তিস্তার পানি বেড়েই চলেছে, প্লাবিত হচ্ছে গ্রামের পর গ্রাম
২০ জুন ২০২২ ১৮:৪৫
রংপুর: উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল আর টানা বৃষ্টির ফলে রংপুরের তিস্তা, ব্রহ্মপুত্র ও ধরলা নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। একইসঙ্গে এ অঞ্চলের অন্যান্য নদ-নদীর পানি বৃদ্ধিও অব্যাহত রয়েছে। ফলে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়ে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে।
রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আহসান হাবীব জানিয়েছেন, সোমবার দুপুর ১২টায় লালমনিরহাটের ডালিয়া ব্যারেজ পয়েন্টে ৫২ দশমিক ৮৮ সেন্টিমিটার পানি বেড়েছে। যা বিপৎসীমার ২৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। একই সময়ে রংপুরের কাউনিয়া পয়েন্টে বিপৎসীমার ৩৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে পানি প্রবাহিত হয়।
তিনি জানান, তিস্তা অববাহিকার উজানে দ্রুতগতিতে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় রংপুরের গঙ্গাচড়া, কাউনিয়া ও পীরগাছায় বিপৎসীমার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হতে পারে। সংশ্লিষ্ট সব নদীর অববাহিকায় বসবাসরত জনসাধারণকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।
এদিকে তিস্তাসহ বিভিন্ন নদ-নদীর পানি বৃদ্ধির কারণে দিশেহারা হয়ে পড়েছে রংপুর অঞ্চলের বন্যা দুর্গতরা। পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন প্রায় অর্ধলক্ষাধিক মানুষ। তাদের বিশুদ্ধ পানি ও খাবারের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার তিস্তা নদীর তীরবর্তী নোহালী, আলমবিদিতর, কোলকোন্দ, লক্ষিটারী, সদর, গজঘণ্টা ও মর্ণেয়া, কাউনিয়া উপজেলার বালাপাড়া, টেপামধুকুর, পীরগাছা উপজেলার ছাওলা এবং তাম্বলপুর ইউনিয়নের তিস্তার চরাঞ্চল ও নিম্নাঞ্চলের বাদামসহ বিভিন্ন ফসলি জমি তলিয়ে গেছে। এতে হাজার হাজার বাসা-বাড়িতে হাঁটু থেকে কোমর পর্যন্ত পানি।
গঙ্গাচড়ার লক্ষ্মীটারী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল-হাদী বলেন, আমার ইউনিয়নের পাঁচটি ওয়ার্ডের ইতোমধ্যেই ১০ হাজার বাড়ি-ঘর তলিয়ে গেছে। আমরা যতটুকু সহযোগিতা করছি। তা প্রয়োজনের তুলনায় একেবারেই সামান্য। ইতোমধ্যে বিভিন্ন এলাকায় ভাঙন দেখা দিয়েছে।
গজঘণ্টা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান লিয়াকত আলী জানান, প্রতিদিনই তার ইউনিয়নের চরাঞ্চল ও নিম্নাঞ্চলে পানি বাড়ছে। মানুষ পানিবন্দি হচ্ছে। বাদামের সব ক্ষেত নষ্ট হয়ে গেছে।
তিস্তা বাঁচাও নদী বাঁচাও সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক অধ্যক্ষ নজরুল ইসলাম হক্কানী বলেন, ভারতের সঙ্গে তিস্তা চুক্তির ব্যর্থতা ও সরকার ঘোষিত তিস্তা নিয়ে মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে কালক্ষেপণ এ অঞ্চলে প্রতিবছর ক্ষয়ক্ষতি বাড়াচ্ছে। বিশেষ করে গত বছরের বন্যার ধকল কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই বর্ষা মৌসুমের আগেই তিস্তা নদীতে পানি বাড়তে শুরু করেছে। এখন তিস্তা তীরবর্তী এলাকায় ভাঙন দেখা দিয়েছে। ঘরবাড়ি, গাছপালা, ফসলি খেতসহ অনেকের বসতভিটা তিস্তার পেটে চলে গেছে।
রংপুর জেলা প্রশাসক আসিব আহসান জানান, তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধির ফলে নদীপারের মানুষের সমস্যা হচ্ছে। সরকারিভাবে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারদের ত্রাণ ও শুকনা খাবার দেওয়ার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
সারাবাংলা/এসএসএ