বৃষ্টি কমলেও পানিবন্দি শহর, মেয়র দূষছেন সিডিএকে
২০ জুন ২০২২ ২০:৩২
চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রাম নগরীতে জলাবদ্ধতার জন্য ফের ‘জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের’ আওতায় খালে দেওয়া বাঁধকে দায়ী করেছেন সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী। চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) বাস্তবায়নাধীন এ প্রকল্পের কাজ শতভাগ শেষ না হওয়া পর্যন্ত জলাবদ্ধতার সমস্যা থাকবে বলে জানিয়েছেন তিনি।
গত শুক্রবার (১৭ জুন) থেকে তিন দিনের টানা বৃষ্টিতে চট্টগ্রাম নগরীর নিচু এলাকাগুলো পানিবন্দি হয়ে পড়ে। বৃষ্টির সঙ্গে জোয়ারের কারণে প্লাবিত হয়ে পড়ে বিস্তীর্ণ এলাকা। তবে জোয়ার শেষ হলে অধিকাংশ এলাকা থেকে পানি নেমে গেলেও কিছু এলাকায় পানি জমে আছে।
এর মধ্যে রোববার রাতভর তুমুল বর্ষণ হয়। এতে নগরীর আগ্রাবাদ সিডিএ আবাসিক এলাকা, বহদ্দারহাট, চান্দগাঁও আবাসিক এলাকা, হালিশহর, চকাবাজার, বাদুরতলা, কাগাসগোলা, রহমতগঞ্জ, তিন পুলের মাথা, ওয়াপদা, শান্তিবাগ, আনন্দবাজার, কাট্টলীর বিভিন্ন অংশ, ফইল্যাতলি, বাকলিয়ার বিভিন্ন এলাকা, শুলকবহর, মুরাদপুর পানিতে তলিয়ে যায়। বিভিন্ন ভবনের নিচতলা, কাঁচা ও সেমিপাকা কলোনি, বস্তি, সড়ক পানিবন্দি হয়ে পড়ে।
সোমবার ভোর থেকে বৃষ্টি থেমে যায়। কিন্তু বিভিন্ন এলাকায় পানি জমে থাকে দিনভর। জোয়ারের কারণে পানি আরও বাড়ে কয়েকটি এলাকায়। খোদ নগরীর বহদ্দারহাটে মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরীর বাসভবন চারদিন ধরে পানিবন্দি হয়ে আছে। পানিবন্দি মানুষ বাসা থেকে বেরিয়ে গন্তব্যে পৌঁছাতে নৌকা ব্যবহারের দৃশ্যও দেখা গেছে নগরীতে।
এ অবস্থায় নগরবাসীর ক্ষোভ ও সমালোচনার মুখে পড়া মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী সোমবার (২০ জুন) দুপুর থেকে নগরীর চকবাজার, কাপাসগোলা, বাদুরতলা ও পূর্ব ষোলশহর এলাকায় পানিবন্দি মানুষের দুর্দশা স্বচক্ষে দেখতে যান এবং প্রায় দুই হাজার পরিবারের মাঝে খাদ্য বিতরণ করেন বলে চসিকের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।
জলাবদ্ধতা নিরসনে পানিবন্দি ক্ষতিগ্রস্ত লোকজনের উদ্দেশে মেয়র বলেন, ‘জলাবদ্ধতা এখন চট্টগ্রাম মহানগরীর বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। জলাবদ্ধতা নিরসনে সরকারের একটি মেগাপ্রকল্পের কাজ কয়েক বছর ধরে চলছে। সিডিএ এই মেগাপ্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। মেগাপ্রকল্পের জন্য সিডিএ খালের বিভিন্নস্থানে বাঁধ দিয়েছিল। অনেকগুলো বাঁধ বর্ষা মৌসুম শুরুর আগে অপসারণ করা হয়েছে। কিন্তু কয়েকটি খালে এখনও বাঁধ রয়ে গেছে। এ কারণে নিম্নাঞ্চল থেকে পানি দ্রুত অপসারণ হচ্ছে না। এ কারণেই জলাবদ্ধতা হচ্ছে এবং মানুষকে অবর্ণনীয় দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।’ মেগাপ্রকল্পের কাজ শতভাগ শেষ না হওয়া পর্যন্ত জলাবদ্ধতার সমস্যা থাকবে- মন্তব্য করেন মেয়র রেজাউল।
উল্লেখ্য, চট্টগ্রাম নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনে সাড়ে ৫ হাজার কোটি টাকার একটি প্রকল্প সেনাবাহিনীর মাধ্যমে বাস্তবায়ন করছে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)। এ প্রকল্পের আওতায় নগরীর বিভিন্ন খালের ভেতরের অংশে অস্থায়ী বাঁধ দিয়ে জলকপাট ও প্রতিরোধ দেওয়াল নির্মাণের কাজ চলছে। খালে দেওয়া বাঁধের কারণে ব্যাপক জলাবদ্ধতার আশঙ্কা করছিলেন সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী। তিনি বাঁধ অপসারণের জন্য সময়ও বেঁধে দিয়েছিলেন।
অব্যাহত পাহাড় কাটা, শহর থেকে খাল বিলুপ্ত হওয়াকেও জলাবদ্ধতার জন্য দায়ী করেন মেয়র রেজাউল। সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে মেয়রকে উদ্ধৃত করে বলা হয়েছে, ‘পাহাড় কাটা হচ্ছে, এতে পলিমাটি গিয়ে নালা ও খাল ভরাট হয়ে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সমুদ্রের উচ্চতা বেড়েছে, যার কারণে জোয়ারের পানিতে ডুবছে উপকুলীয় শহর। চট্টগ্রাম নগরীতে এক সময় ৭৬টি খাল ছিল, এখন আছে ৫৭টি। অনেক খাল ভুমিদস্যুরা দখল করে নিয়েছে। সেই খালগুলো উদ্ধার করা দরকার।’
জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের বাইরে আরও ২১টি খাল ভূমিদস্যুদের কবল থেকে উদ্ধারে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে বলে জানান মেয়র।
সারাবাংলা/আরডি/পিটিএম