ইভিএমে একজনের ভোট আরেকজন দেওয়া একেবারেই অসম্ভব: সিইসি
২১ জুন ২০২২ ২০:২৩
ঢাকা: জাতীয় ও স্থানীয় সরকার নির্বাচনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) ব্যবহার নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে মত থাকলেও প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল এই মেশিনকে ব্যালটের চেয়ে বেশি গ্রহণযোগ্য মনে করছেন।
তিনি বলেন, ইভিএম নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে পক্ষে-বিপক্ষে মত থাকলেও ব্যালটের চেয়ে ইভিএম ভালো। এখানে একজনের ভোট আরেকজন দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। ইভিএমে আমার ভোট আপনি কিংবা আপনার ভোট আমার পক্ষে দেওয়া একেবারেই অসম্ভব।
মঙ্গলবার (২১ জুন) বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে ইভিএম বিষয়ে মতবিনিময় সভায় প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল এসব কথা বলেন।
মঙ্গলবার বিকেল রাজধানীর নির্বাচন ভবনে অনুষ্ঠিত ১৩টি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের সঙ্গে ইসির ইভিএম বিষয়ক এই মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনাবেল (অব.) আহসান হাবিব খান, মো. আলমগীর ও বেগম রাশিদা সুলতানা এবং ইসি সচিব খোন্দকার হুমায়ন কবির। সভায় ১৩টি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলকে অংশ নেওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হলেও শেষ পর্যন্ত এতে অংশ নিয়েছে আটটি দল।
মতবিনিময় সভায় সিইসি বলেন, এখন পর্যন্ত আমরা যত নির্বাচন করেছি, আমরা কোনো কেন্দ্র থেকে কোনো অভিযোগ (অ্যালিগেশন) পাইনি যে ইভিএমের অপব্যবহার হয়েছে। বরং কোনো কোনো ভোটকেন্দ্রে ইভিএমে ভোটারের আঙুলের ছাপ মেলেনি। তবে তারা বাসায় গিয়ে হাত পরিষ্কার করে আসার পর আঙুলের ছাপ মিললে তারা ভোট দিতে পেরেছেন। ইভিএমে কিছু কিছু সমস্যা হতে পারে। কিন্তু ব্যালটে যেমন একজনের পরিবর্তে আরেকজন একশটা ভোট দিয়ে দিতে পারেন, ইভিএমে কিন্তু সেটি সম্ভব নয়। ইভিএমে আমার ভোট আপনি কিংবা আপনার ভোট আমি দিতে পারব না। এটি একেবারেই অসম্ভব।
সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, ব্যালটে নির্বাচন ভালো না খারাপ— এমন প্রশ্ন উঠেছে। কিন্তু ব্যালটে আমার নিজের অভিজ্ঞতা আছে, কীভাবে ভোট কেন্দ্র দখল করে। এক ঘণ্টায় দুই-তিনশ সিল মেরে ব্যালট বাক্স ভরেছে, আপনারা পাশে থেকেও বন্ধ করতে পারেননি। সেদিক থেকে ইভিএমে যদি কোনো দোষ-ত্রুটি থেকেও থাকে, তারপরও ব্যালটের তুলনায় ইভিএমে ইতিবাচক দিক অনেক বেশি।
সিইসি বলেন, ইভিএম নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে দ্বিধা-দ্বন্দ্ব আছে। এটা থাকতেই পারে। আমরা তা কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করছি। তবে আমরা এখনো ইভিএমের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নিইনি। আমরা সব রাজনৈতিক দলের মতামতকেকে গুরুত্ব দিচ্ছি। আমাদেরও অধিকার আছে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার। তবে আমরা সব দলের মতামত নেব। সবার মতামত না নিয়ে না বুঝে আমরা ইভিএমের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেব না।
কাজী হাবিবুল আউয়াল আরও বলেন, আমরা রাজনৈতিক দলের মতামতগুলো বিশ্লেষণ করব। আমরা নিবন্ধিত ৩৯টি রাজনৈতিক দলকে আগ্রহ নিয়ে আমন্ত্রণ জানিয়েছি। আমরা আমাদের দিক থেকে সততার সহিত, নিষ্টার সঙ্গে, আগ্রহ নিয়ে দায়িত্ব পালন করছি। আমাদের কেউ সরকারের আজ্ঞাবহ কোনো কাজ করব না। আমাদের কমিশনের যারা সদস্য আছেন, তারাও কেউ সরকারের আজ্ঞাবহ হয়ে কোনো কাজ করবেন না। আমাদের মধ্যে কেউ সরকারের অজ্ঞাবহ হয়ে কাজ করবে না। সরকারও এটা চাইবে না যে আমরা অজ্ঞাবহ হয়ে থাকি। সেটি করলেও গোপন থাকবে না। আমাদের যেমন মর্যাদা রয়েছে, তেমনি সরকারেরও মর্যাদা রয়েছে।
রাজনৈতিক দলগুলোর উদ্দেশে সিইসি বলেন, ভালো নির্বাচন করতে আপনাদের সর্বাত্মক চেষ্টা লাগবে। আপনারা ঘরে বসে না থেকে ভোটকেন্দ্রে আসুন। ইভিএমে আমরা কোনো ম্যানিপুলেশন করছি কি না, জাল ভোট দিচ্ছি কি না, ব্যালটেও কোনো কারচুপি হচ্ছে কি না— এগুলো লক্ষ করতে হবে। সবাইকে সমানভাবে দায়িত্ব নিয়ে করতে হবে। তা না হলে আমাদের চার-পাঁচ জনের (কমিশন) ওপর নির্ভর করলে নির্বাচন সুন্দর হবে না।
তিনি আরও বলেন, আপনাদের দায়িত্বগুলো অনেক বেশি। আপনারা কেন্দ্রে থাকবেন। আপনাদের সচেতন থাকতে হবে। আমি সিইসি হয়ে কয়টা কেন্দ্রে যাব? আমরা কি কেন্দ্রে লাঠি নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে পারব? পারব না। তবে আমরা পুলিশ-বিজিবিকে ব্যবহার করার চেষ্টা করব।
সারাবাংলা/জিএস/টিআর
ইভিএম প্রধান নির্বাচন কমিশনার ব্যালট পেপার রাজনৈতিক দলের সঙ্গে মতবিনিময় সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল