৩০ লাখ শিশুর জন্য স্কুলে নেই ওয়াশরুম, খাবার পানি
২৪ জুন ২০২২ ০০:৪৫
ঢাকা: দেশে ৭ শতাংশ স্কুলে পানি, স্যানিটেশন ও পরিচ্ছন্নতা সুবিধা নেই। অর্থাৎ দেশের প্রায় ৩০ লাখ স্কুলগামী শিশুর জন্য তাদের স্কুলে নেই নিরাপদ পানির ব্যবস্থা, বাথরুম ও হাত ধোয়ার ব্যবস্থা।
ইউনিসেফ ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এক জরিপে এ তথ্য উঠে এসেছে। বৃহস্পতিবার (২৩ জুন) ইউনিসেফ প্রকাশিত ওই জরিপে বলা হয়েছে, দেশের ১৯ শতাংশ বা প্রতি পাঁচটির মধ্যে একটি স্কুলে নিরাপদ ও সুপেয় পানির সরবরাহের ঘাটতি রয়েছে। এর ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে প্রায় ৮৫ লাখ শিশু।
জরিপে আরও বলা হয়েছে, ৪০ শতাংশেরও বেশি স্কুলে মৌলিক স্যানিটেশন সুবিধার ঘাটতি রয়েছে। ফলে স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে আছে ১ কোটি ৯ লাখেরও বেশি শিক্ষার্থী। এছাড়া ছেলে ও মেয়েদের জন্য আলাদা টয়লেট নেই ৪৩ শতাংশ স্কুলে। এছাড়াও সাবান ও পানি দিয়ে হাত ধোয়ার মতো মৌলিক স্বাস্থ্যসুরক্ষার ঘাটতিও রয়েছে ৪৪ শতাংশ স্কুলে।
শুধু তাই নয়, প্রতিবেদনে উঠে আসা সবচেয়ে আশঙ্কাজনক তথ্য হলো— দেশের ৭ শতাংশ স্কুলে কোনো ধরনের ওয়াশ (WASH— Water, Sanitation, and Hygiene in Healthcare) সুবিধা একেবারেই নেই। অর্থাৎ দেশের স্কুলগাশী ৩০ লাখেরও বেশি শিশুর জন্য তাদের স্কুলে নিরাপদ সুপেয় পানি, টয়লেট এবং হাত ধোয়ার কোনো ব্যবস্থা একেবারেই অনুপস্থিত।
ইউনিসেফ ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ও প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, ওয়াশ সুবিধা আছে— এমন স্কুলের সংখ্যা অনেক জায়গাতেই কমছে। বিভিন্ন দেশের মধ্যে অবশ্য এমন সুবিধাসম্পন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যায় বৈষম্য রয়েছে। স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) ও যেসব দেশ নাজুক পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, সেসব দেশের স্কুলশিক্ষার্থীরাই এসব বিষয়ে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তথ্য বলছে, শারীরিকভাবে প্রতিবন্ধকতার শিকার শিক্ষার্থীদের ব্যবহারোপযোগী ওয়াশ সুবিধা রয়েছে একেবারেই কমসংখ্যক স্কুলে।
ইউনিসেফের পানি, স্যানিটেশন, হাইজিন অ্যান্ড ক্লাইমেট, এনভায়রনমেন্ট, এনার্জি এবং দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাস বিষয়ক পরিচালক কেলি অ্যান নেইলর বলেন, অনেক বেশি শিশু নিরাপদ পানীয় জল, পরিষ্কার টয়লেট এবং হাত ধোয়ার জন্য সাবান ছাড়াই স্কুলে যায়। এগুলো তাদের জন্য লেখাপড়া কঠিন করে তোলে। কোভিড-১৯ মহামারি আমাদের স্বাস্থ্যকর ও অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষার পরিবেশের গুরুত্ব বুঝতে শিখিয়েছে। শিশুদের শিক্ষা সুরক্ষা নিশ্চিতের জন্য মহামারি থেকে পুনরুদ্ধারের পথে অবশ্যই স্কুলগুলোকে বর্তমান ও ভবিষ্যতের সংক্রামক রোগগুলোর বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য উপযোগী হয়ে উঠতে হবে। এর জন্য সবার আগে প্রাথমিক পরিষেবাগুলোর ব্যবস্থা করতে হবে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরিবেশ, জলবায়ু পরিবর্তন ও স্বাস্থ্য বিষয়ক বিভাগের পরিচালক ড. মারিয়া নেইরা বলেন, পানি, স্যানিটেশন ও স্বাস্থ্যকর অভ্যাস কেবল সংক্রমণ থেকেই সুরক্ষা দেবে না, একটি শিশুর স্বাস্থ্য, বেড়ে ওঠা ও ভালো থাকা নিশ্চিত করবে। স্কুলগুলোর ব্যবস্থা এমন হওয়া উচিত, যেখানে শিশুরা মৌলিক অবকাঠামোর অভাবে বা খারাপভাবে রক্ষণাবেক্ষণের কারণে কষ্ট বা সংক্রমণের শিকার না হয়ে বরং উন্নতি লাভ করবে।
স্কুলগুলো স্বাস্থ্যকর অভ্যাস তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখলেও ২০২১ সালে এসেও অনেক স্কুলেই ‘ওয়াশ’ সুবিধা নেই। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও ইউনিসেফের যৌথ পর্যবেক্ষণ প্রোগ্রামের ফলাফল বলছে, বিশ্বব্যাপী ২৯ শতাংশ স্কুলের প্রায় ৫৪ কোটি ৬০ লাখ শিশুর জন্য কোন সুপেয় পানির সরবরাহ নেই। ২৮ শতাংশ স্কুলের প্রায় ৫৩ কোটি ৯০ লাখ শিশুর জন্য নেই মৌলিক স্যানিটেশন সুবিধা। এছাড়া ৪২ শতাংশ স্কুলের প্রায় ৮০ কোটি ২০ লাখ শিশুর জন্য কোনো মৌলিক হাইজিন (হাত ধোয়ার জায়গা, পানি, সাবান ইত্যাদি) সুবিধা নেই।
ইউনিসেফ বলছে, স্কুলে মৌলিক সুবিধার অভাব আছে— বিশ্বের এমন এক-তৃতীয়াংশ শিশুই স্বল্পোন্নত দেশের বাসিন্দা আর এমন অর্ধেক শিশুগুলো এমন দেশগুলোতে বাস করছে, যেগুলোর অবস্থা নাজুক। সাব-সাহারান আফ্রিকা ও ওশেনিয়াতেই শিশুদের শৌলিক স্যানিটেশন ও স্বাস্থ্যসুরক্ষা সংক্রান্ত সেবাগুলো রয়েছে অর্ধেকেরও কমসংখ্যক স্কুলে। এর মধ্যে সাব-সাহারান আফ্রিকাই একমাত্র অঞ্চল যেখানে সুপেয় পানির ব্যবস্থাও অর্ধেকের বেশি স্কুলেই নেই।
ইউনিসেফ বলছে, ২০৩০ সালের মধ্যে বিশ্বব্যাপী সবগুলো স্কুলকে সুপেয় পানির আওতায় আনতে বর্তমান অগ্রগতির হারের ১৪ গুণ, মৌলিক স্যানিটেশনের অগ্রগতির হারের তিন গুণ এবং মৌলিক স্বাস্থ্যবিধি পরিষেবাগুলোর অগ্রগতির হারের পাঁচ গুণ পরিমাণ সেবা বাড়াতে হবে। অন্যদিকে, স্বল্পোন্নত ও নাজুক অবস্থায় থাকা দেশগুলোতে একই লক্ষ্য অর্জনের জন্য বর্তমান অগ্রগতির হারের চেয়ে কোথাও শতগুণ আবার কোথাও ৫০ গুণ প্রচেষ্টা বাড়াতে হবে।
ইউনিসেফ আরও বলছে, সবার জন্য শিক্ষা কার্যক্রমের সফলতার জন্য শারীরিক প্রতিবন্ধিকতার শিকার শিশুরাও যেতে পারে— এমন ওয়াশ সুবিধাসম্পন্ন স্কুলের প্রয়োজন। কিন্তু বর্তমানে সামান্য কিছু দেশই এই সুবিধা নিশ্চিত করতে পারছে। তবে অনেক দেশের নিজস্ব তথ্যের সঙ্গে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর তথ্যের মিল থাকে না বলেও জানাচ্ছে ইউনিসেফ।
সারাবাংলা/আরএফ/টিআর
ইউনিসেফ ওয়াশ সুবিধা সুপেয় পানি স্কুলে টয়লেট হাত ধোয়ার সুবিধা