নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়ে পার পেলেন জামালপুরের অতিরিক্ত জেলা জজ
২০ জুন ২০২২ ২৩:৩৪
ঢাকা: উচ্চ আদালতের আদেশ অমান্য করে এক আসামির জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠানোয় জামালপুরের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ জিন্নাৎ জাহান ঝুনুকে ভর্ৎসনা করেছেন হাইকোর্ট।
বিচারক জিন্নাৎ জাহান ঝুনু আসামির জামিন নামঞ্জুরের বিষয়টিকে ‘অসতর্কতাবশত’ ও ‘অনিচ্ছাকৃত ভুল’ উল্লেখ করে হাইকোর্টে নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করলে উচ্চ আদালত তাকে সতর্ক করে ক্ষমা করে দেন।
সোমবার (২০ জুন) বিচারপতি শেখ মো. জাকির হোসেন ও বিচারপতি আহমেদ সোহেলের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ জিন্নাৎ জাহান ঝুনুর ক্ষমা প্রার্থনার আবেদন মঞ্জুর করে আদেশ দেন।
আদালতে জিন্নাৎ জাহান ঝুনুর পক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আবুল হাশেম। আসামি পক্ষে ছিলেন আইনজীবী সারোয়ার আলম।
মামলার বিবরণে জানা গেছে, গত বছরের ১১ ডিসেম্বর জামালপুর জেলার দেওয়ানগঞ্জ থানার বাহাদুরাবাদ ভাটিরপাড়া এলাকায় অভিযান চালিয়ে ৫০ ডলারের (আমেরিকান) ৩০টি জাল নোটসহ মো. জাকিরুল (৩৯) নামের এক ব্যক্তিকে আটক করে পুলিশ। জাকিরুল জামালপুর জেলার বকশীগঞ্জ উপজেলার বাসিন্দা। পরে জাকিরুলের বিরুদ্ধে ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনের ২৫-এ ধারায় মামলা দায়ের করা হয়। ওই মামলায় বিচারিক আদালতে জামিন নামঞ্জুর হলে জাকিরুল হাইকোর্টে জামিন চেয়ে আবেদন করেন।
পরবর্তীতে গত ১০ এপ্রিল হাইকোর্ট রুলসহ জাকিরুলের জামিন মঞ্জুর করেন। আদেশে রুল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত জামিন বহাল থাকবে বলে জানায় হাইকোর্ট। এরপর গত ১৯ এপ্রিল উচ্চ আদালতের নির্দেশনা অনুসারে বিচারিক আদালত থেকে জামিন পেয়ে কারামুক্ত হন জাকিরুল। পরে মামলাটি বিচারের জন্য জামালপুরের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতে বদলি হয়। মামলার ধার্য তারিখে গত ২৪ মে জামালপুরের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতে হাজির হন জাকিরুল।
ওইদিন হাইকোর্টের দেওয়া জামিন চলমান রাখার জন্য জাকিরুলের আবেদন নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন জামালপুরের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ জিন্নাৎ জাহান ঝুনু। বিচারক ঝুনু আদেশে বলেন, ‘অত্র মামলাটি উচ্চ আদালতে বিচারাধীন তথা নিষ্পত্তির অপেক্ষায় রয়েছে। এহেন পরিস্থিতিতে আদালত উক্ত বিষয়ে আদৌ কোনো সিদ্ধান্ত নিতে অপারগ। কাজেই সার্বিক বিবেচনায় আসামির জামিন আবেদন নামঞ্জুর করা হলো।’
পরবর্তী সময়ে বিচারিক আদালতের জামিন নামঞ্জুরের বিষয়টি হাইকোর্টের নজরে আনলে হাইকোর্ট সংশ্লিষ্ট বিচারককে সশরীরে হাজির হয়ে এই বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে তলব করেন। এরই মধ্যে গত ১৫ জুন আসামিকে জামিন দেন বিচারক জিন্নাৎ জাহান ঝুনু।
আজ আদালতে হাজির হয়ে বিচারক জিন্নাৎ জাহান ঝুনু নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করলে হাইকোর্ট জিন্নাৎ জাহানকে ভর্ৎসনা করেন। একইসঙ্গে ভবিষ্যতের জন্য সতর্ক করে বিষয়টি নিষ্পত্তি করে দেন।
এর আগে, জিন্নাৎ জাহান নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করে বলেন, ‘ভবিষ্যতে উচ্চ আদালতের আদেশের বিষয়বস্তু গভীরভাবে মনোযোগেরসহিত পর্যালোচনাপূর্বক পরবর্তী আদেশ দানের বিষয়ে সতর্ক থাকব। এই অনিচ্ছাকৃত ভুলের জন্য নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করছি।’
অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজের বক্তব্য শুনে হাইকোর্ট বলেন, ‘জিন্নাৎ জাহান ঝুনু যেহেতু ভবিষ্যতে দায়িত্ব পালনের প্রতি সতর্ক থাকবেন মর্মে অঙ্গীকার করেছেন, সেহেতু তার এই অনিচ্ছাকৃত ও অসতর্কতাবশত কাজকে ক্ষমা করা হলো।’
সারাবাংলা/কেআইএফ/পিটিএম