Friday 06 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

পদ্মা সেতুর উদ্বোধন ঘিরে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা বলয়

উজ্জল জিসান, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
২৪ জুন ২০২২ ১৬:৩১

পদ্মা সেতুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানকে ঘিরে পুলিশের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার। ছবি তুলেছেন সারাবাংলা সিনিয়র ফটো করেসপন্ডেন্ট হাবিবুর রহমান।

ঢাকা: রাত পোহালেই সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। স্বপ্নের পদ্মা সেতুর উদ্বোধন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় এই প্রকল্পের উদ্বোধন করবেন। সেতুর উদ্বোধন ঘিরে সারাদেশে সাজ সাজ রব। মানুষের মধ্যে বইছে আনন্দের বন্যা। ইতিহাসে নাম লেখানোর সেই মাহেন্দ্রক্ষণ যেন কেউ ভুলুণ্ঠিত করতে না পারে, সেজন্য নেওয়া হয়েছে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থা। গড়ে তোলা হয়েছে ত্রিমাত্রিক নিরাপত্তা বলয়।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীগুলোর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সারাদেশে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। পুলিশ সদর দফতর থেকে প্রতিটি থানায় বিশেষ নির্দেশনা পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে অপপ্রচার রোধে সর্বোচ্চ নজরদারি করা হচ্ছে। র‌্যাব-পুলিশ মিলে সাড়ে ৫ হাজার সদস্য মাঠে মোতায়েন করা হয়েছে। এর বাইরে আকাশপথে টহল দেবে র‌্যাবের এয়ার উইং। থাকবে র‌্যাবের কমান্ডো ইউনিটও।

আগামীকাল ২৫ জুন সেতু উদ্বোধনের পর আগামী ২৬ জুন সকাল থেকে যান চলাচলের জন্য উম্মুক্ত করে দেওয়া হবে পদ্মা সেতু।

পুলিশ সদর জানিয়েছে, পদ্মা সেতুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠান ঘিরে দেশে একটি মহল নাশকতা ও ধ্বংসাত্মক কিছু ঘটানোর চেষ্টা করছে। যাতে জনগণের দৃষ্টি অন্যদিকে সরানো যায়। সার্বিক নিরাপত্তা বিবেচনায় শুধু পদ্মা সেতু নয়, বরং সারাদেশে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।

ছবি: সারাবাংলা

ছবি: সারাবাংলা

এ বিষয়ে জানতে চাইলে পুলিশ সদর দফতরের মিডিয়া শাখার সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি মিডিয়া) মো. কামরুজ্জামান শুক্রবার সকালে সারাবাংলাকে বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কেউ যাতে গুজব ছড়িয়ে পরিস্থিতি ঘোলাটে করতে না পারে, সেজন্য সার্বক্ষণিক সাইবার মনিটরিং করা হচ্ছে। উদ্বোধনের দিন পদ্মার দুইপাড়ে র‌্যাবসহ পুলিশের সাড়ে ৫ হাজারের বেশি সদস্য ইউনিফর্মে মোতায়েন থাকবে। এর বাইরে বিভিন্ন বাহিনীর গোয়েন্দা শাখার সদস্যরা সাদা পোশাকে তৎপর থাকবে।

তিনি বলেন, পদ্মা সেতু ও আশপাশের মানুষসহ সার্বিক নিরাপত্তায় দুটি থানার উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। থানা দুটি ইতোমধ্যেই কার্যক্রম শুরু করেছে। নৌপথে শৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত থাকবে নৌ-পুলিশ। মাদারীপুর, শরীয়তপুর, মুন্সীগঞ্জ জেলা পুলিশের চাহিদা মোতাবেক আরও যদি ফোর্স লাগে, তা দেওয়া হবে। একইসঙ্গে কাজ করছে হাইওয়ে পুলিশ। আমাদের র‌্যাবের সদস্যরাও নিয়োজিত থাকবেন। আকাশপথে টহল দেবে র‍্যাবের এয়ার উইং। অর্থাৎ নিরাপত্তা ব্যবস্থায় ত্রিমাত্রিক বলয় সাজানো হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, যেকোনো ধরনের নাশকতা, গুজব অপপ্রচারের চেষ্টা ঠেকাতে সাইবার পুলিশ, সিটিটিসি, অ্যান্টি টেরোরিজম ইউনিটের সদস্যরা সক্রিয় মনিটরিং কার্যক্রম পরিচালনা করছেন।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের কিছুদিন ধরে বলে আসছেন, পদ্মা সেতুর উদ্বোধনকে ঘিরে নাশকতার আশঙ্কা রয়েছে। একটি মহল সেই পাঁয়তারায় অংশ নিতে চায়। সীতাকুণ্ডে অগ্নিকাণ্ড, সিলেটে ট্রেনে আগুনসহ কয়েকটি ঘটনা পদ্মা সেতুর উদ্বোধনকে কেন্দ্র করে কোনো ষড়যন্ত্র কী না- এমন প্রশ্নের উত্তরে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছিলেন, এগুলো অন্তর্ঘাত হতে পারে। পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে। গোয়েন্দাদের কাছে কিছু খবর আছে। পদ্মা সেতুর উদ্বোধনকে কেন্দ্র করে অন্তর্ঘাতের আশঙ্কা আমাদের আগেও ছিল, এখনো আছে।

ছবি: সারাবাংলা

ছবি: সারাবাংলা

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের নিরাপত্তা ব্যবস্থা পরিদর্শন করতে গিয়ে র‌্যাব মহাপরিচালক আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, পদ্মা সেতুর উদ্বোধনকে কেন্দ্র করে এখন পর্যন্ত কোনো সুনির্দিষ্ট হুমকি কিংবা নাশকতার তথ্য নেই। গোয়েন্দা তথ্য, সাইবার মনিটরিংসহ অন্যান্য তথ্য বিশ্লেষণ করে পদ্মা সেতু উদ্বোধনকে কেন্দ্র করে কোনো ধরনের হামলা বা নাশকতার ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে আমরা আত্মতুষ্টিতে ভুগছি না। গোয়েন্দা নজরদারি ও সাইবার জগতে মনিটরিং বাড়ানোর মাধ্যমে জঙ্গিদের যেকোনো ধরনের নাশকতার পরিকল্পনা নস্যাৎ করে দিতে প্রস্তুত রয়েছে র‍্যাব।

সেতুর উদ্বোধন উপলক্ষে র‍্যাব বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে জানিয়ে তিনি বলেন, অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি মোকাবিলায় পর্যাপ্ত র‍্যাব সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। যেকোনো ধরনের নাশকতা বা হামলা মোকাবিলায় সেতুর দুই প্রান্তেই র‍্যাব স্পেশাল ফোর্সের কমান্ডো টিম সার্বক্ষণিক প্রস্তুত থাকবে।

র‍্যাবের নিরাপত্তা ব্যবস্থা সম্পর্কে তিনি বলেন, সমাবেশস্থল, টোল প্লাজা, ফলক উন্মোচন ও হেলিপ্যাড এলাকার নিরাপত্তার লক্ষ্যে র‌্যাবের প্রয়োজনীয় সংখ্যক টহল মোতায়েন থাকবে। অনুষ্ঠান চলাকালীন সার্বিক নিরাপত্তার জন্য র‌্যাবের কন্ট্রোল রুম, স্ট্রাইকিং রিজার্ভ, আউটার পেরিমিটার, পেট্রোল, মোটরসাইকেল পেট্রোল, ফুট পেট্রোল, বোট পেট্রোলিং, অবজার্ভেশন পোস্ট, চেক পোস্ট এবং প্রয়োজনীয় সংখ্যক সিসিটিভি মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা থাকবে।

সেতুর দুই প্রান্ত, সমাবেশস্থলসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে র‍্যাবের বোম্ব ডিস্পোজাল ইউনিট ও ডগ স্কোয়াড দ্বারা সুইপিং সম্পন্ন করা হবে। র‍্যাবের বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট যেকোনো উদ্ভূত পরিস্থিতির জন্য সার্বক্ষণিকভাবে প্রস্তুত থাকবে।

ছবি: সারাবাংলা

ছবি: সারাবাংলা

যেকোনো ধরনের নাশকতা বা হামলা মোকাবিলায় সেতুর দুই প্রান্তেই র‍্যাব স্পেশাল ফোর্সের কমান্ডো টিম সার্বক্ষণিক প্রস্তুত থাকবে। পাশাপাশি যেকোনো পরিস্থিতিতে র‍্যাব এয়ার উইংয়ের হেলিকপ্টার সার্বক্ষণিক প্রস্তুত রয়েছে বলে জানান র‌্যাব ডিজি।

এছাড়া প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে সেতুর দুই প্রান্তেই র‍্যাবের মেডিকেল টিম নিয়োজিত থাকবে। সেতুর দুই প্রান্তে নিরাপত্তা নিশ্চিতে দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যাটালিয়নগুলো নিজ নিজ কন্ট্রোল রুমের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি ও অন্যান্য আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে সমন্বয় করবে।

র‍্যাব সদর দফতরের কন্ট্রোল রুম (কন্ট্রোল রুমের হটলাইন নাম্বার: ০১৭৭৭৭২০০২৯) ও অনুষ্ঠান স্থলে স্থাপিত কন্ট্রোল রুমের (অনুষ্ঠান স্থালের কন্ট্রোল রুম নাম্বার: ০১৭৭৭৭২০০৪৯) মাধ্যমে নিরাপত্তা ব্যবস্থা পর্যবেক্ষণ ও সমন্বয় করা হবে।

নিরাপত্তা বিষয়ে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, পর্যাপ্ত সংখ্যক টহল মোতায়েন এবং সাদা পোশাকে গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করার মাধ্যমে নাশকতাসহ যেকোনো ধরনের অশুভ তৎপরতা কঠোরভাবে প্রতিহত করা হবে।

ছবি: সারাবাংলা

ছবি: সারাবাংলা

দুই প্রান্তে পদ্মা সেতুর প্রবেশ স্থান ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ স্থানসমূহে র‍্যাবের চেকপোস্ট স্থাপনের মাধ্যমে আগত যানবাহন ও সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের তল্লাশি করা হবে।

ভার্চুয়াল জগতে পদ্মা সেতুকে কেন্দ্র করে যেকোনো ধরনের গুজব, উসকানিমূলক তথ্য, মিথ্যা তথ্য ছড়ানো প্রতিরোধেও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণে র‍্যাব সাইবার মনিটরিং টিম অনলাইনে সার্বক্ষণিক নজরদারি অব্যাহত রাখছে। র‍্যাব সদর দফতর সার্বিক কার্যক্রম সার্বক্ষণিকভাবে মনিটর করবে।

অন্যদিকে পদ্মা সেতুর উদ্বোধন যেন নির্বিঘ্নে হয় এ লক্ষ্যে পুলিশ কাজ করছে উল্লেখ করে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) প্রধান অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার বলেন, দীর্ঘ অপেক্ষার পর আগামী ২৫ জুন পদ্মা সেতু উদ্বোধন হতে যাচ্ছে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানসহ এ উপলক্ষে সারাদেশে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। এসব অনুষ্ঠান যেন নির্বিঘ্নে হয় সেই লক্ষ্যে পুলিশ কাজ করছে।

ছবি: সারাবাংলা

ছবি: সারাবাংলা

এদিকে বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোস্ট অথোরিটি (বিআরটিএ) জানিয়েছে, পদ্মা সেতুর উদ্বোধন অনুষ্ঠান নির্বিঘ্ন করতে ২৪ জুন সকাল ৬টা থেকে ২৬ জুন সকাল পর্যন্ত যাত্রাবাড়ী থেকে মাওয়া এবং মুন্সিগঞ্জ থেকে মাওয়া পর্যন্ত কোনো প্রকার বাস, ট্রাক, লরি ও কাভার্ড ভ্যান চলবে না। এ সময় তাদের চাঁদপুর-শরীয়তপুর রুট এবং পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া রুটে চলাচল করতে বলা হয়েছে।

সারাবাংলা/ইউজে/এএম


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর