইফ লাইন রূপে কাজ করবে। বাণিজ্য, আঞ্চলিক বাণিজ্য, দক্ষিণ এশিয়ায় সংযোগ, শিল্পাঞ্চল গড়ে ওঠা, কৃষি সম্প্রসারণ, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিসহ আর্থসামাজিক উন্নয়নে অবদান রাখবে।’
তিনি বলেন, ‘পদ্মা সেতু বাঙালির আত্মমর্যাদা এবং আত্মনির্ভরতার প্রতীক। জাতি হিসেবে এটি আমাদের দীর্ঘদিনের লালিত স্বপ্ন। এত আকাঙ্ক্ষার এই সেতু আর স্বপ্ন নয়, এখন বাস্তব। এটি আমাদের অহংকার।’ স্পিকার আরও বলেন, ‘পদ্মা সেতু নির্মাণে বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশকে ঋণ প্রস্তাব দিতে সম্মত হয়। কিন্তু পরবর্তীতে দুর্নীতির ষড়যন্ত্র এনে চুক্তি প্রত্যাখ্যান করে। শুধু দুর্নীতির অনুমান করেই এই ঋণ প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করা হয়। এই সেতু নিয়ে নানান ষড়যন্ত্র হয়েছে। বিশ্বব্যাংক ভিত্তিহীন অভিযোগ করেছে। এই সব বাধা-বিপত্তি উপেক্ষা করে, জয় করে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু করেছেন প্রধানমন্ত্রী।’
তিনি আরও বলেন, ‘পদ্মা সেতু বাংলাদেশের বহুমাত্রিক ক্ষেত্র সৃষ্টি করেছে। পদ্মা সেতুকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশে শিল্প বিপ্লব হবে। পদ্মার ওই পাড়ে এখন নতুন শিল্পাঞ্চল গড়ে উঠবে, অর্থনৈতিক উন্নয়ন হবে। সেতুতে রেল যোগাযোগ চালু হলে ঢাকা থেকে কলকাতায় সংযোগ সহজ হবে। আন্তর্জাতিক যোগাযোগ বাড়বে।’
ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেন, ‘অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় বরিশালে বর্তমানে ১০ ভাগ দরিদ্র বেশি। এটা কমিয়ে আনতে সহায়তা করবে পদ্মা সেতু। যোগাযোগ উন্নয়নের ফলে সেখানকার কৃষকরা তাদের ফসলে বাজারমূল্য পাবে। উৎপাদন বাড়বে। এতে আর্থসামাজিক উন্নয়ন ঘটবে তাদের।’
তিনি বলেন, ‘পদ্মা সেতু কেবল ইট-পাথরের তৈরি নয়, এর সঙ্গে মিশে আছে আমাদের ভালোবাসা, গৌরব। শেখ হাসিনা নিজস্ব অর্থায়নেই এটা বাস্তবায়ন করেছে। বাংলাদেশের মানুষের ভালোবাসায় এটি তিনি বাস্তবায়ন করতে পেরেছেন।’
‘শেখ হাসিনার পদ্মা সেতু নির্মাণ: বিশ্ব ব্যবস্থায় বাংলাদেশ তথা উন্নয়নশীল দেশসমূহের এক যুগান্তকারী বিজয়’ শিরোনামে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক সেলিম মাহমুদ। তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুকন্যা রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা বিশ্বব্যাংকের মতো বিশ্ব মোড়লের খবরদারি ও হুমকি এবং ক্ষেত্র বিশেষে তাদের প্রলোভন উপেক্ষা করে যেভাবে পদ্মা সেতুর মতো এত বৃহৎ একটি ভৌত কাঠামো নিজস্ব উদ্যোগ ও অর্থায়নে নির্মাণ করতে পারলেন, এটি শুধু দক্ষিণ এশিয়া কিংবা এশিয়া মহাদেশে নয়, সমগ্র বিশ্বে একটি মাইলফলক ঘটনা হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে। বিশ্বব্যাংককে বাদ দিয়ে নিজের উদ্যোগে পদ্মা সেতু নির্মাণের ফলে বাংলাদেশের কী অর্জন হয়েছে আর এর বৈশ্বিক বা আন্তর্জাতিক প্রভাব কী; এই বিষয়ে আমাদের অনেকেরই ধারণা নেই। মোটা দাগে বলতে গেলে, আমাদের জাতীয় স্বার্থে এই প্রকল্প নিজেদের উদ্যোগে সফলভাবে সম্পন্ন করার ফলে বাংলাদেশের অর্থনীতি তথা সার্বিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে আমরা প্রায় পঞ্চাশ বছর এগিয়ে গেলাম।’
প্রবন্ধে তিনি বলেন, ‘বর্তমান বিশ্ব ব্যবস্থায় সবচেয়ে প্রভাবশালী আন্তঃরাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান বিশ্বব্যাংকের নানা অন্যায্য এবং অযাযিত হুমকি ও প্রতিবন্ধকতা উপেক্ষা করে বাংলাদেশের মতো একটি উন্নয়নশীল দেশের পক্ষে এই ধরণের একটি বিশাল কাজ সফলভাবে সম্পন্ন করার কারণে বিশ্বব্যবস্থায়ও এর সুদূরপ্রসারী প্রভাব পড়বে। এই ঘটনার ফলে বিশ্বব্যাংকসহ বহুপাক্ষিক ঋণ প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর বিপরীতে উন্নয়নশীল বিশ্বের দরকষাকষির ক্ষমতা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পাবে। শেখ হাসিনার এই সিদ্ধান্ত স্বল্পোন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলোতে এই বিশ্বমোড়লদের নানামুখী শোষণ আর খবরদারির উপর একটি বড় ধরনের আঘাত। এর ফলে স্বল্পোন্নত ও উন্নয়নশীল বিশ্বে বহুপাক্ষিক ঋণ প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর জাতীয় স্বার্থবিরোধী প্রভাব কমতে শুরু করবে। অর্থাৎ শেখ হাসিনার এই সিদ্ধান্ত শুধু বাংলাদেশের জাতীয় স্বার্থই রক্ষা করেনি, তার এই অসীম সাহসী সিদ্ধান্ত বর্তমান বিশ্ব ব্যবস্থায়ও এক পরিবর্তনের সূচনা করেছে।’
তিনি উল্লেখ করেন, আর্থিক ও অর্থনৈতিক, কারিগরি ও ভূ-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট বিশ্লেষণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কর্তৃক নিজস্ব উদ্যোগে পদ্মা সেতু নির্মাণের কারণে পাঁচটি ফলাফল দৃশ্যমান হচ্ছে— ১. নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতুর মতো বৃহৎ ভৌতকাঠামো সফলভাবে নির্মাণের ফলে আন্তর্জাতিকভাবে বাংলাদেশের আর্থিক ও অর্থনৈতিক সক্ষমতা প্রমাণিত হয়েছে। ২. বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলে দারিদ্র বিমোচন, দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ বৃদ্ধি, দেশের উন্নয়নকে আভ্যন্তরীণভাবে সব অঞ্চলে সুষম বণ্টনসহ দেশের সামষ্টিক অর্থনীতিতে এই সেতুর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকবে। ৩. সেতু নির্মাণ, এর মালিকানা ও পরিচালনায় বিদেশি নির্ভরতা না থাকায় জাতীয় স্বার্থ সমন্বিত হয়েছে। ৪. বাংলাদেশের এই উদ্যোগে আন্তর্জাতিক অঙ্গণে আমাদের দরকষাকষির ক্ষমতা বৃদ্ধিসহ রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায়ন হয়েছে। এবং ৫. শেখ হাসিনার এই সিদ্ধান্ত বর্তমান বিশ্ব অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় এক পরিবর্তনের সূচনা করেছে।
সেলিম মাহমুদ বলেন, ‘ঐতিহাসিকভাবে বাংলাদেশসহ পৃথিবীর সকল উন্নয়নশীল দেশ, এমনকি উন্নত বিশ্বের কিছু দেশও বৃহৎ ভৌত কাঠামো নির্মাণের ক্ষেত্রে বহুপাক্ষিক ঋণ প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন বিদেশি রাষ্ট্র কিংবা আন্তর্জাতিক সংস্থার ওপর নির্ভরশীল ছিল। ইতোপূর্বে নির্মিত বাংলাদেশের সকল বৃহৎ ভৌত কাঠামোই বিভিন্ন বিদেশি উন্নয়ন সহযোগীর সহায়তায় এবং কখনও কখনও তাদের অংশীদারিত্বে সম্পন্ন হয়েছে। শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ নেতৃত্বে এই প্রথম বাংলাদেশ কোন উন্নয়ন সহযোগীর সহায়তা ছাড়াই সম্পূর্ণ নিজস্ব উদ্যোগে এবং অর্থায়নে একটি বিশ্বমানের ভৌত কাঠামো নির্মাণ করল।’
বৃহৎ সেতুর মতো ভৌত কাঠামো নির্মাণ এবং এর মালিকানার বিষয়ে বিগত তিন দশক ধরে পৃথিবীর অনেক দেশেই নিজস্ব অর্থায়ন ও মালিকানার পরিবর্তে দেশি-বিদেশি বেসরকারি বিনিয়োগকারীর অর্থায়ন এবং ভৌত কাঠামোগুলোতে তাদের মালিকানাই রাখা হয়। মূলত BOO (Build Own and Operate), BOT (Build, Own and Transfer) এবং পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশীপ পদ্ধতিতে এই ধরণের বৃহৎ ভৌত কাঠামো নির্মাণ, এর মালিকানা, পরিচালনা ইত্যাদি বিষয় নির্ধারিত হয়। পৃথিবীর দেশে দেশে সরকারের সীমিত আর্থিক ও কারিগরি সক্ষমতার কারণেই এই সকল পদ্ধতি গ্রহণ করা হয়। এই পদ্ধতিতে ভৌত কাঠামোতে রাষ্ট্রের সরাসরি নিয়ন্ত্রণ থাকে না।’
এই ব্যবস্থায় অনেক ক্ষেত্রেই জনসাধারণ ও ভোক্তাগণের পক্ষে প্রকৃত সেবা পাওয়ার ক্ষেত্রে নানা প্রতিকূলতার সৃষ্টি হয়। এই পদ্ধতিতে ক্ষেত্র বিশেষে জাতীয় স্বার্থও বিপন্ন হওয়ার আশঙ্কা থাকে। শেষ হাসিনার উদ্যোগে নির্মিত পদ্মা সেতুর উপর কেবল বাংলাদেশেরই মালিকানা ও নিয়ন্ত্রণ থাকবে। এই সেতুর উপর কোনো বিদেশি কর্তৃপক্ষের কোনো মালিকানা বা কর্তৃত্ব থাকছে না। চীন শুধু ঠিকাদারি কাজ করেছে। দেশের দুই প্রান্তের মধ্যে সংযোগ স্থাপনকারী, রাষ্ট্রের জন্য গুরুত্বপূর্ণ এই সেতুর উপর কোনো বিদেশি কর্তৃপক্ষের কোন ধরনের নিয়ন্ত্রণ থাকছে না।’
তিনি জানান, উন্নয়ন সহযোগী হিসেবে বিশ্ব ব্যাংকের জন্ম ১৯৪৪ সালে হলেও মূলত আশির দশক থেকে এই প্রতিষ্ঠানটি উন্নয়নশীল বিশ্বের অর্থনীতিতে বিশেষ প্রভাব বিস্তার করে আসছে। বিশ্ব ব্যাংক মূলত তাদের Structural Adjustment Programe এর মাধ্যমে তৎকালীন তৃতীয় বিশ্বে এক ধরণের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছিল। এটি অনস্বীকার্য যে, বহুপাক্ষিক ঋণ।
তিনি আরও বলেন, ‘বিশ্বব্যাংক বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশ সম্পর্কে ভুল বার্তা দিয়েছিল। ১৯৯৮ সালের বন্যার সময় তারা ভবিষ্যত বাণী করেছিল- বাংলাদেশের ২ কোটি মানুষ না খেয়ে মারা যাবে। শেখ হাসিনার সুদক্ষ নেতৃত্বে ওই ভয়াবহ বন্যায় একটি মানুষও না খেয়ে মরেনি। ২০০৯-১০ সালে শেখ হাসিনা যখন দেশের অর্থনীতিকে বেগবান করার জন্য জরুরি ভিত্তিতে ও জোরালোভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন করেছিলেন। তখন বিশ্বব্যাংক বলেছিল ওইসব বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য দেশের সামষ্টিক অর্থনীতি ধসে পড়বে। তাদের সেইসব খাতে শেখ হাসিনার সাহসী ও বলিষ্ট পদক্ষেপের কারণে বাংলাদেশের অর্থনীতি বিস্ময়করভাবে উন্নতি লাভ করেছে।’
সেলিম মাহমুদ বলেন, ‘বিদেশে নানা লবিস্ট ফার্মের মাধ্যমে মিলিয়ন ডলার ব্যয় করে অশুভ গোষ্ঠী বাংলাদেশের ক্ষতি করতে চেয়েছে। স্বাধীন, সার্বভৌম বাংলাদেশের জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের কন্যা শেখ হাসিনার আত্মবিশ্বাস, মনোবল আর সুদক্ষ নেতৃত্বের নস্যাৎ করে এবং ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের মতো বিশ্ব মোড়লদের খবরদারিকে অগ্রাহ্য করে রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা তার আকাশচুম্বী মনোবল, ইস্পাত কঠিন দৃঢ়তা, অসীম সাহস এবং অতুলনীয় মেধা ও দক্ষতা দিয়ে বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ ভৌতকাঠামো পদ্মা সেতু নির্মাণের মাধ্যমে বাঙালির স্বপ্ন জয় করেছেন। এ জন্য একজন বাঙালি হিসেবে তাকে আমার অভিবাদন। তার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আরও বহুদূর এগিয়ে যাবে।’
পদ্মা সেতু নির্মাণের প্রধানমন্ত্রীর পরিকল্পনা, অর্থায়ন এবং ষড়যন্ত্রের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী সামসুল আলম বলেন, ‘অনেক বাধা-বিপত্তি উতরিয়ে আমরা পদ্মা সেতু নির্মাণ করেছি এবং আজকের এই পর্যায়ে এসেছি। এটা নিয়ে অনেক ষড়যন্ত্র করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীকেও নিয়ে অনেক ষড়যন্ত্র করা হয়েছে। তিনি এখনো ষড়যন্ত্রের মধ্যে আছেন। আমি আশা করব, যারা দেশ প্রেমিক, যারা বাঙালি জাতির স্বাধীনতার চেতনায় বিশ্বাসী, তাদের জনগণকে সঙ্গে নিয়ে এসব ষড়যন্ত্র মোকাবিলায় সব সময় তৎপর থাকতে হবে।’
সেমিনারে অর্থনীতিবদ কাজী খলিকুজ্জামান আহমদ বলেন, ‘পদ্মা সেতু নির্মাণ করাকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রাজনৈতিক সত্তা দিয়ে বিবেচনা করেছেন। এবং এই সেতু নির্মাণ করে তিনি তার রাজনৈতিক প্রজ্ঞার পরিচয় দিয়েছেন। এই সেতু দেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ও যোগাযোগ ব্যবস্থাকে আরও সমৃদ্ধ করবে এবং ভবিষ্যতে আমাদের অর্থনৈতিক অগ্রগতিকে আরও সুসংহত, সুদৃঢ় ও ত্বরান্বিত করবে। এই সেতু নির্মাণ শেখ হাসিনার প্রজ্ঞা ও দূরদর্শিতার জন্যই সম্ভব হয়েছে।’
পদ্মা সেতু প্রকল্পের বিশেষজ্ঞ প্যানেলের সদস্য পানি সম্পদ ও জলবায়ুবিষয়ক বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. আইনুন নিশাত বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় পদ্মা সেতুর মান নিয়ে কোনো ধরনের আপস করা হয়নি। আমি পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজের সঙ্গে শুরু থেকেই ছিলাম, আমি বিষয়টা জানি।’
ব্রাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক এই উপাচার্য আরও বলেন, ‘যত ধরনের দুর্যোগ হতে পারে, আমরা সব মাথায় রেখেই সেতু নির্মাণ করেছি। পদ্মার মতো নদীতে ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানবে। কত জোরে আঘাত হানতে পারে, সেগুলো মোকাবিলা করবার মতো সক্ষমতা তৈরি করেই আমরা সেতু নির্মাণ করেছি। পদ্মা অত্যন্ত শক্তিশালী একটি নদী। যখন এর প্রশস্ততা কমে, তখন গভীরতা বাড়ে। মাওয়া এলাকায় এসে নদীর প্রশস্ততা যেমন কমেছে, তেমনই গভীরতাও বেড়েছে। নদীর ধর্ম বুঝে, তারপর ব্যবস্থা নিতে হবে।’
সাবেক প্রধান তথ্য কমিশনার ও দৈনিক আজকের পত্রিকার সম্পাদক গোলাম রহমান বলেন, ‘পদ্মা সেতু তৈরিতে নতুন অর্থনৈতিক দিশা পেয়েছি আমরা। এর ফলে আমাদের দেশের প্রবৃদ্ধি বাড়বে। এই সেতু বিশ্বের বুকে বাঙালি জাতির মর্যাদা, সম্মান আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। আমাদের আচার-আচরনে, চাল-চলনে, জীবন-যাত্রায় অনেক উন্নতি লাভ করেছি। আরও উন্নতি করতে থাকব। সুতরাং শিক্ষা-দীক্ষায়, সংস্কৃতিতে সব জায়গায় আমাদের উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে হবে। জাতি হিসেবে উন্নতি করতে হলে আমাদের সামগ্রিক একটা পরিকল্পনা থাকতে হবে। সামগ্রিক উন্নতির ক্ষেত্রে এর অন্যতম একটি হচ্ছে যোগাযোগ ব্যবস্থা। সে জায়গায় পদ্মা সেতুর অবদান অনন্য সাধারণ।’
সেমিনারটি সঞ্চালনা করেন শবনম আজিম। এতে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার কয়েক’শ মানুষ অংশ নেন।
সারাবাংলা/কেআইএফ/পিটিএম