একসঙ্গে ৪ ধরনের ভয়াবহ ধাক্কা-দুর্যোগ সামলাতে সক্ষম পদ্মা সেতু
২৫ জুন ২০২২ ০৯:৪১
ঢাকা: স্বপ্নের পদ্মা সেতু। মূল সেতুর নির্মাণকাজ শেষ। এখন কেবল উদ্বোধনের অপেক্ষা। সেই প্রহরও ফুরিয়ে এসেছে। দেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জন্য আশীর্বাদ হয়ে আসা এই সেতু দেশের যোগাযোগব্যবস্থায় এক অনন্য হাতিয়ার হতে যাচ্ছে, তা নিয়ে সন্দেহ নেই। তবে প্রকৌশলগত দিক থেকেও এই সেতু অনন্য একটি স্থান করে নিয়েছে।
তথ্য বলছে, প্রকৃতিক দুর্যোগ ভূমিকম্পসহ একসঙ্গে ভয়াবহ চার ধরনের ধাক্কা-দুর্যোগ সামলে নেওয়ার সক্ষমতা নিয়ে তৈরি করা হয়েছে পদ্মা সেতু। ভূমিকম্প, পিলারের নিচ থেকে মাটি সরে যাওয়ার মতো সব দুর্যোগ এই সেতু সামলাতে সক্ষম। পদ্মা সেতু নির্মাণকারী কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশ সেতু বিভাগের সাবেক সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বর্তমানে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিবের দায়িত্বে রয়েছেন। তিনিই সারাবাংলাকে জানিয়েছিলেন এ তথ্য।
সমসমায়িক বিশ্বে কোনো নদীতে নির্মিত সবচেয়ে বড় প্রকল্প পদ্মা সেতু। বাংলাদেশের স্বপ্নের এই সেতু ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ। কংক্রিট কাঠামোর খুঁটি ও ইস্পাতের স্প্যানের এই সেতু এতই শক্তিশালী যে রিখটার স্কেলে ৮ মাত্রার ভূমিকম্পও এটি সহ্য করতে সক্ষম। অথচ এই মাত্রার ভূমিকম্প অনেক শহরকেও গুঁড়িয়ে দিতে সক্ষম।
তবে কেবল ভূমিকম্পই নয়, একইসঙ্গে একাধিক দুর্যোগও এই সেতু মোকাবিলায় সক্ষম। খন্দকার আনোয়ারুল ইসলামের দেওয়া তথ্য বলছে— ধরা যাক, কখনো রিখটার স্কেলে ৮ মাত্রার ভূমিকম্প হয়েছে। ঠিক তখনই পদ্মা সেতুর পিলারের নিচে থেকে সরে গেছে ৬৫ মিটার (প্রায় ২১৩ ফুট) মাটি। একই সময় পুরো সেতু রেল ও যানবাহনে সম্পূর্ণ লোডেড। ঠিক এমন সময়ও যদি ৫ হাজার মেট্রিক টন ওজনের একটি জাহাজ এসে পদ্মা সেতুর কোনো পিলারে ধাক্কা দেয়, তাহলেও পদ্মাসেতুর কিছুই হবে না!
২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকার গঠনের পর নানা চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে পদ্মা সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। তবে ২০১২ সালে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে ঋণচুক্তি বাতিল করে বিশ্বব্যাংক। তাদের সেই অভিযোগ পরে মিথ্যা প্রমাণিত হয়। তবে এর মধ্যেই ২০১৩ সালের ৪ মে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ২০১৫ সালের ১২ ডিসেম্বর মুন্সীগঞ্জের মাওয়া প্রান্তে পদ্মা সেতু বাস্তবায়নের মূল পাইলিং কাজের উদ্বোধন করেন তিনি। এর আগে শরীয়তপুরের জাজিরার নাওডোবায় পদ্মা সেতু প্রকল্পের কাজ উদ্বোধন করেন শেখ হাসিনা।
২০১৫ সালে ডিসেম্বরে সেতুটির নির্মাণ শুরু হওয়ার পর শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০১৮ সালে। কিন্তু সেতুর খুঁটি নিয়ে জটিলতা দেখা দিলে কাজ শেষ হতে দেরি হয়। শেষ পর্যন্ত ২০২০ সালের ডিসেম্বরে ৪১টি স্প্যানের সবগুলো বসানো শেষে ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের পদ্মা সেতুর পুরোটা দৃশ্যমান হয়।
এরপর ধীরে ধীরে বাকি সব কাজ শেষ করে পদ্মা সেতু এখন যানচলাচলের জন্য সম্পূর্ণ প্রস্তুত। আজ সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্বোধন করলে আগামীকাল রোববার (২৬ জুন) সকাল থেকেই যানচলাচল করবে এই সেতু দিয়ে। দেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল সরাসরি সড়কপথে যুক্ত হবে রাজধানীসহ বাকি অংশের সঙ্গে।
সারাবাংলা/টিআর
পদ্মা সেতু পদ্মা সেতুর উদ্বোধন পদ্মা সেতুর সক্ষমতা স্বপ্নের পদ্মা সেতু