কমতে শুরু করেছে নদ-নদীর পানি, নতুন বিপদ কুশিয়ারায়
২৩ জুন ২০২২ ২১:৪১
ঢাকা: সপ্তাহজুড়ে টানা বৃষ্টি, পাহাড়ি ঢল, বন্যা এবং পাহাড় ধসের পর শান্ত হতে শুরু করেছে প্রকৃতি। সিলেট ও রংপুর অঞ্চলে জমে থাকা পানি নামতে শুরু করেছে। জেগে উঠতে শুরু করেছে বানের পানিতে ডুবে থাকা রাস্তাঘাট, বাড়িঘর। তবে এখনও বিপদ কাটেনি সিলেটের দক্ষিণাঞ্চলে। কুশিয়ারা নদীর অববাহিকায় ফের বাড়তে শুরু করেছে পানি। ফলে পানি বাড়ছে হাকালুকি হাওরে। এদিকে সুরমার পানি কমলেও তা এখনো বিপৎসীমার উপর দিয়েই প্রবাহিত হচ্ছে। তবে প্রবণতা কমে আসতে শুরু করেছে বৃষ্টিপাতের। আবহাওয়া অধিদফতর বলছে, আগামী তিন দিনে বৃষ্টি আরও কমে যেতে পারে। তবে এখনও দেশের বিভিন্ন স্থানে বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস রয়েছে।
আবহাওয়া অধিদফতর যা বলছে
বন্যাকবলিত এলাকা থেকে পানি নামতে শুরু করলেও সারাদেশে ভারি বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে। তবে আগামী শনিবার নাগাদ তা প্রশমিত হবে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদফতর। বৃহস্পতিবার (২৩ জুন) আবহাওয়া অধিদফতরের এ সংক্রান্ত প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে। প্রতিবেদন অনুযায়ী, শুক্রবার (২৪ জুন) সকাল পর্যন্ত খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অনেক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়ার সঙ্গে মাঝারি ও বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে সারাদেশের কোথাও কোথাও মাঝারি থেকে ভারি বৃষ্টি হতে পারে। তবে এই সময়ে দেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা থাকবে অপরিবর্তিত।
আবহাওয়াবিদ মো. তরিফুল নেওয়াজ চৌধুরী জানিয়েছেন, মৌসুমী বায়ুর অক্ষ বিহার, পশ্চিমবঙ্গ এবং বাংলাদেশের মধ্যাঞ্চল হয়ে উত্তরপূর্ব দিকে আসাম পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। মৌসুমী বায়ু বাংলাদেশের ওপর মোটামুটি সক্রিয় এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরে মাঝারি অবস্থায় রয়েছে। আগামী ২৪ ঘণ্টায় ঢাকায় দক্ষিণ, দক্ষিণ-পূর্ব দিক থেকে ঘণ্টায় বাতাসের গতিবেগ থাকবে ১০ থেকে ১৫ কিলোমিটার। যা অস্থায়ীভাবে দমকা আকারে ৩০ থেকে ৪০ কিলোমিটার বেগে বাড়তে পারে। তবে শনিবার নাগাদ বৃষ্টির প্রবণতা কমে আসবে। তিনি জানান, আপাতত নতুন করে কোনো বন্যার আশঙ্কার পূর্বাভাস নেই।
নদ-নদী বন্দরে সতর্ক সংকেত
সংস্থাটির আরেক পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, রংপুর, দিনাজপুর, রাজশাহী, পাবনা, বগুড়া, টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহ, ফরিদপুর, ঢাকা, যশোর, মাদারীপুর, কুষ্টিয়া, খুলনা, বরিশাল, পটুয়াখালি, নোয়াখালী, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার এবং সিলেট অঞ্চলের ওপর দিয়ে দক্ষিণ, দক্ষিণ-পূর্ব দিক থেকে ঘণ্টায় ৪৫ থেকে ৬০ কিলোমিটার বেড়ে দমকা বা ঝড়ো হাওয়াসহ অস্থায়ীভাবে বৃষ্টিপাত বা ঝড়ো বৃষ্টি হতে পারে। ওই সকল এলাকার নদ-নদী বন্দরগুলোকে ১ নম্বর সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
২৪ ঘণ্টায় বৃষ্টিপাত
এদিকে গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত হয়েছে মাদারীপুরে ৯৬ মিলিমিটার, বন্যা কবলিত সিলেটে ৩ মিলিমিটার, রংপুরে ১ মিলিমিটার। তবে ময়মনসিংহে ৪০ মিলিমিটার, নেত্রকোনায় ৫২ মিলিমিটার, বদলগাছীতে ৩৩ মিলিমিটার, যশোরে ২২ মিলিমিটার এবং বরিশালে উল্লেখযোগ্য ৩৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। এদিকে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিলো সৈয়দপুরে ৩৪ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
নতুন আশঙ্কা
বন্যা পরিস্তিতির উন্নতির খবরের মধ্যে ফের অবনতির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে সিলেটের কুশিয়ারা নদীর পানি বৃদ্ধিতে। বৃহস্পতিবার (২৩ জুন) এই নদীর প্রতিটি পয়েন্টে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। যে কারণে জকিগঞ্জ, বিয়ানীবাজার, গোলাপগঞ্জ, ফেঞ্চুগঞ্জ, বালাগঞ্জ, ওসমানীনগর উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। সেই সঙ্গে সিলেটের দক্ষিণ সুরমা এলাকায়ও নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। এদিকে রাজবাড়ী, শরীয়তপুর ও মাদারিপুরের নিম্মাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র।
বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র যা বলছে
বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের তথ্যানুযায়ী, বৃহস্পতিবার (২৩ জুন) পরবর্তী ২৪ ঘণ্টা অর্থাৎ সকাল ৯টা থেকে শুক্রবার (২৪ জুন) সকাল ৯টা পর্যন্ত গঙ্গা-পদ্মা ছাড়াও দেশের প্রধান নদ-নদীগুলোর পানি কমতে শুরু করেছে। সংস্থাটির নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আরিফুজ্জামান ভূঁইয়া জানিয়েছেন, আবহাওয়া অধিদফতরের গাণিতিক মডেলভিত্তিক পূর্বাভাস অনুযায়ী, আগামী ৪৮ ঘণ্টায় তিস্তা বেসিন ছাড়া দেশের অভ্যন্তরে এবং উজানের বিভিন্ন অংশে ভারি থেকে অতি ভারি বর্ষণের সম্ভাবনা কম। এই সময় ব্রক্ষ্মপুত্র-যমুনা, ধরলা, দুধকুমার এবং দেশের উত্তর পূর্বাঞ্চলের সকল প্রধান নদ-নদীগুলোর শুধু তিতাস ছাড়া পানি সমতল কমতে শুরু করেছে এবং তা অব্যাহত থাকতে পারে। অন্যদিকে পদ্মা ও গঙ্গা নদীর পানি স্থিতিশীল থাকতে পারে। এছাড়া আগামী দুই থেকে তিন দিনে ভারতের হিমালয় পাদদেশীয় পশ্চিমবঙ্গে যেমন জলপাইগুড়ি ও সিকিম এলাকায় মাঝারি থেকে ভারি বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস রয়েছে। ওই এলাকায় বৃষ্টিপাত হলে তিস্তা নদীর পানি বাড়বে এবং তা বিপৎসীমার কাছাকাছি অবস্থান করতে পারে।
উন্নতির দিকে সিলেটের বন্যা পরিস্থিতি
গত এক সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে চলা বন্যা ও ঢলের জলে দেশের মোট ১৭ জেলা প্লাবিত হয়েছে। বন্যা কবলিত মানুষের সংখ্যা ছাড়িয়েছে ৫০ লাখ। বন্যায় ৫০ জন মারা যাওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে। তবে স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্য বলছে, বন্যায় নানা কারণে ৪২ জন মারা গেছেন, এর মধ্যে সিলেটে ২১ জন আর ময়মনসিংহে ১৮ জন। আবহাওয়া পূর্বাভাস নির্ণয় করা সংস্থাগুলোর তথ্য মতে, আগামী ২৪ ঘণ্টায় দেশের উত্তর ও পূর্বাঞ্চলের সিলেট ও সুনামগঞ্জ ও নেত্রকোনা জেলার বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে। তবে কিশোরগঞ্জ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার বন্যা পরিস্থিতি স্থিতিশীল থাকতে পারে। একই সময়ে কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, বগুড়া,সিরাজগঞ্জ, টাঙ্গাইল ও জামালপুর জেলার বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে।
সারাবাংলা/জেআর/এসএসএ