‘বিএনপির সবাইকে গাট্টি বাইন্ধ্যা পাকিস্তানে পাঠায়ে দিলে ভালো হয়’
২৩ জুন ২০২২ ১৬:১২
ঢাকা: বিএনপি বাংলাদেশের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে না জানিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, এদের সবাইকে গাট্টি বাইন্ধ্যা পাকিস্তানে পাঠায়ে দিলেই ভালো হয়। কারণ, পাকিস্তানের এখন যে অবস্থা, তাতে ওখানেই তারা ভালো থাকবে।
বৃহস্পতিবার (২৩ জুন) সকালে আওয়ামী লীগের ৭৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি বঙ্গবন্ধু এভিনিউ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে প্রান্তে যুক্ত ছিলেন প্রধানমন্ত্রী। গণভবন প্রান্তে সভা পরিচালনা করেন দলের প্রচার সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ।
আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, ‘খালেদা জিয়ার ছেলে তারেক জিয়া স্লোগান দেয়। পঁচাত্তরের মধ্য দিয়ে এটাই প্রমাণ হয়েছে যে, তার বাপ-মা পাকিস্তানের দালাল ছিল এবং তারা বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে সম্পূর্ণ নস্যাৎ করতে চেয়েছিল, আদর্শগুলো মুছে দিয়েছিল, জাতির পিতার নামটা মুছে ফেলেছিল। কাজেই এটা তো খুব স্বাভাবিক যে, তারেক জিয়া স্লোগান দেবেই। পাকিস্তানি সেনাদের পদলেহন করা চলাটাই তো তাদের অভ্যাস। তারা তো স্বাধীনতার চেতনায়-ই বিশ্বাস করে না। স্বাধীন জাতি হিসাবে যে একটা মর্যাদা আছে এটাই তাদের পছন্দ না। তারা পরাধীন থাকতেই পছন্দ করে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘বিএনপি অগ্নিসন্ত্রাস করে জীবন্ত মানুষ পুড়িয়ে মেরেছে। ১৯টা ক্যূ হয়েছে, হাজার হাজার সৈনিক অফিসারকে হত্যা করেছে, কত পরিবার লাশও পায়নি। জিয়াউর রহমান যাদের হত্যা করেছে, গুম করেছে- তারা কোনোদিন জানতেও পারেনি কী তাদের অপরাধ? পরিবারে সদস্যরা জানতে পারেনি লাশগুলো কোথায়? গুম খুন তো জিয়াউর রহমানই শুরু করে দিয়েছিল ৭৫ সালের পর, যখন সে রাষ্ট্রপতি হয়। খালেদা জিয়া এসেও তো আমাদের কত নেতাকর্মীকে হত্যা করেছে। এরশাদের আমলেও আমাদের নেতাকর্মী নিযাতিত হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘বিএনপি’র এক নেতা বলছেন, তারেক জিয়াকে নাকি আসতে দেওয়া হয় না। কথাটা তো ঠিক না। এটা সম্পূর্ণ মিথ্যা কথা বলেছে। রাজনৈতিক নেতার যদি ফিরে আসার সাহস না থাকে সে আবার নেতৃত্ব দেয় কিভাবে? আজ তাদের কথার মধ্য দিয়ে প্রমাণ হয় যে, এরাই ১৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত। এই চক্রান্তের সঙ্গে জড়িত জিয়াউর রহমান ও খালেদা জিয়া। তারেক জিয়া সেটা প্রমাণ করে দিয়েছে, পঁচাত্তরে হাতিয়ারকে সমর্থন দিয়ে। অর্থ্যাৎ খুনিদের সমর্থন দিয়ে। কারণ, এই খুনিদের তারা বিচারের হাত থেকে মুক্ত করেছিল ও পুরস্কৃত করেছিল। ইনডেমিনিটি অর্ডিন্যান্স দিয়ে সেটাকে আইনে পরিণত করেছিল। এবং তাদের বিভিন্ন দূতাবাসে চাকরি দিয়ে পুরস্কৃত করেছিল। তবে পাপ বাপকেও ছাড়ে না এবং জিয়াউর রহমানকে সেইভাবেই নিহত হতেই হয়েছিল। তার লাশটাও কিন্তু কেউ পায়নি।’
পদ্মা সেতু নিয়ে বিএনপির সমালোচনার জবাব দিতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আজকে পদ্মা সেতু নিয়ে তারা কথা তুলেছে। দুর্নীতির অভিযোগ এনেছিল ওয়ার্ল্ড ব্যাংক। খালেদা জিয়ার আমলে সিদ্ধিরগঞ্জ পাওয়ার প্ল্যান্টে দুর্নীতির দায়ে ওয়ার্ল্ড ব্যাংক কিন্তু অর্থ বন্ধ করে দিয়েছিল। পরবর্তী সময়ে আমেরিকার গোয়েন্দা সংস্থা এটা বের করেছিল যে, কোন প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে খালেদা জিয়ার পরিবার ও তার ছেলেরা অর্থ নিয়েছিল। ঘুষ-দুর্নীতির কারণেই কিন্তু সেই টাকা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। ঢাকা-ময়মনসিংহ রোড করার সময় দুর্নীতির দায়ে ওয়ার্ল্ড ব্যাংক কিন্তু সড়ক পরিবহনেও অর্থ বন্ধ করে দিয়েছিল। তাদের চরিত্রটাই তো এই। তাদের পাচার করা অর্থ অর্থ্যাৎ মানি লন্ডারিং করে যে টাকা বিদেশে পাচার করেছিল আমরা কিন্তু সেই টাকার কিছু অংশ উদ্ধার করে দেশে ফেরতও এনেছি। এটা তো প্রমাণিত। এরপরে তাদের মুখ থেকে এতো বড় কথা কিভাবে আসে?’
দেশের বন্যার কথা উল্লেখ করে বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, ‘বন্যা হয়েছে। বন্যায় আজ পর্যন্ত বিএনপির কোনো নেতা সাহায্য বানভাসিদের। ঢাকায় বসে নানা কথা বলে বেড়াচ্ছে। কিন্তু দুর্গম এলাকায় যেখানে বন্যার পানির কারণে কেউ পৌঁছাতে পারছে না, সেখানে কিন্তু আমার স্থানীয় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগের কর্মীরা ত্রাণ বিতরণ করে যাচ্ছে। তারা মানুষের পাশে দাঁড়াচ্ছে। তারা খাদ্য সাহায্য দিচ্ছে, উদ্ধার কাজ করছে। প্রত্যেকে কিন্তু যার যার জায়গায় কাজ করে যাচ্ছে।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যারা আজ পর্যন্ত বানভাসিদের জন্য এক মুঠো খাবারও দিতে পারেনি বা তাদের পাশে না দাঁড়িয়ে এখানে বসে বসে মায়া কান্না কেঁদে যাচ্ছে। এটাই হচ্ছে ওদের চরিত্র।’
তিনি বলেন, ‘আমরা পদ্মা সেতু করেছি, নিজস্ব অর্থায়নে। বিএনপি আবার এটা নিয়ে প্রশ্ন তোলে কোন মুখে, যাদের আপাদমস্তক দুর্নীতিতে ভরা। এতিমের অর্থ আত্মসাৎ করে সাজা পেয়েছে খালেদা জিয়া। শুধু এতিমের অর্থ কেন, নাইকো, গ্যাটকো এরকম বহু কেস ঝুলে আছে। ওই কেসে সে তো কখনো কোর্টেই যেতে চায়নি। প্রতিটা প্রজেক্টে দুর্নীতি করে তারা টাকা বানিয়েছে। দুর্নীতি করে যদি টাকা না-ই বানাবে তাহলে বিদেশে এত বিলাস বহুল জীবনযাপন করে কিভাবে? কত টাকা খরচ করে সেখানে কোম্পানি খুলেছে। সেই কোম্পানিতে প্রথমে সে নিজেকে ব্রিটিশ নাগরিক লিখেছে। আবার এক বছর পরে সেটাকে আবার সংশোধন করে সেখানে বাংলাদেশের নাগরিক লিখেছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আওয়ামী লীগ এখানে নিজের ভাগ্য গড়তে আসেনি। আওয়ামী লীগ দেশের মানুষের ভাগ্য গড়তে এসেছে। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে বাংলাদেশের ইতিহাস ঘাটলে দেখা যায়, আজ পর্যন্ত এই দেশের মানুষের যতটুকু অর্জন সবটুকু আওয়ামী লীগের হাতে। আওয়ামী লীগ যখনই সরকারে এসেছে এদেশের মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটেছে। এজন্য বার বার আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় আসতে দেওয়া হয় না।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘১৯৯৬ সালে সরকারে এসে আমরা যতটুকু অর্জন করেছিলাম ২০০১ বিএনপি ক্ষমতায় এসে সব নস্যাৎ করে বাংলাদেশকে জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস এবং দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন করেছিল। খালেদা জিয়া প্রাইম মিনিস্টার থাকতে দুর্নীতিতে পাঁচ পাঁচবার চ্যাম্পিয়ন বানিয়েছিল বাংলাদেশকে। সেই ভাবমূর্তি বাংলাদেশের জন্য অসম্মানজনক। সেই অবস্থান থেকে আজ আমরা দেশকে পরিবর্তন করে বিশ্বে একটা সম্মানজনক স্থানে নিয়ে গিয়েছি। বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের রোল মডেল। এ কারণে আমরা উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছি।’
যমুনা নদীর সেতু নিয়ে তিনি বলেন, ‘১৯৭৩ সালে জাতির পিতা যখন জাপানে যান তারই অনুরোধে এই যমুনা সেতুর উপর সমীক্ষা হয়। কিন্তু সেটা তো আর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব করে যেতে পারেননি। জিয়াউর রহমান এসে এটা বন্ধ করে দেয়। জেনারেল এরশাদ আসার পরে আবার উদ্যোগ নেয় যমুনা সেতু করার। যতটুকু কাজ এরশাদ করে গিয়েছিল, এটা হলো বাস্তবতা। খালেদা জিয়াও ক্ষমতায় এসেও কিন্তু খুব বেশি এগুতে পারেনি। কারণ সব জায়গায় তো কমিশন খাওয়ার অভ্যাস। আমার কমিশন তো একজনকে দিলে হবে না। মায়ের জন্য একটা, দুই ছেলের জন্য দুইটা, ফালুর জন্য একটা, ওমুকের জন্য একটা- এই করতে করতে কেউ আর ওখানে কাজ করতে পারত না। ভাগে ভাগে তাদের কমিশন দিতে হতো। এই কারণে কোনো কিছুই এগুতে পারেনি। আমরা ১৯৯৬ সালে সরকারে আসি। কিন্তু ক্ষমতায় এলেও যমুনা সেতুতে রেললাইন, বিদ্যুতের লাইন ও গ্যাসলাইন দিয়ে নতুন ডিজাউন করা সম্ভব ছিল না। কিন্তু সেই ডিজাইনের সঙ্গেই গ্যাসের লাইন, রেললাইন ও বিদ্যুৎ লাইন দিয়ে এটাকে মাল্টিপারপাস ব্রিজ হিসেবে তৈরি করি। যদিও এই রেললাইন করা নিয়ে ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের আপত্তি ছিল। কিন্তু তাদের কথা আমরা শুনিনি।’
বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, দেশটা আমাদের। আমরা এদেশের প্রকৃতি পরিবেশ চিনি ও জানি। মানুষের কল্যাণ আওয়ামী লীগ যতটা বুঝবে অন্যরা তা বুঝবে না। কারণ, বুঝবে কী করে, বিএনপির হৃদয়ে তো থাকে পাকিস্তান। তাদের মনেই আছে পাকিস্তান। দিল মে হ্যায় পেয়ারে পেয়ারে পাকিস্তান। সারাক্ষণ গুনগুন করে ওই গানই গায়। আই পেয়ারে মান, আখো কি তার আসমান, কি চান ম্যারে জান পাকিস্তান; এই হলো খালেদা জিয়ার কথা। কাজেই তাদের দিয়ে তো বাংলাদেশের ভালো কিছু হবে না- এটা খুব স্বাভাবিক। এটা নিয়ে আপনাদের এত দুঃখ বা চিন্তা করার কিচ্ছু নাই।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘এখনো লাহোরের সোনার দোকানে খালেদা জিয়ার বড় ছবি আছে। ওই দোকানোর সোনার গয়না তার খুব প্রিয়। তাদের মানসিকতা ওই দিকে। আমাদের বাংলাদেশের জন্য না। তবে এটাও ঠিক এদের জন্ম তো বাংলাদেশে না। না জিয়ার জন্ম বাংলাদেশে, না খালেদা জিয়ার জন্ম বাংলাদেশে। এরশাদও তো কুচকুচ বিহারী। তারও জন্ম কুচবিহারে। কিন্তু আমার বাবা ছিলেন এই দেশের, এই মাটির সন্তান। কাজেই মাটির টান আলাদা। এখানে আমাদের নাড়ির টান। সেজন্য এদেশের মানুষের ভাগ্য গড়াই আমাদের লক্ষ্য। সে জন্যই আমরা কাজ করি। আওয়ামী লীগের আর্দশই হচ্ছে জনগণের সেবা করা।’
প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে দলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বলেন, ‘এই আওয়ামী লীগ ভাষা আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছে, মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়ে দেশের মানুষের স্বাধীনতা এনে দিয়েছে। এই আওয়ামী লীগের মাধ্যমেই জাতির পিতা যুদ্ধবিধস্ত দেশ গড়ে স্বল্পোন্নত দেশে উন্নীতি করে গিয়েছিলেন। আবার ২১ বছর পর আওয়ামী লীগ সরকারে আসার পরে মানুষ প্রথম উপলব্ধি করেছে সরকার হচ্ছে জনগণের সেবক।’
আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য দেন সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আব্দুর রহমান, মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীরবিক্রম, এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফসহ ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের সভাপতি শেখ বজলুর রহমান ও আবু আহমেদ মান্নাফী প্রমুখ।
সারাবাংলা/এনআর/পিটিএম
৭৩ বছর আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা