Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

শেষ মুহূর্তে চলছে আর্কিটেকচারাল লাইটিংয়ের কাজ

আসাদ জামান, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
১৯ জুন ২০২২ ১৫:৩৪

পদ্মা সেতু থেকে ফিরে: উদ্বোধনের আর মাত্র ৬ দিন বাকি। যানবাহন চলাচলের জন্য সম্পূর্ণ প্রস্তুত স্বপ্নের পদ্মা সেতু। তবে ১৬ কোটি মানুষের আবেগ-অনুভূতিতে মোড়ানো পদ্মা সেতু শুধু যানবাহন চলাচল, সময়কে মুঠোয় পুরা বা জাতীয় অর্থনীতিতে গতি সঞ্চারের জন্য নয়; এটি বাঙালির আত্মমর্যাদা ও গৌরবের প্রতীক। সক্ষমতার মানদণ্ড।

এ সব দিক মাথায় রেখেই ১৬ কোটি বাঙালির বহুল প্রতীক্ষিত, পরম কাঙ্ক্ষিত ‘পদ্মা বহুমুখী সেতু’তে যুক্ত হয়েছে নানা অনুষঙ্গ। যেমন— পদ্মা সেতু দিয়ে গ্যাস যাচ্ছে দক্ষিণ পশ্চিমের ২১টি জেলায়। সেতুর ওপর দিয়ে গ্যাস সঞ্চালন লাইনের কাজ প্রায় শেষ। দ্বিতল বিশিষ্ট সেতুর নিচতলা দিয়ে অর্থাৎ সেতুর রেলপথ ঘেষে বসানো হয়েছে দৈত্যাকৃতির পাইপ। গ্যাস লাইনের মেগাফিটিংসে দেওয়া হচ্ছে ধূসর রংয়ের আঁচড়। আর পাইপ তো হলুদ রংয়ে রাঙানো হয়েছে আগেই।

বিজ্ঞাপন

সেতুর ওপরে সড়ক বাতি জ্বালানো হয়েছে সপ্তাহ খানেক আগে। ইকোটক-২ নামের এই সড়ক বাতির কালার টেম্পারেচার ৫ হাজার ৭০০ কেলভিন। ২০০ ওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন এ বাতিগুলোর মূল কাজ হবে সেতুর সড়কপথ আলোকিত করা। আর সেতুর সৌন্দর্যবর্ধন বা আলোকসজ্জার কাজটি হবে স্ট্রাকচারাল বা আর্কিটেচারাল লাইটিংয়ের মাধ্যমে।

সন্দেহের কোনো অবকাশ নেই যে, পদ্মা সেতুর আর্কিটেকচারাল লাইটিং বা আলোকসজ্জার কাজটি হবে এক কথায় অসাধারণ। লাল-নীল ও সবুজ— এই তিনটি রংয়ের আধিপত্য থাকবে স্ট্রাকচারাল লাইটিংয়ে। বিভিন্ন উৎসব এবং জাতীয় দিবসে এই তিন রং-এর আলো প্রক্ষেপণের মাধ্যমে দিবস ও উৎসবের মূল থিম ফুটিয়ে তোলা হবে স্বপ্নের পদ্মা সেতুর অবকাঠামো জুড়ে।

এ জন্য সেতুর স্প্যানের সঙ্গে স্থায়ীভাবে বসানো হচ্ছে পার্সিও-৩০ নামের ৪০ ওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন বিশেষ লাইট। এই লাইটের কালার টেম্পারেচার ৮ জিবি। পুরো সেতুতে ২ হাজার ৬২৪ টি পার্সিও-৩ বাতি স্থাপন করা হচ্ছে। এর বিম অ্যাঙ্গেল হবে ১১ ডিগ্রি।

বিজ্ঞাপন

এ ছাড়া সেতুর প্রতিটা পিলারের স্টেইপ ডিজাইনের ঠিক নিচে দুই পাশে দুইটি করে মোট চারটি পার্সিও-৩০ লাইট স্থাপন করা হচ্ছে। ৪০ ওয়াট ক্ষমতা সম্পন্ন এ লাইটের বিম অ্যাঙ্গেল হবে ৪০ডিগ্রি। পুরো সেতুতে এ লাইট স্থাপন করা হবে ১৬৮টি।

সেতুর স্প্যানের নিচের অংশে ‘আর্কেটিয়া টুয়েল ফোর্টি’ নামে বিশেষ এক ধরনের লাইট স্থাপন করা হচ্ছে। এটিও হবে ৪০ ওয়াট ক্ষমতা সম্পন্ন। এর বিম অ্যাঙ্গেল ১০ ডিগ্রি । পুরো সেতুতে মোট ১৬৮টি আর্কেটিয়া টুয়েল ফোর্টি স্থাপন করা হবে।

পিলারের স্টেইপ ডিজাইনের ঠিক উপরে স্থাপন করা হচ্ছে ‘ডায়না ড্রাম’ নামের বিশেষ ধরনের লাইট। ২১০ ওয়াট ক্ষমতা সম্পন্ন এই লাইট প্রতিটি পিলারে ৬টি করে থাকবে। পুরো সেতুতে মোট ২৫২টি ‘ডায়না ড্রাম’ লাইট বসানো হবে। এর কালার টেম্পারেচার হবে ৮ জিবি ডাব্লিউ আর বিম অ্যাঙ্গেল ৮ ডিগ্রি।

সেতুর স্প্যানের সঙ্গে লম্বালম্বিভাবে স্থাপন করা হচ্ছে ‘ফ্ল্যাক্স এস্কেট্রিয়াম স্টেডিও’ নামে বিশেষ ধরনের লাইট। ১৫ ওয়াট ক্ষমতা সম্পন্ন এ লাইটগুলোর কালার টেম্পারেচার হবে ৮ জিবি ডাব্লিউ। বিম অ্যাঙ্গেল ১২০ ডিগ্রি।

স্প্যানের ওপরের অংশের পেটের সঙ্গে ‘ফ্রাঙ্কো’ নামের ২০ ওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন বিশেষ এক ধরনের লাইট স্থাপন করা হচ্ছে। এই লাইটের কালার টেম্পারেচার ৩ হাজার কেলভিন ও বিম অ্যাঙ্গেল ১৪ ডিগ্রি। পুরো সেতুতে ৬ হাজার ৫৬টি ফ্রাঙ্কো লাইট স্থাপন করা হবে।

পিলারের নিচের অংশ অর্থাৎ নদীর পানি থেকে সবচেয়ে কাছের দূরত্বে স্থাপন করা হবে ‘এফ এ-১৪৩ ব্রিজ লাইট’। এ লাইটের কালার টেম্পারেচার ৮ জিবি ডাব্লিউ। প্রতিটি পিলারে ৩টি করে মোট ১২৬ টি ব্রিজ লাইট স্থাপন করা হবে পুরো সেতুতে।

এ ছাড়া সেতুর থাকবে ডে-লাইট সেন্সর। দিনের আলোতে কোনো তারতম্য থাকলে এই প্রযুক্তি সেই তারতম্য দূর করে সেতুকে দেবে বর্ণিল আলোকচ্ছটা।

সেতু উদ্বোধনের ৯ দিন আগে গত বৃহস্পতিবার (১৬ জুন) সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় আর্কিটেচারাল লাইটিংয়ের কাজ চলছে পুরোদমে। স্ট্রাকচারাল লাইটিংয়ের জন্য বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন স্থাপনের কাজ পাওয়া ‘অ্যাডেক্স করপোরেশন লিমিটেড’-এর দক্ষ শ্রমিক, প্রকৌশলী এবং বিশেষজ্ঞ টিম দিন-রাত সেতুর মাওয়া ও জাজিরা প্রান্তে কাজ করছেন।

সেতুর মাওয়া প্রান্ত থেকে জাজিরা প্রান্তের দিকে বিভিন্ন ব্যাসার্ধের হাজার হাজার মিটার ক্যাবল পাইপ স্থাপন করছেন তারা। সেতুর নিচতলায় রেলপথের পাশে স্টিল প্লেটের নিচ দিয়ে পরম দক্ষতায় টেনে নেওয়া হচ্ছে ক্যাবল পাইপ। এই পাইপের ভেতর দিয়ে বিদ্যুতের তার সংযোগের মাধ্যমে জ্বালানো হবে সেতুর হাজার হাজার স্ট্রাকচারাল লাইট। এই লাইটের আলোয় উদ্ভাসিত হবে পুরো সেতু।

তবে সেতু উদ্বোধনের আগে শেষ হচ্ছে না স্ট্রাকচারাল লাইটিংয়ের কাজ। আরও প্রায় মাস খানেক সময় লেগে যাবে ক্যাবল পাইপ স্থাপনেই। ক্যাবল পাইপ স্থাপন শেষে এর ভেতর দিয়ে বিদ্যুতের তার টেনে নিতে লেগে যাবে আরও কিছু দিন।

শুধু বিদ্যুৎ লাইন নয়, নানা আকৃতির এই ক্যাবল পাইপের ভেতর দিয়ে ইন্টারনেট, ওয়াইফাই, স্যাটেলাইট, এবং টেলিফোনের লাইনসহ নানা ধরনের অপটিক্যাল ফাইবার লাইন সংযোগ স্থাপন করা হবে। অর্থাৎ মাল্টি কমিউনিকেশনের কাজটি হবে এই স্ট্রাকচারাল লাইটিং সিস্টেমের জন্য স্থাপন করা ক্যাবল পাইপের ভেতর দিয়ে।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে অ্যাডেক্সের প্রকৌশলী কে এম মেহেদী হাসান সারাবাংলাকে বলেন, ‘পুরো সেতুকে আলোকিত করার জন্য যে আর্কিটেকচারাল লাইটিংয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে, সেটিরই বিদ্যুৎ সংযোগের কাজ আমরা করছি। কাজ শেষ করার জন্য ১৫ জুলাই পর্যন্ত আমাদেরকে সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে। আশা করছি, বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যেই এ কাজ শেষ করতে পারব।’

‘শুধু সেতুর লাইটিংয়ের জন্য নয়, এই ক্যাবল পাইপের ভেতর দিয়ে পদ্মার এ পার থেকে ওপর পর্যন্ত অপটিক্যাল ফাইবার লাইনও স্থাপন করা যাবে। মোটামুটি পদ্মা সেতুতে যে মাল্টি কমিউনিকেশন সিস্টেম, সেটা এই ক্যাবল পাইপের ভেতর দিয়েই হবে’— বলেন কে এম মেহেদী হাসান।

সারাবাংলা/এজেড/একে

পদ্মা নদী পদ্মা সেতু সেতুতে লাইটিং

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর