ঢাকা: প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে জ্যেষ্ঠ সংসদ সদস্যরা বলেছেন, পদ্মা সেতুতে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়ন বন্ধে ড. মুহাম্মদ ইউনুসের সঙ্গে বিএনপিও যে সেই ষড়যন্ত্রে জড়িত ছিল, বিএনপি মহাসচিবের ইউনুসকে নিয়ে মায়াকান্না তা প্রমাণ করেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সব ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে পদ্মা সেতুর কাজ সফলভাবে সম্পন্ন করার মাধ্যমে প্রমাণ করলেন বিরোধীতাকারী এ সব প্রাজ্ঞ, বিজ্ঞ, বিশেষজ্ঞরা যোগ্যতার উচ্চতায় শেখ হাসিনার ধারকাছেও যায় না।
প্রথমে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী এবং পরে প্যানেল সভাপতি এ বি তাজুল ইসলামের সভাপতিত্বে বৃহস্পতিবার (২৩ জুন) জাতীয় সংসদ অধিবেশনে প্রস্তাবিত ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে তারা এ সব কথা বলেন।
আলোচনায় অংশ নেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম, সরকারি দলের ড. বীরেন শিকদার, মেজর (অব.) রফিকুল ইসলাম বীরউত্তম, মোসলেম উদ্দিন, মজাহারুল হক প্রধান, মোতাহার হোসেন, পারভীন হক শিকদার, নুরুল আমিন, মোছলেম উদ্দিন আহম্মেদ, শামসুল আলম দুদু প্রমুখ।
আলোচনায় অংশ নিয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম বলেন, ‘আওয়ামী লীগ ও বঙ্গবন্ধুর দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রাম ও আত্মত্যাগের ফসল হচ্ছে আমাদের স্বাধীনতা। জিয়াউর রহমান কোনোদিনই মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন না, তিনি পাকিস্তানের আইএসের এজেন্ট হিসেবে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে অনুপ্রবেশ করেছিলেন। বঙ্গবন্ধু হত্যার পর জিয়ার প্রকৃত মুখোশ জাতির সামনে উন্মোচিত হয়। আজ খালেদা জিয়াও জিয়ার পদাঙ্ক অনুসরণ করে রাজনীতি করছে। তার পুত্র তারেক জিয়া ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা করে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনাকে হত্যা করতে চেয়েছিল।’
তিনি বলেন, ‘পদ্মা সেতুতে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়ন বন্ধের ষড়যন্ত্রে ড. ইউনুসের সঙ্গে যে বিএনপিও জড়িত ছিল তা দলটি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলামের বক্তব্য স্পষ্ট। তিনি এখন ইউনুসের পক্ষে সাফাই গেয়ে বক্তব্য রাখছেন।’
তিনি বলেন, ‘পৃথিবীর কোনো দেশে স্বাধীনতাবিরোধী রাজনীতি করতে পারে না। কিন্তু আমাদের দেশে এখনও চিহ্নিত স্বাধীনতাবিরোধীরা রাজনীতি করছে, ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত করছে। আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে আজ সবাইকে শপথ নিতে হবে, ঐক্যবদ্ধভাবে এসব স্বাধীনতাবিরোধীদের দেশ থেকে মূলোৎপাটন করতে হবে। সরকারেও থাকবে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি, বিরোধী দলেও তাই। যতদিন এদের মূলোৎপাটন করা যাবে না ততদিন রাজনীতিতে স্বস্তি ফিরে আসবে না।’
জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু পদ্মা সেতু নির্মাণের বিরোধীতাকারীদের উদ্দেশে করে বলেন, ‘আমরাও যে পারি, আমাদের সক্ষমতা আছে- শত ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে পদ্মা সেতু নির্মাণ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তা সবাইকে দেখিয়ে দিয়েছেন। নিজ অর্থে পদ্মা সেতু নির্মাণে প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার পর দেশের কিছু সুশীল বাবুরা বলেছিলেন- দাতারা ছাড়া পদ্মা সেতু নির্মাণ সম্ভব নয়, ভিত্তিপ্রস্তুর স্থাপন করতে পারবে, নির্মাণ নয়। আবার অনেকে বলেছিল নিজস্ব টাকায় সেতু করতে গেলে দেশের সব কাজ বন্ধ হয়ে যাবে, দেশে দুর্ভিক্ষ নেমে আসবে। সবশেষ খালেদা জিয়া বলেছিলেন- সেতুটি জোড়াতালি দিয়ে নির্মাণ করা হচ্ছে, কেউ উঠবেন না।’
সমালোচকদের সমালোচনা করে তিনি বলেন, তারা দাতাদের শিখিয়ে দেওয়া বুলির বাইরে একটা কথাও বলতে পারে না। তারা হচ্ছেন দাতাদের তোতা পাখি। শেখ হাসিনা পদ্মা সেতুর কাজ সফলভাবে করার মাধ্যমে প্রমাণ করলেন এসব প্রাজ্ঞ, বিজ্ঞ, বিষেজ্ঞরা যোগ্যতার উচ্চতায় শেখ হাসিনার ধারকাছেও যায় না। শেখ হাসিনা অনেক পরিকল্পনাবিদ, দূরদর্শী ও সাহসী রাজনৈতিক নেতা, বিজ্ঞ অর্থনীতিবিদ। তার মতো প্রশ্নাতীত দেশপ্রেমিক রাজনীতিবিদ এই বাংলায়ও নেই, নেই এই উপমহাদেশেও। তাই বিদেশিদের বলব— সহযোগিতা করুন, কিন্তু অযথা ছবক দিতে আসবেন না। তিনি জঙ্গিবাদ-সাম্প্রদায়িক-দুর্নীতিবাজ চক্রকে নির্মূলে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষ শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান।
সাবেক প্রতিমন্ত্রী ড. বীরেন শিকদার বলেন, ‘শত ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত মোকাবিলা করে চ্যালেঞ্জ দিয়েই বিশ্বকে তাক লাগিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদ্মা সেতু নিজস্ব অর্থায়নে নির্মাণ করেছেন। তাই এটি শুধু নিছক সেতু নয়, এটি বাংলাদেশের সক্ষমতার প্রতীক। আগে বিএনপি এই সেতু নিয়ে কত ষড়যন্ত্র করেছে। এখন বলছে এটা তো আমাদের টাকায় তৈরি হয়েছে। এখন তারা অংশীদারিত্ব চায়। জনগণকে বিভ্রান্ত করা ছাড়া আসলে বিএনপির কোনো অর্জন নেই।’