সাড়ে ৯ হাজার শিশুর মুখে হাসি ফোটালেন যে চিকিৎসক
২২ জুন ২০২২ ২২:২৬
কক্সবাজার: ২০১৯ সালে ঈদগাঁহ মাইজপাড়ার বাসিন্দা প্রবাসী মো. জসিম উদ্দিন এবং জাহেদা খানমের কন্যাসন্তানের জন্ম হয় ঠোঁট এবং তালু কাটা অবস্থায়। হতাশ দম্পতি সন্তান দেখে যতটা না ব্যথিত তার চেয়ে বেশি ব্যথিত ছিলেন শিশুটির কষ্ট দেখে। তার নাম রাখা হয় আরশি মনি।
উদ্বিগ্ন দম্পতি নানান জায়গায় খোঁজ খবর নিয়ইয় অধ্যাপক ডা. বি কে দাস (বিজয়) এর নাম শোনেন। যিনি বিনামূল্যে জন্মগত কাটা ঠোঁট ও ফাটা তালুর অপারেশন করান। তার মাধ্যমে মেয়ের সুন্দর ঠোঁট আর হাসিমুখ ফিরে আসে। কিন্তু, মেয়েকে নিয়ে সবচেয়ে বেশি স্বপ্ন ছিল যার সেই জসিম উদ্দিন করোনা আক্রান্ত হয়ে সৌদি আরবে মারা যান। আরশির বয়স এখন তিন বছর ৯ মাস।
সম্প্রতি কক্সবাজারের রামু উপজেলার চেইদা হোপ ফাউন্ডেশন হাসপাতালে ৩ দিনের মেডিকেল ক্যাম্পে আসেন ডা. বিজয়। সেখানে ফলোআপের জন্য আরশিকে আনা হলে এসব তথ্য জানা যায়।
এছাড়াও, শহরের বিজিবি ক্যাম্প এলাকার বাসিন্দা আব্দুর রহমানের দুই বছরের সন্তান মতিহারা ইসলাম হেলালীকে আনা হয় জন্মগত ঠোঁট কাটা চিকিৎসার জন্য। জন্মের পর থেকে সবার মন খারাপ থাকলেও তারা এখন আশাবাদী চিকিৎসার মাধ্যমে অন্য শিশুদের মতো হাসবে তাদের সন্তান।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক টমটম চালক এক বাবা জানান, তাদের সংসারে ঠোঁট এবং তালু কাটা সন্তান জন্মের পর হাসপাতালেই ফেলে চলে আসতে চেয়েছিলেন। এর জন্য সবাই তার স্ত্রীকে দোষারোপ করছিল। তাদের অভিযোগ ছিল তার স্ত্রী চন্দ্রগ্রহণের সময় মাছ কাটার ফলে এমনটা হয়েছে। তাদের সংসার ভাঙ্গার উপক্রম হয়েছিল। সে সময় ডা. বিজয়ের কাছ থেকে বিনামূল্যে চিকিৎসা করে সন্তানের সঙ্গে সঙ্গে পরিবারের সবার মুখে এখন হাসি ফুটেছে।
শুধু এই শিশুদের নয় এরকম সাড়ে ৯ হাজার শিশু এবং তাদের পরিবারের মুখে হাসি ফুটিয়েছেন অধ্যাপক ডা. বি কে দাস বিজয়।
তার সহযোগী রহমত উল্লাহর দেওয়া তথ্যে জানা যায়, ডা. বিজয়ের নিজস্ব সংস্থা স্মাইলট্রেইনের মাধ্যমে সাড়ে ৯ হাজার শিশুকে বিনামূল্যে জন্মগত ঠোঁট কাটা এবং তালু কাটার চিকিৎসা করা হয়েছে। এছাড়াও, অপারেশনের পর ফলোআপ করা হয়। তার অপারেশনের পর সেলাই আর কাটতে হয় না।
চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. বি কে দাস বিজয় জানান, প্রতি ৭০০ শিশুর মধ্যে এক জনের এই সমস্যা থাকে। অনেক কারণের মধ্যে বাবা-মা’র ধূমপান, ডায়বেটিসসহ গর্ভাবস্থায় নানান জটিলতার কারণে এমন হয়ে থাকে। এছাড়া গর্ভাবস্থায় চন্দ্রগ্রহণ, সূর্যগ্রহণ, তরকারি কাটা, মাছ কাটা এসবের সঙ্গে এর কোনো সর্ম্পক নেই। এই কথাগুলো কুসংস্কার। মূলত গর্ভবতী মাকে পুষ্টিকর খাবার ও ভাল পরিবেশ দেওয়াটা জরুরি। এ ধরণের শিশুরা বড় হয়ে পরিবার-সমাজে অবহেলিত হয়ে পড়ার আশংকা থাকায় নিজ উদ্যোগে বিনামূল্যে সেবা দিচ্ছেন তিনি। এটি অব্যাহত থাকবে।
তিনি ঢাকার মোহাম্মদপুর এবং চট্টগ্রামের পাঁচলাইশে বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা দেওয়ার পাশাপাশি বছরে কয়েকবার কক্সবাজারের হোপ ফাউন্ডেশনে ক্যাম্প করে থাকেন।
বিনামূল্যে ঠোঁট কাটা ও তালু কাটার চিকিৎসা ক্যাম্প করে কক্সবাজারে সুনাম অর্জন করেছে রামুর দক্ষিণ মিঠাছড়ির হোপ ফাউন্ডেশন। হোপ ফাউন্ডেশনের বাংলাদেশ কান্ট্রি ডিরেক্টর কে এম জাহেদুজ্জামান বলেন, ২০১১ সাল থেকে হোপ ফাউন্ডেশনের বন্ধু অধ্যাপক ডা. বি কে দাস বিজয়ের সহযোগিতায় বিনামূল্যে ঠোঁট কাটা ও তালু কাটার চিকিৎসা করা হয়।
সারাবাংলা/একেএম