Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘মৃত্যুকূপ’ ছেড়ে আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে অনীহা

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট
১৮ জুন ২০২২ ২০:৩৪

রাঙ্গামাটি: গত দুই দিনের ভারী ও মাঝারি মানের বৃষ্টিতে রাঙ্গামাটিতে পাহাড় ধসের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। শুক্রবার রাত থেকেই রাঙ্গামাটি শহর এবং বিভিন্ন উপজেলায় পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাসরতদের নিরাপদে আশ্রয় নেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন। এ অবস্থায়ও পৌর এলাকায় খোলা ২০টি আশ্রয়কেন্দ্রে আসতে অনীহা দেখা যাচ্ছে ওইসব এলাকার বাসিন্দাদের মধ্যে।

জেলা আবহাওয়া অফিসের তথ্যমতে, গত ২৪ ঘণ্টায় রাঙ্গামাটিতে ৯৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। শনিবার (১৮ জুন) থেকে তিনদিন ভারী বর্ষণের পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

শুক্রবার সন্ধ্যা থেকেই পরিস্থিতি মোকাবিলায় মাঠে তৎপর জেলা প্রশাসন ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা। একইসঙ্গে শহরে মাইকিং করা হচ্ছে। কিন্তু বিপদগ্রস্ত এসব মানুষের মধ্যে আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়া নিয়ে অনীহা রয়েছে। শুক্রবার রাতে বন্দরনগরী চট্টগ্রামে পাহাড় ধসে দুই পরিবারের ৪জনের মৃত্যুর খবরে শনিবার সকাল থেকে ঝুঁকিপূর্ণদের নিরাপদে সরিয়ে নিতে আরও তৎপর হয়ে ওঠে প্রশাসন।

এদিকে, শনিবার সম্ভাব্য দুর্যোগপূর্ণ পরিস্থিতি মোকাবিলায় নিয়ন্ত্রণকক্ষ (কন্ট্রোল রুম) খুলেছে জেলা প্রশাসন। সকাল থেকে জেলা শহরের লোকনাথ মন্দির, শিমুলতলী, রূপনগর, মোনঘরসহ অন্যান্য এলাকায় কাজ করছে ৪টি টিম। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে জেলা প্রশাসনের খোলা আশ্রয়কেন্দ্রগুলো হলো- রিজার্ভবাজার শহীদ আব্দুল আলী একাডেমি, নিউ রাঙ্গামাটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, জেলা শিশু একাডেমি, রাঙ্গামাটি সিনিয়র মাদ্রাসা, পুলিশ লাইনস সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, রাঙ্গামাটি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, অভিলাষ ক্রিকেট ক্লাব, ওমদামিয়া হিল পৌর জুনিয়র হাইস্কুল, ডিয়ারপার্ক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, স্বর্ণটিলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, যুব উন্নয়ন প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় আঞ্চলিক ভবন, পৌর জুনিয়র হাইস্কুল, বিএম ইনস্টিটিউট, মোনঘর ভাবনাকেন্দ্র, বিএডিসি অফিস ভবন, কাঁঠালতলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পরিবার পরিকল্পনা পরিদর্শিকা ইনস্টিটিউট, রাণী দয়াময়ী উচ্চ বিদ্যালয় ও গোধূলী আমানতবাগ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।

বিজ্ঞাপন

ভেদভেদী সনাতন পাড়ার বাসিন্দা মো. সেলিম মিয়া বলেন, শুক্রবার সকাল থেকেই বৃষ্টি হচ্ছে; রাতেও প্রচুর বৃষ্টি হয়েছে। আমার বাড়ির কিছু মাটি সরে পড়েছে। রাত থেকে প্রশাসনের লোকজন আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে মাইকিং করছে। বেশি বৃষ্টি হলে আশ্রয়কেন্দ্রে যাব। এখন গিয়ে কী হবে?

রাঙ্গামাটির জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, দুর্যোগ পরিস্থিতি মোকাবিলায় ৪টি টিম গঠন করা হয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলো থেকে লোকজনকে সরিয়ে নিতে ইউএনও ও জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা মাঠে আছেন। অনেকে আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে আগ্রহ দেখাচ্ছে না। আমরা তাদেরকে ফোর্স করে হলেও নিয়ে যাব। এ বিষয়ে পুলিশ-সেনাবাহিনী আমাদের সহায়তা করছেন।

রাঙ্গামাটি পৌরসভার প্যানেল মেয়র কালায়ন চাকমা জানান, শনিবার সকালে ভেদভেদী শিমুলতলী, রূপনগর এলাকাসহ বেশ কয়েকটি এলাকায় গিয়েছি। মানুষজন আশ্রয়কেন্দ্রে আসতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন না।

জেলা প্রশাসনের হিসাবে, রাঙ্গামাটি পৌর এলাকাসহ জেলার ১০ উপজেলায় আনুমানিক প্রায় ১৫ হাজার মানুষ পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাস করছেন। তবে ২০১৭ সালের ১৩ জুন ভয়াবহ পাহাড় ধসের পরও থেমে নেই ঝুঁকিতে বসতি। বিগত ৫ বছরে নতুন করে বসতি স্থাপনা করা হয়েছে। তবে কী পরিমাণ নতুন বসতি গড়ে উঠেছে নির্দিষ্ট তালিকা নেই জেলা প্রশাসন কিংবা স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের কাছে।

প্রসঙ্গত, ২০১৭ সালের ১৩ জুন পার্বত্য জেলা রাঙ্গামাটিতে ভয়াবহ পাহাড়ধসের ঘটনায় চার সেনাসদস্যসহ ১২০ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। ওই সময় রাঙ্গামাটি-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ঘাগড়া কলাবাগান এলাকায় প্রধান সড়কটি সম্পূর্ণ ধসে যাওয়ার কারণে টানা ৯দিন সারাদেশের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে রাঙ্গামাটি। এরপরের বছর ২০১৮ সালের ১২ জুন জেলার নানিয়ারচর উপজেলায় পাহাড় ধসে ১১ জন মারা যান। ২০১৯ সালে জেলার কাপ্তাইয়ে মারা যান আরও ৪ জন। এছাড়াও বিগত বছরগুলোতে রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান জেলাতে পাহাড় ধসে বহু হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। তাই বর্ষা মৌসুম বৃষ্টি এলেই আতঙ্ক দানা বাঁধে পাহাড়ে।

সারাবাংলা/এএম

পাহাড় ধস রাঙ্গামাটি

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর