‘সব দলের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে আগামী নির্বাচন অবাধ-সুষ্ঠু হবে’
২২ জুন ২০২২ ১৮:২৩
ঢাকা: দেশের সব রাজনৈতিক দলের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠুভাবে হবে বলে মন্তব্য করেছেন সংসদ নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, বর্তমান নির্বাচন কমিশন সংবিধান ও প্রচলিত আইনের অধীনে জাতীয় সংসদ নির্বাচনসহ সব ধরনের নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে বদ্ধপরিকর। আশা করি, সব রাজনৈতিক দলের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠুভাবে হবে।
বুধবার (২২ জুন) জাতীয় সংসদে প্রশ্নোত্তর পর্বে ঢাকা-৪ আসনের সংসদ সদস্য সৈয়দ আবু হোসেন বাবলার প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন। স্পিকার ড. শিরীন শারমিনের সভাপতিত্বে অধিবেশন শুরু হয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্থানীয় সরকার নির্বাচন ও জাতীয় নির্বাচন গ্রহণযোগ্য ও নিরপেক্ষ করার লক্ষ্যে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১১৮(১)-এর ‘বি’ অনুযায়ী নির্বাচন কমিশন গঠন আইন করা হয়েছে। ২০১১ সালের ২৭ জানুয়ারি প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ আইন, ২০২২ মহান জাতীয় সংসদে পাস করা হয়। বিলটি পাসের ফলে স্বাধীনতার ৫০ বছর পর বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সরকারের নেতৃত্বেই বহুল প্রতীক্ষিত আইনটি বাস্তব রূপ লাভ করে। রাষ্ট্রপতির সম্মতির পর এ বছরের ২৯ জানুয়ারি আইনটি বাংলাদেশ গেজেটে প্রকাশিত হয়েছে।
তিনি বলেন, প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ আইন, ২০২২ মহান সংসদে ২৩ জানুয়ারি ২০২২ উত্থাপিত হলে বিরোধী দলের প্রস্তাবিত ২২টি সংশোধনী গ্রহণ করা হয়, যা নির্বাচন গ্রহণযোগ্য, সুষ্ঠু ও নিরেপক্ষ করার প্রথম পদক্ষেপ।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, মহাজোটকে সঙ্গে নিয়ে আমরাই স্বচ্ছ ব্যালট বাক্সসহ আধুনিক পদ্ধতি প্রবর্তনের দাবি করেছিলাম, যেন ভুয়া ভোট দিয়ে কেউ ভোট বাক্স ভরে রাখতে না পারে। বর্তমানে ভোটকেন্দ্রে স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স নিশ্চিত করা হয়েছে। এছাড়া নির্বাচন প্রক্রিয়ায় আধুনিক পদ্ধতির ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) চালু করা হয়েছে। সব রাজনৈতিক দলের নির্বাচনে অংশগ্রহণসহ দলীয় কার্যক্রম নির্বিঘ্ন করার পরিবেশ নিশ্চিত করা হয়েছে।
নির্বাচন কমিশন গঠন সংক্রান্ত আইন প্রসঙ্গে সংসদ নেতা শেখ হাসিনা আরও বলেন, প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ আইন, ২০২২-এর ধারা ৩-এর বিধান অনুযায়ী প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনারদের নিয়োগদানের জন্য আইনে বর্ণিত যোগ্যতাসম্পন্ন আইন অনুযায়ী বিশিষ্ট ১০ জন নাগরিকের তালিকা প্রস্তুত করে রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠায় অনুসন্ধান কমিটি। এই কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১১৮(১) ধারায় প্রদত্ত ক্ষমতাবলে রাষ্ট্রপতি গত ২৬ ফেব্রুয়ারি প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও চার জন নির্বাচন কমিশনারকে নিয়োগ দেন। সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১১৮ (৪) অনুযায়ী নির্বাচন কমিশন দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে স্বাধীন এবং ১২৬ নং অনুচ্ছেদ অনুযায়ী নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব পালনে সহায়তা করা সব নির্বাহী কর্তৃপক্ষের কর্তব্য।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২-এর ধারা ৪ ও ৫ অনুযায়ীও নির্বাচন কমিশনের দায়িত্বপালনে সহায়তা করা সব নির্বাহী কর্তৃপক্ষের কর্তব্য। সে লক্ষ্যে নির্বাচনি কাজে নির্বাহী কর্তৃপক্ষকে নিয়মিত সহায়তার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ দেওয়া হয়ে থাকে।
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) ক্ষমতায় থাকাকালে প্রায় ১ কোটি ২৩ লাখ ভুয়া ভোটার নিবন্ধন করেছিল। ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে সরকার গঠন করে। এরপর অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে আওয়ামী লীগ সরকার ভোটার তালিকা আইন, ২০০৯ এবং জাতীয় সংসদের নির্বাচনি এলাকার সীমানা নির্ধারণ আইন, ২০২১ প্রণয়ন করেছে। ভোটার তালিকা আইন, ২০০৯ প্রণয়নের ফলে নির্বাচন কমিশন বিএনপি’র আমলে নিবন্ধিত সব ভুয়া ভোটার বাদ দিয়ে প্রকৃত অর্থে যারা ভোটার, তাদের নিবন্ধন করেছে এবং সময়ে সময়ে নিবন্ধন তালিকা হালনাগাদ করা রাজনৈতিক দলগুলোকে নিবন্ধন দেওয়া নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব।
তিনি বলেন, নিবন্ধিত সব দলের অংশগ্রহণে আগামী জাতীয় নির্বাচন করার লক্ষ্যে নির্বাচন কমিশন সব অংশীজনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ও যোগাযোগ রক্ষা করে। নির্বাচনি তফসিল, নির্বাচনি প্রক্রিয়া ও নির্বাচনের সামগ্রিক আয়োজনের ব্যাপারে সব অংশীজনের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
সংসদ নেতা বলেন, ভোটার নিবন্ধন, ভোটার তালিকা তৈরি ও হালনাগাদ করা এবং অন্যান্য সংশ্লিষ্ট বিষয়েও নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে নির্বাচন কমিশন আলাপ-আলোচনা করে থাকে। জাতীয় সংসদ নির্বাচন গ্রহণযোগ্য ও নিরপেক্ষ করার জন্য প্রার্থিতা প্রত্যাহারের পর থেকে আচরণবিধি প্রতিপালন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় পর্যাপ্তসংখ্যক নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ করা হয়। এছাড়া স্থানীয় প্রশাসন ও রিটার্নিং অফিসারের চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে অতিরিক্ত পুলিশ, র্যাব, বিজিবি ও কোস্ট গার্ড নিয়োগ করা হয়।
শেখ হাসিনা আরও বলেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য ও নিরপেক্ষভাবে সম্পন্ন করার লক্ষ্যে নির্বাচন সংশ্লিষ্ট সব কার্যক্রম মনিটরিং এবং মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রক্ষায় নির্বাচন কমিশন থেকে বিভিন্ন কমিটি গঠন করা হয়ে থাকে। ভোটগ্রহণের দিন সব আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ে আইনশৃঙ্খলা সমন্বয় ও মনিটরিং সেল গঠন করা হয়। তাছাড়া প্রার্থী বাছাই, প্রার্থিতা প্রত্যাহার, প্রতীক বরাদ্দ কার্যক্রম সুষ্ঠু ও সফলভাবে করার জন্য নির্বাচন কমিশন থেকে ১০ অঞ্চলের জন্য ১০ জন কর্মকর্তার মাধ্যমে তদারকি করা হয়।
তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশনের মাধ্যমে বিভিন্ন সময়ে সারাদেশে প্রচুর লিফলেট বিতরণ করা হয়েছে। বিভিন্ন সময়ে অনুষ্ঠিত বিভিন্ন নির্বাচন উপলক্ষে নির্বাচনি এলাকার জনগুরুত্বপূর্ণ স্থানে জনসাধারণকে ইভিএম সম্পর্কে অবহিত করার জন্য ডেমোনেস্ট্রেশন এবং ভোটার শিক্ষণের কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। একইসঙ্গে ভোটগ্রহণের দুই দিন আগে নির্বাচন সংশ্লিষ্ট এলাকার ভোটারদের ভোটগ্রহণ পদ্ধতি সম্পর্কে অবগত করার লক্ষ্যে মক ভোটিংয়ের ব্যবস্থাও নেওয়া হয়।
তিনি বলেন, সবশেষে বলতে চাই, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১১৮(৪) অনুযায়ী নির্বাচন কমিশন স্বাধীন। প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং অন্যান্য নির্বাচন কমিশনাররা সংবিধান ও আইন অনুযায়ী স্বাধীনভাবে তাদের কাজ করে থাকেন। নির্বাচন কমিশনের চাহিদা অনুযাী সরকার সহায়তা করে থাকে।
ফাইল ছবি
সারাবাংলা/এএইচএইচ/টিআর