শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও সুরক্ষা খাতে বাড়তি বরাদ্দ চায় ৯০% শিশু
২১ জুন ২০২২ ১৬:৫৯
ঢাকা: শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও শিশুদের সুরক্ষার সঙ্গে সম্পৃক্ত খাতগুলোতে সরকারি ব্যয় বাড়ানোকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করে ৯০ শতাংশ শিশু। জাতীয় বাজেটে শিশুদের চাওয়া সংক্রান্ত এক জরিপের বরাত দিয়ে জাতিসংঘের শিশু তহবিল বিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফ এ তথ্য জানিয়েছে।
ইউনিসেফ থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ১৪ হাজার শিশু এবং ১৮ থেকে ২৪ বছর বয়সী ৩৭ হাজার তরুণ-তরুণী জাতীয় বাজেট নিয়ে তাদের চিন্তাভাবনা জানানোর এই জরিপে অংশ নেন। জরিপে অংশ নেওয়ার পাশাপাশি শিশুরা জাতীয় বাজেটের জন্য তাদের কাছে সবচেয়ে গুরুত্ব বহনকারী প্রশ্নগুলো ইউনিসেফের ‘জেনারেশন পার্লামেন্ট’ অনলাইন প্ল্যাটফর্মে পোস্টও করছে।
মহামারির কারণে ১৮ মাস স্কুল বন্ধ থাকায় পড়ালেখার ক্ষতির বিষয়টিই অগ্রাধিকার হিসেবে উঠে এসেছে জরিপে। এতে অংশগ্রহণকারী শিশুদের ৮৫ শতাংশেরও বেশি বলেছে, শিশুদের পড়ালেখার ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে সহায়তা করার জন্য শিক্ষা খাতে আরও বেশি ব্যয় করা দরকার।
বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের শিশু বিষয়ক সংসদীয় ককাসের সভাপতি শামসুল হক টুকু বলেন, আমাদের কাছে শিশুদের অনেক কিছু জানার, চাওয়ার ও আশা-আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ করার অধিকার আছে। একজন জনপ্রতিনিধি হিসেবে তাদের কথা শোনা এবং তাদের সঙ্গে আমাদের অর্থবহভাবে সম্পৃক্ত হওয়া উচিত। আমার জায়গা থেকে আমি সবসময় তাদের অধিকারের জন্য সোচ্চার থাকব এবং একটি উন্নত বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে আমি তাদের কণ্ঠস্বরকে জাতীয় নেতাদের কাছে পৌঁছে দেবো।
বাংলাদেশে ইউনিসেফের প্রতিনিধি শেলডন ইয়েট বলেন, শিশুদের জীবনের প্রতিটি দিক কোভিড-১৯ মহামারিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এই জরিপের ফলাফলও দেখাচ্ছে, তারা (শিশুরা) এ বিষয়ে সচেতন ও উদ্বিগ্ন। তবে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, জাতীয় নেতারা যেন তাদের কথা শোনেন, সেটি নিশ্চিত করতে হবে।
জরিপে অংশগ্রহণকারী শিশুদের বেশিরভাগই শিক্ষকদের শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের পেছনে বিনিয়োগ করাকে সবচেয়ে জরুরি মনে করছে। ১৩ বছর বয়সী গার্গী তনুশ্রী পাল বলেন, আমি চাই বাজেটে সবচেয়ে বেশি বিনিয়োগ করা হোক শিক্ষা খাতে। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্কুলকে সবচেয়ে বেশি অগ্রাধিকার দেওয়া হোক। তা না হলে শিশুশ্রম, বাল্যবিয়ে ও শিশুদের স্কুল থেকে ঝরে পড়ার মতো সমস্যা দূর করা যাবে না।
সাশ্রয়ী মূল্যে মানসম্পন্ন স্বাস্থ্যসেবার সুযোগ নিশ্চিত করার বিষয়টিও একটি গুরুত্বপূর্ণ দাবি হিসেবে উঠে এসেছে এই জরিপে। জরিপে অংশগ্রহণকারী শিশুদের ৯০ শতাংশেরও বেশি জানিয়েছে, সবাইকে স্বাস্থ্যসেবার আওতায় আনার লক্ষ্য অর্জনে অগ্রগতি ত্বরান্বিত করতে এক্ষেত্রে আরও বেশি বিনিয়োগ করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
১৭ বছর বয়সী ইবনে আল রামিজের বক্তব্য, এবারের জাতীয় বাজেটে স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ বাড়ানো হোক। বিশেষ করে প্রশিক্ষিত নার্স, প্রশিক্ষিত ধাত্রী ও উন্নত যন্ত্রপাতির মাধ্যমে প্রসূতি ও শিশুর সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করা হোক।
ইউনিসেফ বলছে, ব্যাপক অগ্রগতি সত্ত্বেও বাংলাদেশে লাখ লাখ শিশু সহিংসতা ও নির্যাতনের শিকার হচ্ছে এবং বাল্যবিয়ে ও শিশুশ্রমে বাধ্য হচ্ছে। শিশুদের সুরক্ষার জন্য মাঠ পর্যায়ে কর্মরত সমাজকর্মীদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার কথা স্বীকার করে জরিপে অংশগ্রহণকারী শিশুদের ৬৫ শতাংশেরও বেশি বলেছে, সমাজকর্মীদের পেছনে আরও বেশি ব্যয় করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
জরিপে এ-ও উঠে এসেছে, শিশুরা সচেতন এবং জাতীয় নেতাদের কাছে তারা কী চায় সে বিষয়ে নিজেদের ভাবনা প্রকাশের সুযোগ পেলে তারা তাদের সুচিন্তিত মতামত দিতে উদগ্রীব। তবে জরিপে আরও উঠে এসেছে, অনেক শিশুই মনে করে না যে তাদের মতামত গুরুত্বপূর্ণ। মাত্র অর্ধেকের কাছাকাছি শিশু বলেছে, জাতীয় বাজেট সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় শিশুদের মতামত শোনা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
ইউনিসেফ বলছে, ২০২১ সালের ‘চেঞ্জিং চাইল্ডহুড’ প্রকল্পের ফলাফলেও এমন কম শিশুদের মধ্যেই ক্ষমতায়ন নিয়ে ভাবনা উঠে এসেছিল। ওই প্রকল্পের ফলাফলে উঠে এসেছিল, রাজনৈতিক নেতাদের জন্য শিশুদের কথা শোনা খুবই গুরুত্বপূর্ণ— এমন বিশ্বাস বিশ্বের অন্যান্য দেশের শিশুদের তুলনায় বাংলাদেশের শিশুদের মধ্যে কম কাজ করে। এমন ধারণায় বিশ্বাসী শিশুর সংখ্যার দিক থেকে বাংলাদেশ ছিল দ্বিতীয় সর্বনিম্ন অবস্থানে।
শেলডন ইয়েট এ বিষয়ে বলেন, শিশু ও তরুণদের ভবিষ্যতকে প্রভাবিত করে— এমন বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে তাদের অর্থপূর্ণ অংশগ্রহণের জন্য আমাদের আরও জায়গা তৈরি করে দিতে হবে। আমাদের কার্যক্রমের মাধ্যমে তাদের দেখাতে হবে যে তাদের মতামতও গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের জাতীয় বাজেটে শিশু খাতে আরও বেশি বরাদ্দ দেওয়া প্রয়োজন।
২০১৫ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত সরকার একটি শিশু বাজেট প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে, যা শিশুদের পেছনে বিনিয়োগ ২০ শতাংশে উন্নীত করতে সরকারের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের অগ্রগতির নির্দেশক। তবে প্রকৃতপক্ষে শিশু খাতে বিনিয়োগ ১৫ শতাংশের আশপাশে আটকে আছে এবং এ অবস্থায় ফের শিশু বাজেট প্রতিবেদন চালু করা পরিকল্পনা প্রণয়নের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার হতে পারে বলে মনে করছে ইউনিসেফ। শিশুদের জীবনমান উন্নয়নের জন্য বাজেটে আরও বেশি বরাদ্দ দেওয়ার দাবি জানিয়েছে সংস্থাটি।
সারাবাংলা/আরএফ/টিআর