মিথ্যাচার ও ষড়যন্ত্র সম্পর্কে সতর্ক থাকার আহ্বান
২২ জুন ২০২২ ২২:০১
ঢাকা: জাতীয় সংসদে প্রস্তাবিত ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে সরকার ও বিরোধী দলের সদস্যরা বলেছেন, করোনা মোকাবিলাসহ মেগা প্রকল্পগুলোর সফল বাস্তবায়নের মাধ্যমে সরকার দেশকে এগিয়ে নিচ্ছে। আর সরকারের এই অভূতপূর্ব উন্নয়নে দিশেহারা একটি মহল মিথ্যাচারে লিপ্ত। তারা নানামুখী ষড়যন্ত্র চালাচ্ছে। এই মিথ্যাচার ও ষড়যন্ত্র সম্পর্কে দেশবাসীকে সতর্ক থাকতে হবে।
বুধবার (২২ জুন) জাতীয় সংসদ অধিবেশনে ওই আলোচনায় সভাপতিত্ব করেন স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী ও প্যানেল সভাপতি এ বি তাজুল ইসলাম। আলোচনায় অংশ নেন স্বাস্থ্য মন্ত্রী জাহিদ মালেক, রেলপথ মন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন, বিমান প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুর আলী, ধর্ম প্রতিমন্ত্রী ফরিদুল হক খান, হুইপ শামসুল হক চৌধুরী, আওয়ামী লীগের আবুল কালাম আজাদ, শহীদুজ্জামান সরকার, এ বি তাজুল ইসলাম, মৃণাল কান্তি দাস, নজরুল ইসলাম বাবু, বজলুল হক হারুন, ছলিম উদ্দিন তরফদার, বদরুদ্দোজা মো. ফরহাদ হোসেন, আতাউর রহমান খান, ইলিয়াস উদ্দিন মোল্লাহ, কুজেন্দ্রনাথ ত্রিপুরা, আনোয়ার হোসেন খান, মো. আয়েন উদ্দিন, আশেক উল্লাহ রফিক, নজরুল ইসলাম চৌধুরী, গাজী মো. শাহনেওয়াজ, নাহিদ ইজাহার খান, শামীমা আক্তার খান, উম্মে ফতেমা নাজমা বেগম ও বেগম শামসুন নাহার, জাসদের শিরীন আকতার এবং বিরোধী দল জাতীয় পার্টির ডা. রুস্তম আলী ফরাজী, নাসরিন জাহান রত্না ও নুরুল ইসলাম তালুকদার, বিএনপির গোলাম মোহাম্মদ সিরাজ।
আলোচনায় অংশ নিয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, ‘সারাদেশে উন্নয়ন এখন দৃশ্যমান। তাই দিশেহারা হয়ে সরকারের বিরুদ্ধে মিথ্যাচারে লিপ্ত একটি মহল। এ সম্পর্কে সতর্ক থাকতে হবে। যারা ষড়যন্ত্র ও হত্যার রাজনীতি করে তাদের প্রত্যাখ্যান করে উন্নয়নের পক্ষে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘অনেক বাধা বিপত্তি উপেক্ষা করে প্রধানমন্ত্রী পদ্মা সেতু নির্মান করেছেন। ফ্রান্সে জন্য আইফেল টাওয়ার যেমন গর্বের, স্ট্যাচু অব লিবার্টি যেমন আমেরিকানদের জন্য গর্বের, চীনের জনগণের জন্য যেমন গ্রেট ওয়াল গর্বের তেমনি বাংলাদেশের জন্য পদ্মা সেতু গর্বের বস্তু।’
তিনি এ সময় বিএনপির কর্মকাণ্ডের সমালোচনাও করেন।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘২০০১ সালে বিএনপি অগ্নিসন্ত্রাস করে, শিল্প কারখানায় অগ্নি সংযোগ করেছে, এটি কিসের আলামত? প্রধানমন্ত্রী বিশ্বের সেরা বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক ইউনিট নির্মাণ করেছেন। করোনার সময় ১২০টি হাসপাতালে অক্সিজেন লাইন স্থাপন করা হয়েছে। আইসিইউ বেড দুই হাজারের মত করা হয়েছে। দেশের ৭০ শতাংশ মানুষকে ২৮ কোটি ভ্যাকসিন দেওয়া হয়েছে। করোনা নিয়ন্ত্রণে প্রধানমন্ত্রী সব সময় আমাদের পরামর্শ ও দিক নির্দেশনা দেওয়ায় সারা বিশ্বে আমাদের দেশ ৫ম ও এশিয়াতে প্রথম স্থান দখল করেছে।’
রেলপথ মন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন বলেন, ‘১৯৮১ সালে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা দেশে ফিরেছিলেন বলেই আজকের এই উন্নয়ন। তিনি দেশে ফিরেছিলেন বলেই জাতিপর পিতা হত্যাকাণ্ড ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘টেকসই উন্নয়নের জন্য অবকাঠামো উন্নয়ন জরুরী। কিন্তু বিগত দিনে রেলপথ ও নৌপথকে অবজ্ঞা করা হয়েছিল। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় এসে রেলপথ উন্নয়নে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করেন। পদ্মা সেতুর সঙ্গে রেলপথ যুক্ত করা হয়েছে। নৌ, সড়ক ও বিমান যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।’
সরকারি দলের আবুল কালাম আজাদ বলেন, জননেত্রী শেখ হাসিন আওয়ামী লীগ ও সরকারের হাল ধরার কারণে বাংলদেশ বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল। জাতীয় বাজেটের আকার বাড়ছে। বিভিন্ন খাতে বরাদ্দও বাড়ছে। তবে করোনাকালে যে সফলতা দেখিয়েছি, এই সফলতা ধরে রাখতে স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ বাড়াতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘এখন আগের মতো বিভিন্ন অনুষ্ঠানে বাজেট নিয়ে আলোচনা হয় না। আলোচনার প্রধান বিষয় পদ্মা সেতু। এই সেতুর কারণে দেশের অর্থনীতির ব্যাপক উন্নতির পাশাপাশি সারাবিশ্বে দেশের ভাবমুর্তি উজ্জল হয়েছে।’
প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুর আলী বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী প্রণোদনা দেওয়ার কারণে করোনাকালে সংকট মোকাবেলা করে বিমান লাভজন্ক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল উদ্বোধনের পর বিমানবন্দর আধুনিকায়নের কাজে শেষ হবে। আগামী বছরে প্রধানমন্ত্রী তা উদ্বোধন করতে পারবেন বলে আশা করছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘পর্যটন শিল্পের বিকাশে ব্যাপক কর্মসূচী নেওয়া হয়েছে। পদ্মা সেতুকে ঘিরে নতুন পর্যটন ব্যবস্থা গড়ে উঠবে। বিশ^ ঐতিহ্য সুন্দরবনসহ অন্যান্য এলাকায় পর্যটকদের আকর্ষণে প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা হচ্ছে।’
বিএনপির গোলাম মোহাম্মদ সিরাজ বলেন, আমরা প্রতিনিয়ত উন্নয়ন ও মাথাপিছু আয় বৃদ্ধির কথা শুনছি। গণতন্ত্র ও মানবাধিকারকে অবজ্ঞা করে সরকার শুধুমাত্র উন্নয়নকে সামনে নিয়ে আসছে। শ্রীলংকাতে সন্দেহাতীত ভাবে প্রমাণিত হয়েছে উন্নয়ন ভাবনা স্থিতিশীল নয়। তাই সংসদে অর্থমন্ত্রীর দেওয়া বাজেট জনকল্যাণ ও জনগনের জন্য স্বস্তি দায়ক নয়। এই বাজেট বড় বড় ব্যবসায় ও সিন্ডিকেট সদস্যদের সুবিধা দিবে।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ কঠিন পরিস্থিতির দিকে অগ্রসর হচ্ছে। এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় সমন্বিত পদক্ষেপ নিতে হবে। কম প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণ বন্ধ রাখতে হবে। বিলাসী পণ্য আমদানি এক বছরের জন্য বন্ধ রাখতে হবে। ডলারের ওপর চাপ কমাতে হবে। দুর্নীতি বন্ধ করতে হবে।’
পাচারকৃত অর্থ ফেরত আনার সুযোগ প্রদানকে আইনের পরিপন্থি বলে উল্লেখ করেন তিনি।
স্বপ্নের পদ্মা সেতু উদ্বোধনের দিনটি স্মরণীয় হয়ে থাকবে বলে আশা প্রকাশ করেন বিরোধী দল জাতীয় পার্টির নাসরিন জাহার রতনা। তিনি বলেন, ‘পদ্মা সেতুর এই সুফল জনগণের কাছে পৌছে দিতে বাজেটে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য কমানোর উদ্যোগ নিতে হবে। কারণ করোনা মহামারিকালে বিপুল সংখ্যেক মানুষ নিঃস্ব হয়ে গেছে, তেমনি এ সময়ে পাল্লা দিয়ে কোটিপতির সংখ্যাও বেড়েছে। অর্থমন্ত্রী দেশ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ পাচাররোধ করতে ব্যর্থ হয়েছেন। অথচ এখন যারা চুরি করে বিপুল পরিমাণ অর্থ বিদেশে পাচার করেছে, তাদেরকে আবার দায়মুক্তি দেওয়া হচ্ছে। এটি কোনোভাবেই সমর্থনযোগ্য নয়।’
সারাবাংলা/এএইচএইচ/একে