Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

স্বপ্নের দ্বার খুলছে আজ

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
২৫ জুন ২০২২ ০০:১৯

ঢাকা: বাধা ছিল বহুমুখী। দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র। দুর্নীতির অভিযোগ। বন্ধ হয়ে গেল বিদেশি অর্থায়ন। মেগা প্রকল্প। সে হিসাবে এমন প্রকল্প বিদেশি অর্থায়ন ছাড়া নির্মাণ সম্ভব? এমন আত্মবিশ্বাস ছিল না কারওই। তবু দমে গেলেন না একজন। দুর্নীতির অভিযোগ মিথ্যা প্রমাণিত হলো। তবে বিদেশি অর্থায়নের দিকে ঝুঁকলেন না তিনি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অটল থাকলেন নিজ সিদ্ধান্তে— নিজের টাকায় হবে স্বপ্নের পদ্মা সেতু।

বিজ্ঞাপন

নিজের অর্থায়নে মেগা প্রকল্প  বাস্তবায়নের কাজ এগিয়ে চলল। এবারে প্রতিবন্ধকতা প্রকৃতি। প্রমত্তা পদ্মাকে বাগে আনা হয়ে পড়ল অসম্ভব। অ্যামাজনের পর বিশ্বের সবচেয়ে খরস্রোতা নদীর বুকে খুঁটি বসানো তো যা তা কাজ নয়! দেশি-বিদেশি বাঘা বাঘা সব প্রকৌশলীদের ঘাম ছুটে গেল। তবে শেখ হাসিনা যেমন সাহস হারাননি, তেমনি সাহস হারাননি প্রকৌশলীরাও। প্রয়াত ড. জামিলুর রেজা চৌধুরীর নেতৃত্বে দেশি-বিদেশি প্রকৌশলীরা ঠিকই একের পর এক সমাধান হাজির করেছেন। আর তাতেই স্বপ্নের পদ্মা সেতু আজ বাস্তব।

বিজ্ঞাপন

সময় লেগেছে। তবে নিজেদের অর্থায়নে নিজেদের স্বপ্নের পদ্মা সেতু ঠিকই মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে পদ্মার বুকে। দেশের দুই প্রান্তের মেলবন্ধন করে দেওয়া এই সেতুকে ঘিরে ডানামেলা স্বপ্নেরাও আরও বেশি পাখা মিলেছে। সেই পাখা মেলার দিনে কল্পনার বাস্তব রূপায়নের সূচনালগ্ন আজ শনিবার (২৫ জুন)। আর কয়েক ঘণ্টা পরই যে পদ্মা সেতু উদ্বোধন। যে ব্যক্তিটি সবাইকে মিথ্যা প্রমাণিত করে নিজ সিদ্ধান্তে অনড় থেকে বাস্তবায়ন করেছেন পদ্মা সেতু, সেই শেখ হাসিনার হাত ধরেই খুলছে স্বপ্নের দ্বার।

আজ শনিবার সকাল সাড়ে ৯টায় তেজগাঁও বিমানবন্দর থেকে হেলিকাপ্টারে করে মুন্সীগঞ্জের মাওয়া প্রান্তের উদ্দেশে রওনা হবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সকাল ১০টায় মাওয়া প্রান্তে পদ্মা সেতুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন। এরপর ১১টায় পদ্মা সেতু উদ্বোধন উপলক্ষে স্মারক ডাকটিকিট, স্যুভেনির শিট, উদ্বোধনী খাম ও সিলমোহর অবমুক্ত করবেন। ১১টা ১২ মিনিটে টোল দিয়ে মাওয়া প্রান্তে পদ্মা সেতুর উদ্বোধনী ফলক ও ম্যুরাল-১ উন্মোচন করে মোনাজাতে অংশ নেবেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী এরপর ১১টা ২৩ মিনিটে মুন্সীগঞ্জের মাওয়া প্রান্ত থেকে শরীয়তপুরের জাজিরা প্রান্তের উদ্দেশে সড়কপথে যাত্রা করবেন। ১১টা ৪৫ মিনিটে জাজিরা প্রান্তে উপস্থিত হয়ে পদ্মা সেতুর উদ্বোধন ফলক ও ম্যুরাল-২ উন্মোচন শেষে মোনাজাতে অংশ নেবেন। দুপুর ১২টায় মাদারীপুর শিবচর উপজেলার কাঠালবাড়ীতে অনুষ্ঠেয় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের জনসভায় অংশ নেবেন। জনসভা শেষে বিকেল সাড়ে ৫টায় জাজিরা প্রান্ত থেকে হেলিকাপ্টারে করে ঢাকার উদ্দেশে যাত্রা করবেন।

জাজিরা প্রান্তে

পদ্মা সেতুর জনসভাস্থলে মঞ্চ তৈরির কাজ এখন শেষ। লাখ লাখ মানুষের জনসভায় উপস্থিতিকে প্রাধান্য দিয়ে সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থাসহ পয়ঃনিষ্কাশণের জন্য নির্মাণ করা হচ্ছে ৫০০ টয়লেট, থাকছে পর্যাপ্ত পানির ব্যবস্থা। নদীপথে আসা মানুষের জন্য তৈরি করা হচ্ছে ২০টি পন্টুন। ২৫ জুনের মাহেন্দ্রক্ষণের জন্য এখন সবাই অপেক্ষায়।

পদ্মা সেতুর আগে দুইটি ম্যুরাল স্থাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সেতু বিভাগ। একটি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের, আরেকটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিকৃতিতে বানানো হবে। এর পাশেই থাকছে উদ্বোধনী ফলক।

প্রধানমন্ত্রীর আগমন ও পদ্মা সেতুর উদ্বোধন সংক্রান্ত অনুষ্ঠান ও আয়োজনের সমন্বয়ের দায়িত্বে রয়েছে ঢাকা বিভাগীয় প্রশাসন। সঙ্গে যুক্ত থাকছে ঢাকা জেলা প্রশাসন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানটি সরকারি উদ্যোগে রাজধানীর হাতিরঝিলে বড় পর্দায় দেখানো হবে। এছাড়া জেলা প্রশাসনগুলোর উদ্যোগে সারাদেশেই এই অনুষ্ঠান দেখানো হবে।

দেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার মানুষের স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে ২০০১ সালের ১২ জুলাই মুন্সীগঞ্জের লৌহজংয়ের কুমারভোগ এলাকায় পদ্মা সেতু নির্মাণকাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সরকার পরিবর্তনের পটভূমিতে পরবর্তী ৯ বছরে এই সেতুর কাজে আর তেমন কোনো অগ্রগতি হয়নি।

এরপর ২০০৯ সালে শেখ হাসিনা সরকার গঠনের পর ফের সেতুটি নির্মাণের উদ্যোগ নেন। ২০১২ সালে বিশ্বব্যাংক দুর্নীতির অভিযোগ তুলে ঋণচুক্তি বাতিল করে। বিশ্বব্যাংকের অভিযোগ মিথ্যা দাবি করে ২০১৩ সালের ৪ মে নিজ অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী। পরে সে অভিযোগ মিথ্যা প্রমাণিতও হয়। পরে ২০১৫ সালের ১২ ডিসেম্বর মুন্সীগঞ্জের মাওয়ায় পদ্মা সেতুর বাস্তবায়নের মূল পাইলিং কাজের উদ্বোধন হয়। এর আগে শরীয়তপুরের জাজিরার নাওডোবায় উদ্বোধন হয় পদ্মা সেতু প্রকল্পের মূল কাজের। এর সাত বছরের মাথায় এসে পদ্মা সেতু এখন কেবলই যানচলাচলের অপেক্ষায় শেষ প্রহর গুনছে।

নিজস্ব অর্থায়নে নির্মিত পদ্মা সেতু অর্থ ব্যয়ের দিক থেকে দেশের ইতিহাসে সর্ববৃহৎ প্রকল্প। ছয় দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ সেতুটি দেশের সবচেয়ে দীর্ঘ ও দক্ষিণ এশিয়ার দ্বিতীয় দীর্ঘতম সেতু। দ্বিতল এই সেতুর নিচতলা দিয়ে ট্রেন চলবে। সড়ক ও রেলপথে যুক্ত হবে দেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলা। দেশের জিডিপি ১ দশমিক ২৩ শতাংশ বাড়িয়ে দেবে সেতুটি। ফলে দেশের সার্বিক আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপটেও এই সেতুটি অনন্য অবদান রাখবে।

সারাবাংলা/টিআর

পদ্মা সেতু পদ্মা সেতুর উদ্বোধন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্বপ্নের পদ্মা সেতু

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর