সর্বজনীন পেনশন চালু করতে আইনের খসড়ায় অনুমোদন
২০ জুন ২০২২ ১৯:১৭
ঢাকা: দেশে সর্বজনীন পেনশন চালু করতে ‘সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থাপনা আইন, ২০২২’-এর খসড়ায় চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। খসড়ায় পৃথক পেনশন তহবিল ও ১৫ সদস্যের একটি পরিচালনা পর্ষদের মাধ্যমে এই পেনশনব্যবস্থা চালুর বিধান রাখা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, ১৮ থেকে ৫০ বছর বয়সী সব বাংলাদেশি এবং প্রবাসী বাংলাদেশিরাও এই পেনশনের আওতায় আসবেন।
সোমবার (২০ জুন) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে তার কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বৈঠকে এ আইনের খসড়া অনুমোদন দেওয়া হয়। বৈঠক শেষে বিকেলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম সচিবালয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, পেনশন ব্যবস্থাপনার জন্য অর্থমন্ত্রীকে চেয়ারম্যান করে ১৫ সদস্যের সমন্বয়ে একটি পরিচালনা পর্ষদ থাকবে। জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষ তহবিল নামের একটি আলাদা তহবিলও থাকবে। জাতীয় পরিচয়পত্রকে ভিত্তি ধরে ১৮ বছর থেকে ৫০ বছর পর্যন্ত সব বাংলাদেশি নাগরিক এই পেনশনের জন্য যোগ্য বিবেচিত হবেন। বিদেশে কর্মরত বাংলাদেশি কর্মীরাও নিজেদের নাম নিবন্ধন করে প্রিমিয়াম দিলে পেনশনে অন্তর্ভুক্ত হতে পারবেন।
৫০ বছরের বেশি বয়সীরা পেনশনের আওতায় আসার সুযোগ পাবেন কি না— এমন প্রশ্নের জবাবে খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, বিশেষ বিবেচনায় ৫০ বছরের বেশি বয়সী যারা, আলাদা একটি বিধি অনুযায়ী তাদেরও পেনশন স্কিমে আনা যাবে। তবে কমপক্ষে ১০ বছর চাঁদা দিতে হবে। চাঁদা দেওয়ার বয়স ৬০ বছর পূর্তিতে পেনশন তহবিলের পুঞ্জিভূত মুনাফাসহ জমার বিপরীতে পেনশন দেওয়া হবে।
বয়সের বিষয়টি ব্যাখ্যা দিয়ে সচিব বলেন, ১৮ বছর থেকে শুরু হবে ৬০ বছরে কাটডাউন হয়ে যাবে। এরপর ৬০ বছর থেকে তিনি যতদিন জীবিত থাকবেন, ততদিন পেনশন পেতে থাকবেন।
পেনশন পেতে হলে প্রিমিয়াম বা জমার পরিমাণ কত হবে— সাংবাদিকদের এ প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, এগুলো সব বিধির মাধ্যমে নির্ধারণ করা হবে। আজ ধরুন দুই হাজার টাকা করে। ২০ বছর পর তো এই দুই হাজার টাকার মান (ভ্যালু) এক থাকবে না। এ কারণে প্রিমিয়ামের পরিমাণ বিধি দিয়ে নির্ধারণ করে দেওয়া হবে। প্রিমিয়ামের একাধিক স্কেল থাকবে বলেও জানান তিনি।
খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, পেনশনাররা আজীবন অর্থাৎ মৃত্যুর আগে পর্যন্ত এ পেনশন পাবেন। ১৮ থেকে ৬০ বছর পর্যন্ত যারা প্রিমিয়াম দেবেন, মৃত্যুর আগ পর্যন্তই তারা পেনশন পাবেন। আর যদি পেনশনে থাকাকালীন, যেমন— পেনশন নেওয়া কেউ ৬২ বছর বয়সে মারা গেলেন। তার ৭৫ বছর বয়স পর্যন্ত যে সময় হয়, ওই সময় পর্যন্ত তার নমিনি বা ওয়ারিশরা এই বেনিফিট পেতে থাকবেন।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, যদি পেনশনার কেউ জীবিত থাকেন, তিনি মৃত্যুর আগ পর্যন্তই পেনশন পাবেন। ৬০ বছর বয়সে তো পেনশন শুরু হবে। কোনো কারণে ৬২ বছরে মারা গেলে উনার বয়স ৭৫ ধরলে সে পর্যন্ত উনার নমিনিরা পাবেন। পেনশনার যদি ৭৫ বছরের আগে মারা যান, তাহলে ৭৫ বছর হলে উনি যে পেনশন পেতেন, তা তার নমিনি পাবেন। এটাকে বিশেষ বেনিফিট হিসেবে রাখা হয়েছে।
কেউ তরুণ বয়সেই মৃত্যুবরণ করলে তার পেনশনের বিষয়ে আইনের খসড়ার তথ্য তুলে ধরে সচিব বলেন, ধরুন— কেউ ১৮ বছর বয়সে পেনশন দেওয়া শুরু করে ২৬ বছর বয়সে মারা গেলেন। তাহলে তিনি আট বছর প্রিমিয়াম দিলেন। তখন তার যে নমিতি থাকবে, তাকে মূল প্রিমিয়ামের জমা টাকা মুনাফাসহ দিয়ে দেওয়া হবে। এই নমিনি পেনশন পাবেন না, এককালীন টাকা দিয়ে দেওয়া হবে।
এই স্কিমে সরকারি চাকরিজীবীরা থাকবে না বলেও জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব। তিনি বলেন, তারা তো রেগুলার পেনশনেও আওতায় আছেনই। এর বাইরে এটি সরকারের ‘ওয়ান্ডারফুল’ একটি উদ্যোগ।
এর আগে, গত ৯ জুন জাতীয় সংসদে ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটেও সর্বজনীন পেনশন চালুর কথা বলেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। তিনি বলেন, ২০০৮ সালের নির্বাচনি ইশতেহারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বয়স্ক জনগোষ্ঠীকে একটি টেকসই ও সুসংগঠিত সামাজিক নিরাপত্তা কাঠামোর আওতায় বৃদ্ধকালীন সুরক্ষা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে জাতীয়ভাবে একটি সর্বজনীন পেনশন পদ্ধতি প্রবর্তনের অঙ্গীকার করেছিলেন। আমি অত্যন্ত আনন্দের সঙ্গে ঘোষণা দিচ্ছি, সরকার আগামী অর্থবছরে সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা চালুর সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
সারাবাংলা/এএইচএইচ/টিআর
পেনশনব্যবস্থা মন্ত্রিসভার বৈঠক সর্বজনীন পেনশন সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থাপনা আইন