‘বন্যা কবলিত এলকায় সরকারের ত্রাণ পৌঁছাচ্ছে না’
২৪ জুন ২০২২ ১৫:৩৫
ঢাকা: বন্যা কবলিত এলাকায় সরকারের ত্রাণ সামগ্রী পৌঁছাচ্ছে না বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
শুক্রবার (২৪ জুন) নিখোঁজ কাউন্সিলর চৌধুরী আলমের খিলগাঁও বাসায় তার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাতের পর সাংবাদিকদের কাছে তিনি এ অভিযোগ করেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘সিলেট, সুনামগঞ্জসহ দেশের উত্তরাঞ্চলে ভয়াবহ বন্যা চলছে। আমি নিজে গতকাল সিলেটে গিয়েছিলাম। নিজের চোখে না দেখলে এর ভয়াবহতা সস্পর্কে কোনো ধারণা করা যায় না। মানুষ যে কষ্টে আছে এবং তাদের কাছে যে ত্রাণ পৌঁছে দেওয়া, তাদের বাঁচার ব্যবস্থা করে দেওয়া, তাদের পূনর্বাসনের ব্যবস্থা করে দেওয়ার কোনো ব্যবস্থা সরকার করে নাই।’
‘অথচ এই অনির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী হেলিকপ্টারে গিয়ে ওপর দিয়ে ঘুরলেন, ঘুরে তিনি সার্কিট হাউজের হেলিপ্যাডে নেমেছেন। সেখানে ১০জন লোককে টোকেন ত্রাণ দিয়েছে এবং তারপরে তিনি বলেছেন, সব হয়ে যাবে। গতকাল রাত পর্যন্ত আমি যা খবর পেয়েছি এগুলো কিছুই হয়নি’- বলেন মির্জা ফখরুল।
তিনি বলেন, ‘সেনাবাহিনী নামার পরে তারা সিস্টেমেটিক্যালি কিছু ত্রাণ রিমোট অঞ্চলগুলো পৌঁছানোর চেষ্টা করছে। এছাড়া কিছু কাজ করছে বেসরকারি এনজিওগুলো। আমাদের দলের নেতা-কর্মীরা সবচেয়ে বেশি কাজ করছে। তারা নিজেদের পয়সা দিয়ে নৌকা ভাড়া করে ত্রাণ নিয়ে মানুষের কাছে পৌঁছাচ্ছে এবং ব্যাপকহারে কাজ করছে তারা। আমি আপনাদের মাধ্যমে সিলেটের নেতৃবৃন্দকে ধন্যবাদ জানাতে চাই।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘যে কারণে বন্যা হয় সেই কারণ বা সমস্যা সমাধানে কোনো ব্যবস্থা সরকার গ্রহণ করেনি। বরঞ্চ এটাকে বাড়ানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। হাওরে যে বড় রাস্তা হয়েছে, যেটা কিশোরগঞ্জের ইটনায় গিয়েছে। আমরা শুনেছি সেটা আমাদের রাষ্ট্রপতি মহোদয়ের একটা প্রাইজ প্রজেক্ট। ৩৩ কিলোমিটার এই রাস্তা। এই রাস্তায় সম্পূর্ণ পানির যে স্বাভাবিক প্রবাহ যেটাকে বন্ধ করে দিয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘যে পানি উজান থেকে নেমে আসে সেই পানি সিলেট-সুনামগঞ্জের হাওর দিয়ে বেরিয়ে গিয়ে কিশোরগঞ্জ-নেত্রকোনার হাওর দিয়ে মেঘনাতে গিয়ে পড়ে। অথচ পানির স্বাভাবিক প্রবাহ বা গতিকে আজকে বন্ধ করা হয়েছে। যার ফলে এভাবে ভয়াবহ বন্যা সৃষ্টি হচ্ছে।’
‘সরকার জনগণের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে’- এমন অভিযোগ করে তিনি বলেন, ‘যাদেরকে গুম করা হয়েছে, তাদেরকে জীবনের অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। তাদের পরিবারকে তাদের সমস্ত ব্যাংকের লেনদেন, সম্পত্তির মালিকানা, ওয়ারিসন সার্টিফিকেট পর্যন্ত পাচ্ছে না। গুম হওয়া পরিবার চরম কষ্টের মধ্যে আছে।’
‘এভাবে প্রতিটি ক্ষেত্রে এই সরকার জনগণের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। যে কারণে আমি বলছিলাম এই সরকারকে একমাত্র আখ্যা দেওয়া যেতে পারে গণশত্রু। তারা জনগণের শত্রু হিসেবে চিহ্নিত হয়ে গেছে’- বলেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি বলেন, ‘চৌধুরী আলমকে এই সরকারের নির্যাতনকারী বাহিনীর সদস্যরা তুলে নিয়ে যায়। তারপর থেকে ১২ বছরে শত চেষ্টা করেও তার পরিবার ও বিএনপি কোথাও কোনো সন্ধান পায়নি। এখন পর্যন্ত সরকার তার কোনো খোঁজ দিতে পারেনি। আওয়ামী লীগ সরকারে আসার পরে এই ধরনের ঘটনা অনেকগুলো সংগঠিত হয়েছে। আমাদের দলের লোকই আছে ৬‘শর উপরে।’
২০১০ সালের ২৪ জুন রাজধানীর ফার্মগেইট এলাকা থেকে সাদা পোশাকে গোয়েন্দা সংস্থার পরিচয়ে ঢাকা সিটি করপোরেশনের ২০ ওয়ার্ডের (সাবেক ৫৬ নং ওয়ার্ড) নির্বাচিত কমিশনার চৌধুরী আলমকে মাইক্রোবাসে করে তুলে নিয়ে যায়।
তার নিখোঁজ হওয়ার এই দিনটিতে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সকাল সাড়ে ১০টায় খিলগাওয়ে চৌধুরী আলমের বাসায় যান এবং তার সহধর্মিনী হাসিনা চৌধুরীর সাথে কথা বলেন এবং পরিবারের সদস্যদের খোঁজ-খবর নেন।
এ সময়ে চৌধুরীর আলমের দুই ছেলে আবু সাঈদ চৌধুরী, আবু সাদাত চৌধুরী, দুই মেয়ে মাহমুদা আখতার, মাহফুজা আখতার ও চৌধুরী আলমের ছোট ভাই খুরশীদ আলম উপস্থিত ছিলেন।
সারাবাংলা/এজেড/এনএস