দাওয়াত প্রত্যাখান করলেন ফখরুল
২২ জুন ২০২২ ২১:২৪
ঢাকা: পদ্মা সেতুর উদ্বোধন অনুষ্ঠানে সরকারের আমন্ত্রণ প্রত্যাখান করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
বুধবার (২২ জুন) বিকেলে গুলশানে চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি কথা জানান।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘যারা মানুষ হত্যা করে, যারা এদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী, জনপ্রিয় নেত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে পদ্মায় ডুবিয়ে মারতে চায়, যারা এদেশের সবচেয়ে প্রথিতযশা এবং এদেশের জন্য সবচেয়ে বড় সম্মান অর্জন করে আনা ব্যক্তি গোটা পৃথিবীতে যিনি নন্দিত মানুষ ড. মুহাম্মদ ইউনুসকে চুবিয়ে চুবিয়ে মারতে চায় তাদের আমন্ত্রণে বিএনপির কোনো নেতা বা কোনো কর্মী কখনোই যেতে পারে না।’
পদ্মা সেতু নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য সত্যের অপলাপ— এমন মন্তব্য করে ফখরুল বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী আজকে প্রেস কনফারেন্স করেছেন। সেই প্রেস কনফারেন্সে তিনি অতীতের মতোই মিথ্যাচার করেছেন। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার ক্ষমতায় এসে মাওয়া প্রান্তে সেতুর কার্য্ক্রম বন্ধ করে দেয় এবং জাপান সরকারকে পুনরায় মানিকগঞ্জের আরিচা প্রান্তে সেতুর জন্য সমীক্ষা করতে বলে।’
ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘হুইচ ইজ এ বার্টান্ড লাই। আমাদের কাছে প্রমাণ হচ্ছে— জাপান ইন্টারন্যাশনাল কপোরেশন এজেন্সির পূর্ণাঙ্গ ফিজিবিলিটি রিপোর্ট আমাদের কাছে আছে। যেটি মাওয়া এবং জাজিরা প্রান্তের। এই রিপোর্টের কপিও আছে আমাদের কাছে, আপনারা চাইলে দেখতে পারেন। এই রিপোর্টটি ২০০৪ সালে মার্চের ৩ তারিখ সাবমিট করা হয়েছিল। এটি হচ্ছে ইন্টারিয়ম রিপোর্ট অন দ্য ফিজিবিলিটি স্টাডি অব পদ্মা ব্রিজ।’
‘একটা ফিজিবিলিটি রিপোর্ট অফিসিয়ালি দেওয়ার পরও কী করে তিনি (প্রধানমন্ত্রী) বলতে পারেন যে, বিএনপি গভর্মেন্ট আসার পর এটিকে বন্ধ করে দেয় এবং এটি কোনো কাজ করেনি। এই ফিজিবিলিটি রিপোর্টের ওপর ভিত্তি করেই তারা পরবর্তীকালে কাজ করেছেন।’
‘তখনই এডিবি, বিশ্বব্যাংক ও জাপানের সঙ্গে যোগাযোগ করে ফান্ডের জন্য আলোচনা করা হয়েছিল। কিন্তু সময়ের অভাবে সেটা করা আমাদের পক্ষে সম্ভব হয়নি। এটি হচ্ছে বাস্তবতা। অথচ তিনি (প্রধানমন্ত্রী) সমানে বলে যাচ্ছেন বিএনপি সরকার এটি বন্ধ করে দিয়েছিল’— বলেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি বলেন, ‘সমস্যাটা হচ্ছে অন্য জায়গায়। কাজ শুরু করার পরে বিশ্বব্যাংক দুর্নীতির কথা বলে ফান্ড বন্ধ করে দিলো। তখন থেকেই সমস্যাটি শুরু হয়েছে। সেটির জন্য তিনি (প্রধানমন্ত্রী) বিএনপিকে দায়ী করেন, ড. ইউনুসকে দায়ী করেন। কোথায় পেলেন তিনি? কীভাবে তিনি, দুর্নীতির কথা বিএনপি বা ড. ইউনুস তুলেছে?’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘বিশ্বব্যাংক দুর্নীতির কথা তোলার পরে দেশবাসী জানল, আমরা জানলাম সেখানে দুর্নীতি হচ্ছে। আজকে এটি প্রমাণ হয়েছে যে, সাড়ে ৮ হাজার কোটি টাকার প্রজেক্ট এখন ৩০ হাজার কোটি টাকায় পৌঁছেছে। সুতরাং প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য সত্যের অপলাপ এবং বিএনপিকে জনগণের সামনে হেয়-প্রতিপন্ন করার চেষ্টা-এগুলোর কোনটাই কাজ হবে না। কারণ দেয়ার আর টুলস অ্যান্ড ডুকমেন্টস।’
পদ্মা সেতুর সমীক্ষার বিবরণী তুলে ধরেন তিনি বলেন, ‘এই সমীক্ষার সামারিতে বলা হয়েছে যে, এই সেতুর দৈর্ঘ্য ৫ দশমিক ৫৮ কিলোমিটার, প্রস্থ ২৫ মিটার, পাইলের সংখ্যা ২৬৮টি, নদীশাসন ১৬ দশমিক ৩০ কিলোমিটার, সংযোগ সড়কের দৈর্ঘ্য (উভয় পার্শ্বে) ১২ দশমিক ১৬৩ কিলোমিটার, প্রকল্পের (মাওয়া-জাজিরা অবস্থানে) ইআইআরআর ১৪ দশমিক ৮০% রেলসহ, বিসিআর ১ দশমিক ৩৮, ভূমির পরিমাণ ৭৯০ দশমিক ৫০ হেক্টর (অধিগ্রহণ-৬১৬ দশমিক ৫ হেক্টর, হুকুম দখল ১৭৪ দশমিক ০ হেক্টর), ক্ষতিগ্রস্তের সংখ্যা ৭০সিআর ১ দশমিক ৩৮, ভূমির পরিমাণ ৭০ থেকে ৮০ হাজার।’
ফখরুল জানান—২০১৫ সালে মাওয়া-জাজিরা অবস্থানে পদ্মা সেতু দিয়ে দৈনিক ২১ হাজার ৩০০ টি যানবাহন পারাপার করবে এবং ২০২৫ সালে হবে ৪১ হাজার ৬শ টি। এই সেতুর নির্মাণ কাজ ২০০৮ সালের অক্টোবর নাগাদ শুরু এবং ২০১৩ সালের মার্চ নাগাদ শেষ হবে। এটিই পদ্মা সেতুর বেসিক। এটিকেই কেন্দ্র করে তারা পদ্মাসেতুর পরবর্তী কাজ করেছেন, পদ্মা সেতু নির্মাণ হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু।
সারাবাংলা/এজেড/একে